বাসস
  ০৬ নভেম্বর ২০২৫, ১৪:০৪

মধ্য এশিয়ার নেতাদের সঙ্গে ট্রাম্পের প্রথম শীর্ষ সম্মেলন হতে যাচ্ছে

ঢাকা, ৬ নভেম্বর, ২০২৫ (বাসস): রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিনপিংয়ের সঙ্গে পৃথক শীর্ষ সম্মেলন করার কয়েক মাস পর, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বৃহস্পতিবার প্রথমবারের মতো ওয়াশিংটনে মধ্য এশিয়ার পাঁচ নেতার সঙ্গে শীর্ষ বৈঠক করবেন।

কাজাখস্থানের আলমাটি থেকে বার্তাসংস্থা এএফপি এ খবর জানিয়েছে।

পশ্চিমারা সম্পদ সমৃদ্ধ এই অঞ্চলের প্রতি তাদের আগ্রহ বাড়িয়েছে। ক্রেমলিনের ইউক্রেন হামলার পর থেকে মস্কোর ঐতিহ্যবাহী প্রভাব নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে এবং চীনও এখানে এক প্রধান শক্তি।

ইউক্রেন যুদ্ধের পর থেকে, কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান, তাজিকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান ও উজবেকিস্তানের নেতারা তথাকথিত সি৫+১ ফর্ম্যাটে অন্যান্য দেশের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়িয়েছেন।

১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে স্বাধীনতা লাভ করা স্থলবেষ্টিত দেশগুলোর সঙ্গে ওয়াশিংটন ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ২০২৩ সালে প্রথমবারের মতো মার্কিন-মধ্য এশিয়া শীর্ষ সম্মেলনের মাধ্যমে, তাদের কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করেছে।

রাশিয়া, চীন, পশ্চিমা বিশ্ব ও তুরস্ক সকলেই সম্পদ সমৃদ্ধ এই অঞ্চলে প্রভাব বিস্তারের জন্য প্রতিযোগিতা করছে।

এই বছর, ইইউ প্রধান উরসুলা ভন ডার লিয়েন, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও চীনের নেতা সি চিনপিং সকলেই পাঁচ মধ্য এশিয়ার নেতার সঙ্গে শীর্ষ সম্মেলনের জন্য অঞ্চলটি পরিদর্শন করেছেন।

একই সময়ে, বেশিরভাগ আঞ্চলিক সংঘাতের অবসান ঘটায় মধ্য এশিয়ার দেশগুলোকে কূটনীতিতে ঐক্যবদ্ধ হতে সক্ষম করেছে।

চীনের সঙ্গে কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান ও তাজিকিস্তানের সীমান্ত রয়েছে। দেশটি বিশাল অবকাঠামো প্রকল্পে বিনিয়োগ করে নিজেকে এই অঞ্চলে একটি প্রধান বাণিজ্যিক অংশীদার হিসেবে উপস্থাপন করেছে।

সাবেক সোভিয়েত প্রজাতন্ত্রগুলো এখনও মস্কোকে একটি কৌশলগত অংশীদার হিসেবে দেখে কিন্তু প্রতিবেশী ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলায় সেগুলো ভীত। 

তুরস্ক মধ্য এশিয়ার সঙ্গে তার সাংস্কৃতিক সম্পর্ক গড়ে তুলেছে এবং সামরিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক বৃদ্ধির জন্য রাশিয়া বিভ্রান্তির সুযোগ নিয়েছে।

২০০০ সালের গোড়ার দিকে পশ্চিমারা এই অঞ্চলের সঙ্গে কিছু সম্পর্ক স্থাপন করে। পশ্চিমা সৈন্যরা আফগানিস্তান অভিযানের সময় মধ্য এশিয়ায় ঘাঁটি ব্যবহার করে।

এই অঞ্চলের বিশাল প্রাকৃতিক সম্পদ রয়েছে। কিন্তু এখনো বেশিরভাগই অব্যবহৃত। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন এই বিশাল অব্যবহৃত প্রাকৃতিক সম্পদের প্রতি আকৃষ্ট। 

তারা তাদের বিরল মৃত্তিকা সরবরাহকে বৈচিত্র্যময় করতে ও বেইজিংয়ের ওপর নির্ভরতা কমানোর চেষ্টা করছে।

বিরল মৃত্তিকা ছাড়াও, কাজাখস্তান বিশ্বের বৃহত্তম ইউরেনিয়াম উৎপাদনকারী, উজবেকিস্তানে বিশাল সোনার মজুত রয়েছে ও তুর্কমেনিস্তান গ্যাসে সমৃদ্ধ। 

পাহাড়ি কিরগিজস্তান ও তাজিকিস্তানও নতুন খনিজ সম্পদ উন্মোচন করছে।

রাশিয়া সোভিয়েত যুগের অবকাঠামোর মাধ্যমে হাইড্রোকার্বন সরবরাহ করে এবং পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করে এই অঞ্চলের জ্বালানি খাতে দৃঢ়ভাবে প্রভাবিত করেছে।

মধ্য এশিয়া বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত অঞ্চলগুলোর মধ্যে একটি এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। 

পাঁচটি দেশই পানির ঘাটতির সঙ্গে লড়াই করছে।

কিন্তু কঠোর ও দুর্গম ভূখণ্ডসহ দরিদ্র দেশগুলোর এই বিশাল মজুদ কাজে লাগানো জটিল হয়ে পড়েছে।

প্রায় ইইউ’র সমান বিশাল, কিন্তু মাত্র ৭ কোটি ৫০ লাখ জনসংখ্যার মধ্য এশিয়া স্থলবেষ্টিত এবং মরুভূমি ও পাহাড় দ্বারা আচ্ছাদিত অঞ্চলটি পশ্চিমের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে উত্তরে রাশিয়া, পূর্বে চীন এবং দক্ষিণে ইরান ও আফগানিস্তান।

কিন্তু, শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে সিল্ক রোডে (ভূমধ্যসাগর, ইউরোপ ও উত্তর আফ্রিকার সাথে সংযুক্তকারী প্রাচীন বাণিজ্য পথের একটি বিশাল নেটওয়ার্ক) এটি একটি বাণিজ্য কেন্দ্র হিসেবে তার ঐতিহাসিক ভূমিকা পুনরুজ্জীবিত করার চেষ্টা করছে।

মস্কোর ওপর নির্ভরতা থেকে মুক্তি পেতে বেশ কয়েকটি অংশীদারিত্ব তৈরি করেছে পাঁচটি মধ্য এশিয়ার রাষ্ট্র।

বেইজিং ও ব্রাসেলস উভয়ই ক্যাস্পিয়ান সাগর জুড়ে একটি পরিবহন রুট তৈরির সমর্থন করে, যা রাশিয়াকে এড়িয়ে ইউরোপ থেকে ককেশাসের মধ্য দিয়ে মধ্য এশিয়ায় পৌঁছানোর অনুমতি দেয়।

সরকারি পরিসংখ্যানে দেখা যায়, রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণের কিছু সময় আগে ২০২১ সাল ও ২০২৪ সালের মধ্যে, এই রাস্তা দিয়ে পণ্য পরিবহন ৬৬০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছিল।