শিরোনাম
ঢাকা, ২৩ অক্টোবর, ২০২৫ (বাসস): জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে) বুধবার এক গুরুত্বপূর্ণ রায়ে জানিয়েছে, গাজায় ত্রাণ প্রবেশে ইসরাইল বাধা দিতে পারবে না এবং ফিলিস্তিনিদের বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় মৌলিক চাহিদা নিশ্চিত করতে হবে।
হেগ থেকে এএফপি এ খবর জানায়।
মানবিক সংস্থাগুলো জানায়, চলতি মাসের শুরুতে হওয়া অস্থায়ী যুদ্ধবিরতির সুযোগে তারা গাজায় সহায়তা কার্যক্রম জোরদার করার চেষ্টা করছে।
আইসিজে জানায়, আদালতের এই অ্যাডভাইজরি ওপিনিয়ন বা পরামর্শমূলক রায় আইনগতভাবে বাধ্যতামূলক না হলেও এর রয়েছে ‘বড় ধরনের আইনি ও নৈতিক গুরুত্ব।’ তবে ইসরায়েল রায়টি সঙ্গে সঙ্গে প্রত্যাখ্যান করেছে।
জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত। আমি আশা করি, ইসরাইল রায়টি মেনে চলবে।’
আইসিজের সভাপতি ইউজি ইওয়াসাওয়া বলেন, জাতিসংঘ ও এর বিভিন্ন সংস্থার ত্রাণ কার্যক্রমে সহযোগিতা ও তা সহজ করতে ইসরাইল বাধ্য।
এর মধ্যে রয়েছে জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ, যাকে ইসরাইল নিষিদ্ধ করেছে। ইসরাইলের অভিযোগ, সংস্থাটির কিছু কর্মী ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলায় অংশ নিয়েছিল।
তবে আদালত রায়ে বলেছে, ইসরাইল এসব অভিযোগ প্রমাণ করতে পারেনি। এছাড়া ইসরাইল শুনানিতেও অংশ নেয়নি এবং রায় প্রকাশের পরপরই তা প্রত্যাখ্যান করেছে।
ইসরাইলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ওরেন মারমোরস্টেইন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে লিখেছেন, ‘ইসরাইল আইসিজের পরামর্শমূলক রায় সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাখ্যান করছে। এটি শুরু থেকেই অনুমেয় ছিল। এটি আন্তর্জাতিক আইনের আড়ালে রাজনৈতিক চাপ প্রয়োগের আরেকটি প্রচেষ্টা।’
এদিকে আইসিজে জানায়, আদালতের কার্যক্রমকে ‘অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে’ ইসরাইলের এই অভিযোগও আদালত প্রত্যাখ্যান করেছে।
আরেকজন ইসরাইলি কর্মকর্তা বলেন, ‘ইসরাইল গাজা নিয়ে জাতিসংঘের অন্যান্য সংস্থার সঙ্গে সহযোগিতা করছে, তবে ইউএনআরডব্লিউএর সঙ্গে করবে না।’
এদিকে রায় ঘোষণার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই নরওয়ে ঘোষণা দেয়, ইসরাইল যেন গাজায় ত্রাণ প্রবেশে আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয় এমন একটি প্রস্তাব তারা জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে উপস্থাপন করবে।
গাজায় সহায়তা প্রবেশ নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে ইসরাইলের ওপর চাপ প্রয়োগের আহ্বান জানান আইসিজেতে ফিলিস্তিনের প্রতিনিধি আম্মার হিজাজি।
তিনি বলেন, ‘এখন এই রায় বাস্তবায়নে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে ইসরাইলের ওপর চাপ দিতে হবে।’
রায় ঘোষণার আগেই জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি)-এর মধ্যপ্রাচ্য মুখপাত্র আবির এতেফা জানান, যুদ্ধবিরতি শুরু হওয়ার পর ১০ অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত ৫৩০টি ট্রাক গাজায় প্রবেশ করেছে।
তিনি বলেন, এই ট্রাকগুলোতে ৬ হাজার ৭০০ টনের বেশি খাদ্যসামগ্রী ছিল, যা প্রায় ৫ লাখ মানুষের জন্য দুই সপ্তাহের খাবার।
এতেফা জানান, প্রতিদিন এখন গড়ে ৭৫০ টন খাদ্য প্রবেশ করছে, যা ডব্লিউএফপির দৈনিক লক্ষ্য ২ হাজার টনের তুলনায় অনেক কম।
আইসিজে আরও বলেছে, ‘ইসরায়েল একটি দখলদার শক্তি হিসেবে স্থানীয় জনগণের মৌলিক চাহিদা পূরণে বাধ্য। একইসঙ্গে, সে এসব সরবরাহে বাধা দিতে পারবে না।’
আদালত স্মরণ করিয়ে দিয়েছে, আন্তর্জাতিক আইনে ক্ষুধাকে যুদ্ধের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা নিষিদ্ধ।
জাতিসংঘ আদালতকে অনুরোধ করেছিল, দখলদার শক্তি হিসেবে ইসরাইলের দায়িত্ব স্পষ্ট করতে, বিশেষ করে জাতিসংঘ ও অন্যান্য সংস্থার ত্রাণ কার্যক্রমে বাধা না দেওয়ার বিষয়ে।
এপ্রিলে অনুষ্ঠিত শুনানিতে বহু দেশ ও সংস্থা সাক্ষ্য দেয়। আলোচনার বড় অংশজুড়ে ছিল ইউএনআরডব্লিউএ নিয়ে বিতর্ক।
শুনানিতে যুক্তরাষ্ট্র ইউএনআরডব্লিউএ-এর নিরপেক্ষতা নিয়ে ‘গুরুতর উদ্বেগ’ জানায় এবং অভিযোগ তোলে যে, হামাস সংস্থাটির কিছু সুবিধা ব্যবহার করেছে।
মার্কিন প্রতিনিধি জশ সিমন্স বলেন, ‘ইসরাইলের ইউএনআরডব্লিউএ-কে গাজায় সহায়তা দিতে অনুমতি দেওয়ার বাধ্যবাধকতা নেই।’
তিনি আরও বলেন, ‘গাজায় সহায়তা দেওয়ার জন্য ইউএনআরডব্লিউএ-ই একমাত্র সংস্থা নয়।’
তবে আইসিজে বলেছে, ‘সঠিক পরিকল্পনা ছাড়া ইউএনআরডব্লিউএ-কে হঠাৎ করে বদলানো সম্ভব নয়।’
হিজাজি এপ্রিলে অনুষ্ঠিত শুনানিতে বলেন, ইসরাইল মানবিক সহায়তাকে যুদ্ধের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে এবং গাজায় অনাহার সৃষ্টি করছে।
এই মামলাটি গাজা যুদ্ধ নিয়ে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আইনে চলমান অন্যান্য মামলার বাইরে।
এর আগে, ২০২৪ সালের জুলাইয়ে আইসিজে এক পরামর্শমূলক রায়ে বলেছিল, ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইসরাইলের দখল ‘অবৈধ’ এবং তা যত দ্রুত সম্ভব শেষ করতে হবে।
আইসিজের বিচারকরা বর্তমানে দক্ষিণ আফ্রিকার দায়ের করা মামলাটিও বিবেচনা করছেন, যেখানে অভিযোগ করা হয়েছে যে গাজায় ইসরাইলের কর্মকাণ্ড ১৯৪৮ সালের জাতিসংঘের গণহত্যা কনভেনশন লঙ্ঘন করেছে।
অন্যদিকে, হেগের আরেক আদালত, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে।
একই অভিযোগে পরোয়ানা জারি করা হয়েছে হামাস নেতা মোহাম্মদ দেইফের বিরুদ্ধেও, যাকে সাম্প্রতিক এক বিমান হামলায় হত্যা করা হয়েছে বলে ইসরাইল দাবি করেছে।