বাসস
  ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৯:০৯
আপডেট : ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৯:২৩

সোশ্যাল মিডিয়া ও এআই ব্যবহারে নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গের সুযোগ নেই

ঢাকা, ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ (বাসস): আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) ১৯৭২ সংশোধনী চূড়ান্ত করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি) এবং তা আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। 

সংশোধনীতে এ বছর অন্যতম আলোচিত বিষয় হিসেবে এসেছে সোশ্যাল মিডিয়া এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহার। ইসি জানিয়েছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বা এআই ব্যবহার করে কোনোভাবেই আচরণবিধি লঙ্ঘন করা যাবে না।

বুধবার রাজধানীর আগারগাঁও নির্বাচন ভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ এসব তথ্য জানান। 

তিনি বলেন, সোশ্যাল মিডিয়া এবং এআই ব্যবহারকে প্রথমত নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। তবে প্রযুক্তির এই যুগে অনেক ক্ষেত্রেই এআই ইতিবাচক কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। মোবাইল ফোন থেকে শুরু করে নানা অ্যাপ্লিকেশনে এআই’র ব্যবহার এত বেশি যে কোনটা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রয়োগ আর কোনটা নয় তা আলাদা করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। তাই কমিশন স্পষ্ট করেছে যে সব ক্ষেত্রে সোশ্যাল মিডিয়া বা এআই ব্যবহার করে আচরণবিধি লঙ্ঘনের সম্ভাবনা তৈরি হয়, সেইসব কার্যক্রম একেবারেই নিষিদ্ধ থাকবে।

তিনি আরও জানান, রাজনৈতিক দলগুলো যে প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করবে তা অবশ্যই আগেভাগেই নির্বাচন কমিশনকে জানাতে হবে। প্রতিটি দলের অফিসিয়াল প্ল্যাটফর্ম ও লিংক রিটার্নিং অফিসারের মাধ্যমে জমা দিতে হবে। এর ফলে ভুয়া প্রচারণা, বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার বা অপব্যবহার রোধ করা সম্ভব হবে এবং জনগণ জানতে পারবে কোনটা অফিসিয়াল তথ্য আর কোনটা ভুয়া প্রচারণা।

নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন প্রক্রিয়া নিয়েও সংশোধনীতে পরিবর্তন আনা হয়েছে। এতদিন বিভিন্ন দল নিবন্ধনের সময় ভিন্ন-ভিন্ন ফর্ম ব্যবহার করতো। যদিও একটি প্রেসক্রাইব ফর্ম দেওয়া ছিল, কিন্তু সেটি বাধ্যতামূলক ছিল না। ফলে কেউ সেটি অনুসরণ করতো, কেউ আবার করতো না। এবার আইন সংশোধনের মাধ্যমে নির্ধারিত ফর্ম ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ফলে ভবিষ্যতে আর ভিন্ন-ভিন্ন ফরম্যাটে আবেদন করার সুযোগ থাকবে না।

কমিশনার সানাউল্লাহ জানান, আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে স্বচ্ছ, গ্রহণযোগ্য এবং প্রযুক্তির অপব্যবহারমুক্ত করতে এসব পরিবর্তন আনা হয়েছে। বিশেষ করে সোশ্যাল মিডিয়া ও এআই নিয়ন্ত্রণের বিধান ভুয়া তথ্য, বিভ্রান্তি, মিথ্যা প্রচার এবং আচরণবিধি ভঙ্গ প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। একই সঙ্গে নতুন রাজনৈতিক দল নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় যে বাধ্যতামূলক ফর্মের বিধান আনা হয়েছে তা ভবিষ্যতে নির্বাচনী ব্যবস্থাকে আরও সুশৃঙ্খল করবে। আর রিটার্নিং অফিসারদের ক্ষমতা পুনঃস্থাপন তাদের কার্যক্রমকে আরও কার্যকর করবে।

তিনি জানান, আগে আইন পরিবর্তন করে নির্বাচন কমিশন এবং রিটার্নিং অফিসারের ক্ষমতা খর্ব করা হয়েছিল। আগে যেমন পুরো নির্বাচনী এলাকায় ভোটগ্রহণ স্থগিত করার ক্ষমতা ছিল, সংশোধনের পর সেই ক্ষমতা সীমিত হয়ে গিয়েছিল। এবার আবার আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা হয়েছে। এখন থেকে রিটার্নিং অফিসার চাইলে শুধু একটি কেন্দ্র নয়, একাধিক কেন্দ্র এমনকি পুরো আসনের ভোটগ্রহণও স্থগিত করতে পারবেন। প্রয়োজনে পুরো আসনের ফলাফলও তিনি স্থগিত রাখতে পারবেন।

তিনি আশা প্রকাশ করেন, আইন মন্ত্রণালয় দ্রুত এই সংশোধনী অনুমোদন দেবে এবং তা কার্যকর হলে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন নতুন মাত্রা পাবে।