শিরোনাম
ঢাকা, ২৪ মে, ২০২৫ (বাসস) : যুক্তরাজ্যের ‘ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সি’ (এনসিএ) লন্ডনে বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত সরকারের ঘনিষ্ঠ দুই ব্যক্তির মালিকানাধীন প্রায় ৯০ মিলিয়ন পাউন্ড মূল্যের বিলাসবহুল সম্পত্তি জব্দ করেছে।
‘দ্য গার্ডিয়ান’ পত্রিকায় ২৩ মে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের সাবেক শাসকগোষ্ঠীর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সম্পদ শনাক্তকরণে যুক্তরাজ্যের ওপর ক্রমবর্ধমান চাপের মুখে এনসিএ লন্ডনের নয়টি সম্পত্তির বিরুদ্ধে ‘ফ্রিজিং অর্ডার’ (জব্দাদেশ) পেয়েছে। সরকারি নথি বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
এই আদেশের ফলে আহমেদ সায়ান রহমান ও তার চাচাতো ভাই আহমেদ শাহরিয়ার রহমানের মালিকানাধীন সম্পত্তি, যার মধ্যে লন্ডনের গ্রোসভেনর স্কয়ারের অ্যাপার্টমেন্টও রয়েছে, বিক্রি বা হস্তান্তর করা যাবে না।
দ্য গার্ডিয়ানের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, এই দুই ব্যক্তি বাংলাদেশের সাবেক স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ ছিলেন এবং যুক্তরাজ্যে বিপুল পরিমাণ সম্পদের মালিক।
এই সব সম্পত্তি মূলত ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডস, আইল অব ম্যান বা জার্সির মতো অফশোর কোম্পানির মাধ্যমে মালিকানাধীন বলে ‘কোম্পানিজ হাউজ’-এর রেকর্ডে দেখা গেছে। সম্পত্তিগুলোর মূল্য ১.২ মিলিয়ন পাউন্ড থেকে শুরু করে ৩৫.৫ মিলিয়ন পাউন্ড পর্যন্ত।
এই দুই রহমান হলেন সালমান এফ রহমানের ছেলে ও ভাতিজা। সালমান এফ রহমান ছিলেন শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা এবং তাকে ওই সরকারের অন্যতম প্রভাবশালী ব্যক্তি হিসেবে বিবেচনা করা হতো। তিনি গত বছর ছাত্র-নেতৃত্বাধীন আন্দোলনে শেখ হাসিনার পতনে পর দেশ ছাড়ার চেষ্টাকালে গ্রেপ্তার হন এবং বর্তমানে বাংলাদেশে দুর্নীতির মামলায় অভিযুক্ত।
দ্য গার্ডিয়ান ও আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী সংগঠন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের যৌথ অনুসন্ধানে ২০২৪ সালে প্রকাশ পায়, শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠদের মালিকানাধীন প্রায় ৪০০ মিলিয়ন পাউন্ড মূল্যের সম্পত্তি যুক্তরাজ্যে রয়েছে।
এনসিএ যেসব সম্পত্তি জব্দ করেছে, তার মধ্যে লন্ডনের উত্তরের গ্রেশাম গার্ডেনসে একটি সম্পত্তিও রয়েছে।
ফিনান্সিয়াল টাইমস জানিয়েছে, এই সম্পত্তিতে এক সময় শেখ হাসিনার বোন ও সাবেক ব্রিটিশ মন্ত্রী ্িটউলিপ সিদ্দিকের মা শেখ রেহানা বসবাস করতেন। জব্দকৃত দুই সম্পত্তির মধ্যে একটির দাম ছিল ৭.৭ মিলিয়ন পাউন্ড।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল ইউকের পলিসি পরিচালক ডানকান হেমস বলেন, ‘আমরা যুক্তরাজ্যের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাকে আহ্বান জানাই, তারা যেন তদন্ত অব্যাহত রাখে এবং সন্দেহভাজন সব সম্পত্তি দ্রুত জব্দ করে।’
এনসিএর এক মুখপাত্র বলেন, ‘আমরা নিশ্চিত করছি, চলমান একটি দেওয়ানি তদন্তের অংশ হিসেবে আমরা একাধিক সম্পত্তির বিরুদ্ধে ফ্রিজিং অর্ডার পেয়েছি।’
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার সাবেক সরকারের বিরুদ্ধে যেসব তদন্ত চালাচ্ছে, তার অংশ হিসেবে যুক্তরাজ্যে থাকা সাবেক ‘সিটি মিনিস্টার’ টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধেও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। টিউলিপ এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এবং এর জেরে মন্ত্রিত্ব থেকেও সরে দাঁড়িয়েছেন।
দ্য গার্ডিয়ান এ বিষয়ে রহমান পরিবার এবং সালমান রহমানের প্রতিষ্ঠিত কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান বেক্সিমকোর আইনজীবীদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে।
আহমেদ সায়ান রহমানের এক মুখপাত্র এর আগে ফিনান্সিয়াল টাইমসকে জানান, ‘আমাদের মক্কেল দৃঢ়ভাবে কোনো অনিয়মের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করছেন। যুক্তরাজ্যে যেকোনো তদন্তে তিনি অবশ্যই সহযোগিতা করবেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশে বর্তমানে রাজনৈতিক অস্থিরতা চলছে, যেখানে শত শত ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হচ্ছে। আমরা আশা করি যুক্তরাজ্যের কর্তৃপক্ষ এসব বিষয় বিবেচনায় নেবে।’