বাসস
  ২১ এপ্রিল ২০২৪, ২২:০২
আপডেট  : ২১ এপ্রিল ২০২৪, ২২:৫৭

কাতারের আমিরের সফরে ৬টি চুক্তি ৫টি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের সম্ভাবনা : পররাষ্ট্রমন্ত্রী

ঢাক, ২১ এপ্রিল, ২০২৪ (বাসস) : পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, কাতারের আমিরের সফরকালে ৬টি চুক্তি ও ৫টি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের সম্ভাবনা রয়েছে। 
কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির নেতৃত্বে একটি উচ্চ পর্যায়ের  প্রতিনিধি  দল ২২-২৩ এপ্রিল দু'দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে ঢাকা আসছেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী আজ রোববার দুপুরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এ সফরের বিষয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান  ।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, কাতারের আমিরের এ সফরে ১১টি দ্বিপক্ষীয় দলিল স্বাক্ষরের কথা রয়েছে। এর মধ্যে ৬টি চুক্তি এবং ৫টি সমঝোতা স্মারক। দ্বৈতকর পরিহার ও কর ফাঁকি সংক্রান্ত চুক্তি, আইনগত বিষয়ে সহযোগিতা সংক্রান্ত চুক্তি, সাগরপথে পরিবহন সংক্রান্ত  চুক্তি, উভয় দেশের পারস্পরিক বিনিয়োগ উন্নয়ন ও সুরক্ষা সংক্রান্ত চুক্তি, দু'দেশের মধ্যকার দন্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের বদলি সংক্রান্ত চুক্তি এবং যৌথ ব্যবসা পরিষদ গঠন সংক্রান্ত চুক্তির পাশাপাশি শ্রমশক্তি, বন্দর পরিচালনা, উচ্চ শিক্ষা ও বৈজ্ঞানিক গবেষণা, যুব ও ক্রীড়া ক্ষেত্র এবং কূটনৈতিক প্রশিক্ষণে সহযোগিতা সংক্রান্ত ৫টি সমঝোতা স্মারক সাক্ষরের কথা রয়েছে।
গত জানুয়ারি মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে পুনরায় সরকার গঠনের পর মধ্যপ্রাচ্য হতে এটিই প্রথম কোনো রাষ্ট্রপ্রধানের সফর। রাষ্ট্রপতি এবং  প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণে তাঁরা এ সফরে আসছেন।  
বাংলাদেশ ও কাতারের মধ্যে বিদ্যমান দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর, বন্ধুত্বপূর্ণ ও বহুমুখী উল্লেখ করে হাছান মাহমুদ বলেন, কাতার বঙ্গবন্ধুর সরকারের সময়ে ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশকে স্বীকৃতিদানকারী অন্যতম মুসলিম রাষ্ট্র। বিগত ২০২৩ সালের মার্চ ও মে মাসে দুইবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাতার সফরের মাধ্যমে উভয় দেশের মধ্যকার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক সুদৃঢ় অবস্থানে উপনীত হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় কাতারের আমির বাংলাদেশে সফর করবেন।
সফরের আলোচ্য বিষয় সর্ম্পকে মন্ত্রী বলেন, সাম্প্রতিককালে কাতারের সাথে বিভিন্ন পর্যায়ে কূটনৈতিক যোগাযোগ ও আলোচনার মাধ্যমে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার পরিধি সম্প্রসারণের লক্ষ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি, জ্বালানি, বিমান চলাচল, কৃষি, খাদ্য নিরাপত্তা, জলবায়ু পরিবর্তন ইত্যাদি ক্ষেত্রসমূহ চিহ্নিত করা হয়েছে।
সফরসূচি নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, ২২ এপ্রিল বিকালে বা সন্ধ্যায় বিশেষ বিমানযোগে কাতারের আমির ঢাকা পৌঁছবেন। রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন বিমানবন্দরে কাতারের আমিরকে রাষ্ট্রীয় অতিথি হিসেবে স্বাগত জানাবেন। আমিরকে গার্ড অফ অনার প্রদান করা হবে। কাতারের আমির পরদিন ২৩ এপ্রিল সকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং পরে প্রধানমন্ত্রীর সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। 
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি আরো বলেন, এরপর গণভবনে চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর অনুষ্ঠান হবে। দুপুরে রাষ্ট্রপতির সাথে বঙ্গভবনে সৌজন্য সাক্ষাৎ ও রাষ্ট্রীয় মধ্যাহ্নভোজনে অংশ নেবেন আমির। সন্ধ্যায় তিনি বিশেষ বিমানযোগে ঢাকা ত্যাগ করবেন।
সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী আরো জানান, বাংলাদেশ ও কাতারের বন্ধুত্বের নিদর্শন স্বরূপ ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের আওতাধীন মিরপুরের কালশী এলাকায় বালুর মাঠে নির্মিতব্য পার্ক ও মিরপুর ইসিবি চত্বর থেকে কালসী উড়াল সেতু পর্যন্ত সড়কটি কাতারের আমিরের নামে নামকরণ করার কার্যক্রম চলছে।
আগামী ২৩ এপ্রিল মঙ্গলবার বিকাল ৩টায় কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির এই দুটি স্থাপনা উদ্বোধনের কথা রয়েছে।
কাতারের আমির তামিম বিন হামাদ আল থানির এই সফরের তাৎপর্য সর্ম্পকে মন্ত্রী বলেন, পেট্রোলিয়াম ও প্রাকৃতিক গ্যাসসমৃদ্ধ সর্বোচ্চ গড় মাথাপিছু আয়ের দেশ কাতার শক্তিশালী অর্থনীতি, ভূ-রাজনৈতিক অবস্থান ও কূটনৈতিক তৎপরতা ও মধ্যস্থতার কারণে মধ্যপ্রাচ্যে একটি প্রভাবশালী দেশ হিসেবে বিবেচিত। কাতার মধ্যপ্রাচ্যে বাংলাদেশের অন্যতম শ্রমবাজার যেখানে প্রায় চার লাখ বাংলাদেশী কর্মরত। পাশাপাশি বিপুল পরিমাণ সার্বভৌম তহবিলের অধিকারী কাতার বাংলাদেশের জন্য একটি সম্ভাবনাময় বিনিয়োগ উৎস হিসেবে বিবেচিত। তদুপরি কাতার বাংলাদেশের জন্য জ্বালানি আমদানির ক্ষেত্রে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উৎস। 
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, কাতারের আমিরের এই সফর বাংলাদেশ এবং কাতারের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি মাইলফলক হিসেবে পরিগণিত হবে। প্রধানমন্ত্রীর সুযোগ্য নেতৃত্বে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির সফল
বাস্তবায়নের মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কাতারের সাথে বাংলাদেশের সহযোগিতার সম্পর্ক আরো সুদৃঢ় হবে।
কাতারের সাথে বাকিতে তেল কেনার বিষয়ে কোনও আলোচনা হবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, যেহেতু সৌদি আরবের সাথে আমাদের রেফার্ড পেমেন্টে (এক বছরের বাকিতে) তেল কেনার চুক্তি রয়েছে, কাতারের আমিরের সফরে এ বিষয়ে আলোচনা হতে পারে।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, কাতার চাইলে দেশের কোনো একটি অর্থনৈতিক অঞ্চলে তাদের বরাদ্দ দেয়ার বিষয়ে আলোচনা হতে পারে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়