বাসস
  ০৮ মে ২০২৫, ২২:০৩

দেশকে গ্লোবাল কারখানা ও উৎপাদন কেন্দ্রে পরিণত করা হবে : বিডা চেয়ারম্যান

ছবি : বাসস

চট্টগ্রাম, ৮ মে, ২০২৫ (বাসস) : বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন বলেছেন,  দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য অন্তর্বর্তী সরকার চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধি করে বাংলাদেশকে গ্লোবাল কারখানা ও উৎপাদন কেন্দ্রে পরিণত করার জন্য সক্রিয়ভাবে কাজ করছে।

তিনি বলেন, ‘আমাদের জনসংখ্যার অধিকাংশ তরুণ। তাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা এবং ব্যবসা ও বিনিয়োগ ব্যবস্থা উন্নত করার দিকে মনোযোগ দিতে হবে। এটি অর্জনের জন্য বন্দর নগরী চট্টগ্রামের উন্নয়নের পাশাপাশি ব্যবসা ও বিনিয়োগকেও অগ্রাধিকার দিতে হবে।’

আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে চট্টগ্রাম বন্দরের বিভিন্ন কনটেইনার টার্মিনাল পরিদর্শন শেষে সার্কিট হাউসে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বিডা নির্বাহী চেয়ারম্যান এসব কথা বলেন। এর আগে তিনি হোটেল রেডিসন ব্লু’তে চট্টগ্রাম বন্দরের বিভিন্ন অংশীদারদের সাথে মতবিনিময় করেন।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বিডা চেয়ারম্যান বলেন, যদিও ঢাকা বাংলাদেশের রাজধানী, তবুও বৈশ্বিক পরিস্থিতি ও চট্টগ্রামের ভূমিকা পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে যে, ঢাকার চেয়ে চট্টগ্রাম অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। ইতিহাসের কথা বিবেচনা করলে দেখা যাবে, চট্টগ্রামের একটি গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান ছিল এবং পর্তুগিজ, ব্রিটিশদের আকর্ষণ করত এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এটি একটি কৌশলগত পয়েন্ট ছিল। বাংলাদেশকে সফল হতে হলে চট্টগ্রামকে সমৃদ্ধ করতে হবে।

চট্টগ্রাম শহরের গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি বলেন, চট্টগ্রামে এই বিনিয়োগের মূল কারণ হলো চট্টগ্রাম চীনা বিনিয়োগ অঞ্চলের মতো, জাতীয় বিনিয়োগ অঞ্চল মিরসরাইতে এবং চট্টগ্রামে একটি মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চলও রয়েছে। এই সবকিছুর মূল কারণ হলো চট্টগ্রাম বন্দর। যদি আমরা এই বন্দরগুলো উন্নয়ন করতে না পারি, তাহলে দেশের অগ্রগতি ব্যাহত হবে।

চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন বলেন, যদি আমরা আমাদের দেশে বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধি না করি, তাহলে আমাদের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হবে। চট্টগ্রাম বন্দরের দক্ষতা এবং মান উন্নত করা বিদেশি প্রত্যক্ষ বিনিয়োগের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। লক্ষ্য অর্জনের জন্য আমাদের অবশ্যই চট্টগ্রাম বন্দরের প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বৃদ্ধির বিষয়ে মনোযোগ দিতে হবে।

তিনি বলেন, ‘বর্তমানে ভিয়েতনামে ৪৪টি বন্দর রয়েছে। তাদের হ্যান্ডলিং ক্ষমতা প্রতি বছর ৪৭ মিলিয়ন টিইইউএস, যেখানে আমাদের সক্ষমতা মাত্র ৩.২৯ টিইইউএস। আমাদের সমস্ত বন্দর সক্রিয় করার পরেও আমাদের সক্ষমতা হবে ৭.৮ মিলিয়ন টিইইউএস। কোন বন্দর সক্রিয় করার সময় সেই বন্দরটি জাতীয় স্তরে কী প্রভাব ফেলবে তা নিয়ে আমাদের ভাবতে হবে। সেই জাতীয় স্তরের কথা চিন্তা করে আমাদের সমস্ত পরিকল্পনা করতে হবে।’

তিনি বলেন, যদি বন্দরের এনসিটিগুলি বিদেশি কোম্পানি দ্বারা পরিচালিত হয়, তাহলে তারা আমাদের শ্রমশক্তি বিদেশেও পাঠাতে পারবে। আমাদের শ্রমিকদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে এবং তাদের বিশ্বব্যাপী বন্দর পরিচালনার শিল্পে একীভূত করতে হবে এবং তাদের দক্ষতা বৃদ্ধি করতে হবে।

এসময় প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, ২০৩০ সালের মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দরের বিদ্যমান কনটেইনার হ্যান্ডেলিং ক্ষমতা ছয় গুণ বৃদ্ধির পরিকল্পনা চলছে এবং তা না হলে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে পারব না।

সংবাদ সম্মেলনে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এস এম মনিরুজ্জামান, জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম, প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে নগরীর হোটেল রেডিসন ব্লু’র বে ভিউতে ব্যবসায়ী, শিল্পপতি ও সুশীল সমাজের সঙ্গে মতবিনিময় অনুষ্ঠানে বিডা চেয়ারম্যান বলেন, ‘বাংলাদেশে যারা ব্যবসা করেন, তারা অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে ব্যবসা করেন। আমরা প্রবলেমগুলো সলভ করার চেষ্টা করছি। আনফরচুনেটলি গ্যাস একটা বড় সমস্যা। সাপ্লাইয়ে হিউজ প্রবলেম। এই গ্যাস সাপ্লাই নিয়ে অনেক কথাবার্তা চলছে। গতকাল এনার্জি অ্যাডভাইজার বলেছেন, পাওয়ার জেনারেশনে গ্যাস সাপ্লাই কমিয়ে ইন্ডাস্ট্রিতে বাড়াবেন।’

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এস এম মনিরুজ্জামানের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার, বিভাগীয় কমিশনার ড. মো. জিয়াউদ্দীন, চিটাগাং চেম্বারের সাবেক সভাপতি ও বিএনপি নগর শাখার সভাপতি আলহাজ এরশাদ উল্লাহ,চট্টগ্রাম নগর জামায়াত ইসলামীর আমির ও সাবেক সংসদ সদস্য আলহাজ শাহজাহান চৌধুরী, সিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি আমীর হুমায়ুন মাহমুদ চৌধুরী, চুয়েটের উপাচার্য অধ্যাপক এম এ মতিন, শিল্পপতি আলহাজ খলিলুর রহমান, আলহাজ সুফি মিজানুর রহমান, মাহবুব আলী, হাবিবুর রহমান ও এনসিপি কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহ্বায়ক শাগুফতা বুশরা মিশমা, সরকারি কর্মকর্তা এবং উদ্যোক্তা, ব্যবসায়ী ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধি এবং সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। 

অনুষ্ঠানে ব্যবসায়ী-শিল্পপতিরা বিদ্যমান বিভিন্ন সমস্যার কথা বিডা চেয়ারম্যানের কাছে তুলে ধরেন।