শিরোনাম
ঢাকা, ৮ মে ২০২৫ ( বাসস) : বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের ( বিএনপি) মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ' বারবার বলছি আমরা অন্তর্বর্তী সরকারের সাফল্য চাই। তাই সরকারের কাছে অনুরোধ করবো এমন কিছু করবেন না যেটা বাংলাদেশের মানুষের জন্যে উপযোগী হবে না।'
আজ বৃহস্পতিবার বিকালে প্রয়াত অ্যাডভোকেট এজে মোহাম্মদ আলীর স্মরণ সভায় করিডরের প্রসঙ্গ টেনে বিএনপি মহাসচিব এসব কথা বলেন।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের উদ্যোগে এই স্মরণ সভা হয়।
গত বছরের ২ মে এজে মোহাম্মদ আলী মারা যান। তিনি ২০০৫ সাল থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের দ্বাদশ অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বিএনপিও সংস্কার চায়। তা সত্ত্বেও বিএনপিকে সংস্কার বিরোধী হিসেবে চিহ্নিত করার জোর প্রচারণা চালানো হচ্ছে। বহু আগে থেকেই বিএনপি সংস্কারের কথা বলে আসছে। প্রশাসন, বিচার বিভাগ ও নির্বাচন কমিশনসহ রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন বিষয়ে সংস্কারের দাবি ২০১৬ সালে বিএনপিই প্রথম উত্থাপন করেছে এবং এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ সংক্রান্ত প্রস্তাবও দিয়েছে। তখন রেইনবো প্রস্তাব দিয়ে জাতিসত্ত্বাকে সমুন্নত রাখার জন্য বিভিন্ন কর্মপরিকল্পনার কথা বলেছিলেন দলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া।’
মির্জা ফখরুল ইসলাম আক্ষেপ করে বলেন, ‘বিএনপির বিরুদ্ধে এমন একটা অবস্থা তৈরি করা হয়েছে যে, বিএনপি শুধু নির্বাচন চায়, সংস্কার চায় না । বিএনপি শুধু ক্ষমতা চায় ! হ্যাঁ, বিএনপি ক্ষমতা চায়, বিএনপি তো ক্ষমতার জন্যই রাজনীতি করে। দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে দেশ পরিচালনা করতে চায় বিএনপি।’
‘বিএনপিতো নির্বাচন চাইবেই-উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বিএনপি জনপ্রতিনিধিত্বমূলক সংসদ ও সরকার করতে চায়, যারা জনগণের সমস্যা সমাধান করবে। বিএনপির কাছেই দেশ ও গণতন্ত্র সবচেয়ে নিরাপদ।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, সংস্কার তো চলমান একটি প্রক্রিয়া। এটি পরিপূর্ণতা পেতে ৫ থেকে ১০ বছর কিংবা তারও বেশি সময় লেগে যেতে পারে।
‘তাহলে কী ১০ বছর নির্বাচন হবে না ?’-প্রশ্ন তুলে তিনি জানতে চান, প্রশাসনে বসে থাকা ফ্যাসিবাদের দোসর,আমলাদের দিয়ে কী ১০ বছর দেশ চলবে ? সচিবালয়ের ৯০ শতাংশই ফ্যাসিবাদের দোসর। তাদের দিয়েই বর্তমানে দেশ চলছে। অনির্দিষ্টকালের জন্য অনিশ্চিত অন্তর্বর্তী সরকার দিয়ে দেশ পরিচালনা জনগণের জন্য কী উপকারে আসবে ? এ বিষয়েও মির্জা ফখরুল কৌতূহল প্রকাশ করেন !
বিএনপি মহাসচিব জনগণের বিরুদ্ধে যায় এমন কোনো কাজ না করার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘এ সরকারের এমন কোনো কাজ করা উচিত হবে না, যা জাতির বিরুদ্ধে যাবে। তবে, আমি দৃঢ়তার সাথে বলছি, আমরা অন্তর্বর্তী সরকারের ভালো কাজের জন্য বাধা হয়ে দাঁড়াবো না বরং জনগণের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট যে কোনো কাজে দরকার হলে সরকারকে সহায়তায় সামনে এসে দাঁড়াবো।’
মির্জা ফখরুল বলেন, '‘দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া তিনি গত পরশু যখন লন্ডন থেকে ফিরে এসেছেন এবং তাঁর চেহারার মধ্যে নতুন করে আমরা আলো দেখতে পেয়েছি... গোটা জাতি আজকে নতুন করে আলো পেয়েছে। এই সময়টাকে আঁকড়ে ধরে আমাদেরকে সামনের দিকে এগোতে হবে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ' আজকে পত্রিকায় দেখলাম, আমাদের পোশাক শিল্পের অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। আমেরিকা যে ট্যারিফ পলিসি দিয়েছে তাতে নতুন করে কেউ বিনিয়োগ করছেন না। বিনিয়োগকারীরা বলছেন, একটা গণতান্ত্রিক সরকার ছাড়া আমরা কোনো নতুন বিনিয়োগ করবো না।
তিনি বলেন, ‘গত ১৫ বছর যারা ব্যবসা করতে পারেনি, ফ্যাসিস্ট সরকার তাদের ব্যবসা করতে দেয়নি, ব্যাংকের ঋণ বন্ধ করে দিয়েছে, বিভিন্ন সমস্যা তৈরি করেছে। কিন্তু এই সরকার এখন পর্যন্ত তাদের জন্য বিশেষ কোনো ব্যবস্থা তৈরি করতে পারেনি। উপরন্তু সব ব্যাংকগুলোকে একইভাবে দেখা হচ্ছে।'
দেশের এই বর্তমান অবস্থা তুলে ধরে আইনজীবীদের ‘কথা বলার’ জন্য অনুরোধ জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমাদেরকে কথা বলতে হবে। আমাদের বিজ্ঞ আইনজীবীরা ইদানীং কথা কমিয়ে দিয়েছেন। তাদের এমনকি নিজেদের বিষয়গুলো নিয়েও কথা বলছেন না।'
তিনি বলেন, ‘আমাদের কথা বলতে হবে। কারণ আপনাদের এখন নতুন বাংলাদেশ তৈরি করতে হবে। আপনাদের সত্যিকারার্থে পরের প্রজন্মের জন্য একটা উপযোগী বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে । সেজন্য কোথাও যেন ভুল না হয়, ইচ্ছাকৃতভাবে যাতে ভুল তৈরি করা না হয়, গণতন্ত্র যাতে ব্যাহত না হয় সে বিষয়গুলোতে আমাদের লক্ষ্য রাখতে হবে।’
সংগঠনের সভাপতি সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদীনের সভাপতিত্বে ও মহাসচিব ব্যারিস্টার কায়সার কামালের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার ও সালাহউদ্দিন আহমদ সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী অ্যাডভোকেট আবদুর রেজ্জাক খান, অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল, প্রয়াত এজে মোহাম্মদ আলীর সহধর্মিনী ফারজানা আলী প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।