শিরোনাম
মুহাম্মদ নূরুজ্জামান
খুলনা, ০৩ জুন, ২০২৫ (বাসস) : এ বছর খুলনা বিভাগের ৬০টি উপজেলার ১৬৯টি পশুর হাট বসেছে। এসব হাটে আনা পশু বিক্রেতাসহ সংশ্লিষ্টদের তাৎক্ষণিক চিকিৎসায় ১৫২টি মেডিকেল টিমও গঠন করা হয়েছে।
ইতোমধ্যেই হাটগুলো জমে উঠতে শুরু করেছে। তবে, এখনও বেচাকেনা পুরোপুরি জমে উঠেনি। ক্রেতারা হাটে এসে পছন্দের পশু দেখছেন, দাম যাচাই করছেন। ঈদের ২-১ দিন আগে পুরোপুরি বিক্রি জমে উঠবে বলে আশা করছেন বিক্রেতারা।
খুলনা বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ দপ্তরের সূত্রে জানা গেছে, খুলনা বিভাগের দশ জেলায় মোট ১৬৯টি পশুর হাট বসেছে। এর মধ্যে স্থায়ী হাটের সংখ্যা ১২০টি এবং অস্থায়ী পশুর হাট রয়েছে ৪৯টি। হাটগুলোর মধ্যে খুলনা মহানগরীর জোড়াগেটে সিটি কর্পোরেশন পরিচালিত পশুর হাটসহ জেলায় হাটের সংখ্যা ২২টি। এছাড়া বাগেরহাটে ৩৩, সাতক্ষীরায় ১৫, যশোরে ১৯, ঝিনাইদহে ২২, মাগুরায় ১৯, নড়াইলে ৮, কুষ্টিয়ায় ১৭, চুয়াডাঙ্গায় ৮ এবং মেহেরপুরে ৬টি হাট স্থাপন করা হয়েছে। খামারি ও গরু ব্যবসায়ীরা ইতোমধ্যেই এই হাটগুলোতে পশু আনতে শুরু করেছেন।
খুলনা জেলা প্রশাসন সূত্র জানান, খুলনার ৯টি উপজেলায় ঈদকে কেন্দ্র করে স্থায়ী-অস্থায়ী মিলে ২২টি পশুর হাট বসেছে। এসব হাটে ইতোমধ্যে পশু বিক্রি শুরু হয়েছে। কেউ কেউ হাট বসাচ্ছেন ঈদের আগের তিন দিন, কেউ দুই দিন, আবার কোথাও কোথাও সপ্তাহব্যাপী পশু কেনা-বেচা হবে। রূপসা, দিঘলিয়া, পাইকগাছা, ডুমুরিয়া, তেরখাদা, ফুলতলা, কয়রা ও বটিয়াঘাটা উপজেলার হাটগুলোতে গরু-ছাগলের পাশাপাশি ভেড়া এবং মহিষও বিক্রি হচ্ছে।
সরেজমিনে গরুর হাটে গিয়ে দেখা যায়, কোরবানিকে সামনে রেখে হাটে বিভিন্ন এলাকা থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণে দেশি গরু-ছাগল আসছে। সকাল থেকে ছোট-বড়-মাঝারি আকারের গরু, কয়েক বছর লালন পালনের পর বিক্রির জন্য হাটে তুলেছেন খামারিরা। আবার অনেকে দেখছেন, যাচাই করছেন দাম।
তেরখাদা উপজেলার বারাসাত গ্রামের নজু মোল্লা জানান, ইখড়ি গরুর হাটে ১ লাখ থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকার গরুর চাহিদা বেশি। যারা ছোট গরু বাজারে এনেছেন তারা কিছুটা লাভের মুখ দেখছেন। বড় গরুর চাহিদা কম থাকায় বিক্রিও কম।
উপজেলার কাটেঙ্গা গ্রামের খামারি কাইনাত শিকদার বলেন, পশু পালনে খরচ বেড়েছে কিন্তু সে তুলনায় মিলছে না দাম।
ক্রেতা মাসুদ শেখ জানান, সবাই এক ধরনের অস্থিরতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। বড় অঙ্কের টাকা খরচ করতে চাচ্ছে না। তারপরেও বাজারে পর্যাপ্ত গরু আসছে। কেনাবেচাও খারাপ না, ভালো।
উপজেলার জয়সেনা এলাকার নিজাম খা বলেন, ইখড়ি গরুর হাট জমজমাট হয়ে উঠেছে। হাটে ঘুরে-ঘুরে গরু দেখছি। বাজেট আর পছন্দ মতো হলে তবেই কিনব।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলেন, খুলনার হাটে দুই থেকে চার মণ ওজনের গরু বিক্রি হচ্ছে ষাট হাজার থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকার মধ্যে। চার থেকে ছয় মণ ওজনের গরুর দাম ১ লাখ ২০ থেকে ১ লাখ ৭০ হাজার টাকার মধ্যে।
ছয় থেকে ১০ মণ ওজনের গরু বিক্রি হচ্ছে ১ লাখ ৮০ হাজার থেকে সাড়ে ৩ লাখ টাকার মধ্যে।
খুলনা সিটি কর্পোরেশনের (কেসিসি) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা লস্কর তাজুল ইসলাম বলেন, জোড়াগেট পশুর হাটে সুষ্ঠু কার্যক্রম নিশ্চিত করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের তত্ত্বাবধানে সিসিটিভি স্থাপন করা হয়েছে। একই সঙ্গে মেডিকেল টিম এবং জাল টাকা শনাক্তকরণ মেশিন প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
খুলনা বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ডা. নূরুল্লাহ মো. আহসান বাসসকে বলেন, খুলনা বিভাগের দশ জেলার ৫৯টি উপজেলায় এবং কেসিসির অভ্যন্তরে পশুর হাট স্থাপন করা হয়েছে। পশুর স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য ১৫২টি পশু চিকিৎসা দল নিয়োজিত করা হয়েছে। প্রতিটি হাটেই স্থানীয় প্রশাসন, পুলিশ ও প্রাণিসম্পদ বিভাগের তত্ত্বাবধানে স্বাস্থ্য সুরক্ষা, পশু পরীক্ষা ও দাম নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পশুর হাটগুলোতে গবাদিপশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও সনদ প্রদানের জন্য ভেটেরিনারি চিকিৎসক দায়িত্ব পালন করবেন। স্বাস্থ্য সনদ ছাড়া কোনো পশু কেনা-বেচা না করতে হাট ইজারাদারদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।