বাসস
  ২৩ মে ২০২৫, ১৩:৩৫

বোরোর ফলন ভালো হলেও ঝড়বৃষ্টিতে দুশ্চিন্তায় লালমনিরহাটের কৃষক

ছবি : বাসস

বিপুল ইসলাম

লালমনিরহাট, ২৩ মে ২০২৫ (বাসস): চলতি বোরো মৌসুমে ধানের ফলন ভালো হওয়ায় খুশি জেলার কৃষকরা। মাঠে মাঠে এখন ধান কাটার পাশাপাশি রোদে শুকানোর ব্যস্ততা চলছে। সোনালি ধানের ঘ্রাণে ছড়িয়ে পড়েছে আনন্দের আমেজ। তবে চলতি মাসে কয়েক দফা দমকা হাওয়া ও আকস্মিক বৃষ্টিপাত কৃষকদের দুশ্চিন্তায় ফেলেছে।

সরেজমিনে জেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, এখনও অনেক জায়গায় বোরো ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজ শেষ হয়নি। কেউ কেউ ধান কাটলেও বৃষ্টির কারণে তা মাড়াই করতে পারছেন না। আবার পরিপূর্ণ রোদের অভাবে ধান যথাযথভাবে শুকানোও যাচ্ছে না। এছাড়া অনেক ক্ষেত এখনও পানির নিচে ডুবে থাকায় ধান নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে জেলায় ৪৮ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। কৃষকদের ভাষ্যমতে, ইতোমধ্যে প্রায় ৬৫ শতাংশ জমির ধান কাটা সম্পন্ন হয়েছে। তবে মৌসুমের শেষ ভাগে এসে বৈরী আবহাওয়ার কারণে ধান কাটা, শুকানো ও মাড়াইয়ের কাজে বাধা সৃষ্টি হচ্ছে। 

সদর উপজেলার কৃষক আক্কাস আলী বলেন, ‘বেশিরভাগ জমির ধান কাটা শেষ হলেও নীচু জমির ধান বৃষ্টিতে ভিজে গেছে। এতে ধানের ওজন ও মান দুটো নিয়েই দুশ্চিন্তায় আছি।’

পঞ্চগ্রাম ইউনিয়নের কৃষক আবু সালাম মিয়া বলেন, ‘ফলন ভালো হলেও বৃষ্টির কারণে ধান ঘরে তোলা যাচ্ছে না। তাই বাধ্য হয়ে মাঠেই প্লাস্টিক বিছিয়ে ধান মাড়াই করছি।’

মহেন্দ্রনগর ইউনিয়নের কৃষক আজমুল হাসান বলেন, ‘কয়েক দফা বৃষ্টিতে নীচু জমির ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে ধানের মান ও দাম দুটোই কমে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।’

এদিকে শ্রমিক সংকট ও মজুরি বৃদ্ধিও কৃষকদের জন্য আরেকটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে শুধু মজুরিই নয়, কীটনাশক ও বীজসহ অন্যান্য উপকরণের ব্যয়ও বেড়েছে। কৃষি কর্মকর্তারা জানান, এবার বিঘাপ্রতি উৎপাদন খরচ প্রায় ১-২ হাজার টাকা বেড়েছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. মো. সাইখুল আরিফিন বলেন, অনুকূল আবহাওয়া, সার ও কীটনাশকের স্বাভাবিক সরবরাহ এবং কৃষি বিভাগের তত্ত্বাবধানে এবার ফলন ভালো হয়েছে। আশা করছি কৃষকরা ভালো দাম পাবেন। তবে শেষ সময়ের ঝড়-বৃষ্টি কিছুটা বিঘ্ন সৃষ্টি করেছে।

সার্বিকভাবে, বোরো ধানের বাম্পার ফলনে কৃষকরা সন্তুষ্ট হলেও প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও উৎপাদন খরচ বৃদ্ধির কারণে তাদের লাভ নিয়ে রয়েছে কিছুটা অনিশ্চয়তা।