বাসস
  ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:১৪

নড়াইলের পিরোলীতে ২০ বছর পর আউশ ও আমনের ব্যাপক ফলন

কালিয়া উপজেলার পিরোলীতে আউশ ও আমন ধানের ব্যাপক ফলনের সম্ভাবনা । ছবি :বাসস

 

/সুলতান মাহমুদ/

নড়াইল, ২ সেপ্টেম্বর ২০২৫ (বাসস): জেলার কালিয়া উপজেলার পিরোলীতে প্রায় ২০ বছর পর আউশ ও আমন ধানের ব্যাপক ফলনের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। দীর্ঘদিন পর বোনা আউশ ও আমন ধানের ব্যাপক ফলন হওয়ায় কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে। অঞ্চলের কৃষকদের উঠানজুড়ে এখন আউশ ধানের মৌ মৌ ঘ্রাণ। পাকা আউশ ধান কাটা মাড়াইসহ ঘরে তোলায় ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকেরা।

কৃষি কর্মকর্তা ও কৃষকরা জানান, নবগঙ্গা নদীর চিত্রার মোহনায় শীতলবাটি স্লুইসগেট, মজুতখালী নদীর রামনগর ও নলামারার স্লুইসগেট এবং ভৈরব নদের রানাগাতি স্লুইসগেট দিয়ে লবণাক্ত পানি বিলে প্রবেশ করায়  দীর্ঘ ২০ বছর ধরে নড়াইলের কয়েকটি উপজেলায় আউশ ও আমনের চাষ হতো না। এরমধ্যে কালিয়া উপজেলার পিরোলী বিল, অভয়নগর উপজেলার সিদ্ধিপাশা ইউনিয়নের নাউলি বিল, আমতলা বিল এবং শুভরাড়া ইউনিয়নের গোপীনাথপুর ও ইছামতি বিলে আউশ ও আমন ধানের চাষ করা যেত না।

চলতি মৌসুমের শুরুতে কৃষকদের দাবির প্রেক্ষিতে কালিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও কৃষি কর্মকর্তারা নদী থেকে লবণাক্ত পানি বিলে প্রবেশ বন্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। প্রশাসনের সিদ্ধান্তে পিরোলী বাজারের পাশে চিত্রা নদীর মোহনায় শীতলবাটি স্লুইসগেটটি বন্ধ করে দেয়া হয়। এরই অংশ হিসেবে অভয়নগর উপজেলার সিদ্ধিপাশা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আবুল কাসেম ও শুভরাড়া ইউপি চেয়ারম্যান জহুরুল হককে বিষয়টি জানানো হলে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে কথা বলে তারাও নিজ নিজ এলাকার তিনটি স্লুইসগেট বন্ধ করে দেন। স্লুইসগেট বন্ধ করার পর বিলে লবণাক্ত পানি ঢোকা বন্ধ হয়ে যায়। এর ফলে এ অঞ্চলের দুই শতাধিক কৃষক প্রায় ২০ বছর পর পিরোলী, শীতলবাটি, নাউলি, আমতলা, গোপীনাথপুর ও ইছামতি বিলে বোনা আউশ ও আমন ধান চাষের সুযোগ পান। 

পিরোলী গ্রামের বাসিন্দা কৃষকবান্ধব গোলাম মোর্শেদ শেখের উদ্যোগে পিরোলী ও সিদ্ধিপাশার চন্দ্রপুরবাসীর সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এ উদ্যোগ সফল হয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষকেরা। গোলাম মোর্শেদ বলেন, চলতি মৌসুমের শুরুতে নদী থেকে লোনা পানি বিলে ঢোকা বন্ধ হওয়ার পর এলাকায় মাইকিং করে কৃষকদের ধান চাষে উৎসাহিত করা হয়।

কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘ প্রায় ২০ বছর ধরে নদী থেকে লোনা পানি বিলে ঢোকায় জমির উর্বরতা নষ্ট হয়ে যায়। এতে আউশ ও আমন ধান চাষ প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। বিগত বছরগুলোতে এক শ্রেণির অসাধু মৎস্যজীবী এলাকার প্রভাবশালীদের সাথে নিয়ে ধানের মৌসুমে স্লুইসগেট খুলে রাখায় লবণাক্ত পানি ঢুকে বিল পানিতে সয়লাব হয়ে যেত। টেংরা, ভেটকি, বেলে, ফাইসাসহ নদীর বিভিন্ন প্রজাতির মাছ পাওয়ার লোভে মৎস্যজীবীরা স্লুইসগেট খুলে রাখতেন। যাতে নদীর মাছগুলো বিলে সহজে প্রবেশ করতে পারে। এ কারণে বিল লোনাপানি ঢুকতো। ফলে আমন ও আউশ ধান চাষাবাদ প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। এ বছর উপজেলা প্রশাসন ও কৃষি বিভাগের উদ্যোগে স্লুইসগেট বন্ধ রেখে আউশ ও আমন ধান চাষ করেছেন এলাকার কৃষকরা। এছাড়া বিলে সুস্বাদু পানি থাকায় বিভিন্ন প্রজাতির দেশি মাছের উৎপাদন বেড়েছে।

কালিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) সুমন সরকার বাসসকে বলেন, পিরোলী এলাকায় আউশ ও আমন ধান চাষ শুরু হওয়ায় কৃষকেরা মিষ্টি ও সুস্বাদু চালের ঐতিহ্য ফিরে পেয়েছে। চলতি  মৌসুমে এ এলাকায় আউশ ও আমন ধানের ব্যাপক ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে। আগামীতেও এই বিলে কৃষকেরা আরো অধিক পরিমাণ জমিতে আউশ ও আমনের চাষ করতে পারবে। 

কালিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রাশেদুজ্জামান বলেন, কৃষকদের দাবির প্রেক্ষিতে পিরোলী অঞ্চলে নদী থেকে বিলে লোনাপানি প্রবেশ বন্ধে উপজেলা প্রশাসন, কৃষি ও মৎস্য অফিস এবং পানি উন্নয়ন বোর্ড যৌথ উদ্যোগ নেয়। এর ফলে কৃষকেরা আউশ ও আমন ধান চাষে সফল হয়েছেন।