বাসস
  ১৫ ডিসেম্বর ২০২২, ১৫:৩৩
আপডেট  : ১৫ ডিসেম্বর ২০২২, ১৭:৪৩

স্বাধীন দেশের নাগরিক আমি এটিই সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি : বীর মুক্তিযোদ্ধা তোজাম্মেল 

॥ শাহাদুল ইসলাম সাজু ॥
জয়পুরহাট, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২২ (বাসস) : ডিসেম্বর মাস আসলেই মনে পড়ে পাকিস্তানি বাহিনীর গুলির ক্ষত চিহ্নের কথা। ৫১ বছর ধরে বয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছেন সেই ক্ষতচিহ্ন জয়পুরহাটের যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা তোজাম্মেল হক মোল্ল্যা। যে দেশের জন্য বুক পেতে দিয়েছিলেন, সেই দেশ স্বাধীন হওয়াও সবেচেয়ে গর্ববোধ তাঁর। তিনি বলেন- যে দেশের জন্য বুক পেতে দিয়েছিলাম সেই দেশটা স্বাধীন হয়েছে। সেই স্বাধীন দেশের নাগরিক আমি এটিই সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি।
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ ও গুলিবিদ্ধ হওয়ার স্মৃতি নিয়ে কথা হয় তাঁর সঙ্গে। বীর মুক্তিযোদ্ধা তোজাম্মেল হক মোল্ল্যার বাড়ি সদর উপজেলার হেলকুন্ডা গ্রামে। পিতা আকিজ উদ্দিন ও মা কাঁচামন বেওয়ার সাত সন্তানের মধ্যে সেজ হচ্ছেন তোজাম্মেল। 
১৯৭১ সালের ৭ মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ভাষণে উদ্বুদ্ধ হয়ে মুক্তিযুদ্ধে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন সেই সময়ের ১৭ বছরের টগবগে যুবক তোজাম্মেল হক মোল্ল্যা। তিনি তখন জয়পুরহাট সদরের তেঘর উচ্চ বিদ্যালয়ের এসএসসি পরিক্ষার্থী। যারা মুক্তিযুদ্ধে যেতে আগ্রহী তাদের নিয়ে স্থানিয়ভাবে জয়পুরহাট সরকারি কলেজ মাঠে মুক্তিযোদ্ধাদের ট্রেনিং এর ব্যবস্থা করা হয়। সাবেক সেনা সদস্য শাকিল আহমেদ ও আব্দুল ওয়াদুদের নেতৃত্বে চলে লাঠি দিয়ে অস্ত্র চালানোর সেই প্রশিক্ষণ। তোজাম্মেল হক মোল্ল্যা এখানে ট্রেনিং শেষ করে ভারতে কামারপাড়া ক্যাম্পে। ৭ নং সেক্টরের অধিনের একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে অন্যান্যদের সঙ্গে চলে যান রায়গঞ্জে। সেখানে আরও উন্নতমানের ভারী অস্ত্র চালানোর প্রশিক্ষণ গ্রহণের জন্য। সেখানে নিরাপদ মনে না করায় তাদের পাঠানো হয় কালিয়াগঞ্জের জঙ্গলে। কালিয়াগঞ্জের জঙ্গলে প্রশিক্ষণে অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়লে সেখান থেকে শিলিগুড়িতে প্রশিক্ষণ শেষে ৭ নং সেক্টরের হেডকোয়ার্টারে যান তোজাম্মেল হক। হেডকোয়ার্টারের নির্দেশনায় ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের হিলি, ডাঙ্গাপাড়া, কড়িয়া, পাগলাদেওয়ান এই অঞ্চলে জীবন বাজি রেখে গেরিলাযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন এই বীর মুক্তিযোদ্ধা তোজাম্মেল হক মোল্ল্যা ও তার দল। নিজ এলাকাতেও যুদ্ধে অংশ নেন তিনি। ১৯৭১ সালের ৯ ডিসেম্বর ৭ নং সেক্টর হেডকোয়ার্টাারের নির্দেশে সাব সেক্টর কমান্ডার শহীদ বীরশ্রেষ্ঠ মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীরের নেতৃত্বে যেতে হয় চাপাইনবাবগঞ্জের সোনামসজিদ এলাকায়। সেখানে ১৩ ডিসেম্বর  চালানো  সন্মুখ যুদ্ধে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর গুলি এসে লাগে তোজাম্মেল হকের বুকে। আহত অবস্থায় প্রথমে নেয়া হয় শিবগঞ্জ হাসপাতালে তারপর নেয়া হয় ভারতের  মালিদহ হাসপাতালে। পরের দিনই খবর পান বীরশ্রেষ্ঠ মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর পাক হানাদার বাহিনীর গুলিতে শহীদ হয়েছেন। 
তোজাম্মেল হক মোল্ল্যা আহত হবার তিনদিনের মাথায়  লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত হয় স্বাধীন বাংলাদেশ। বুকে গুলিবিদ্ধ হলেও তোজাম্মেল হক মোল্ল্যার আনন্দের যেন শেষ নেই। স্বাধীনতার পরে চলে আসেন রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। তিনি বলেন, এখন বয়স হয়েছে আর কাজ করতে পারিনা। সরকারের দেয়া মুক্তিযোদ্ধা ভাতা এখন আমাদের জন্য সম্মানের ও একমাত্র সম্বল। ৫১ বছর ধরে বুকে গুলির ক্ষত চিহ্ন নিয়ে বেড়ালেও কোন দু:খ নেই। যে দেশের জন্য বুক পেতে দিয়েছিলাম সেই দেশটা স্বাধীন হয়েছে। সেই স্বাধীন দেশের নাগরিক আমি এটিই সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি বলে মন্তব্য করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা তোজাম্মেল হক মোল্ল্যা। 

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়