বাসস
  ১৩ আগস্ট ২০২২, ১৮:১৭

চট্টগ্রামে পাহাড় রক্ষায় ইঞ্জিনিয়ারিং’র সঠিক প্রয়োগ নিশ্চিত করতে গুরুত্বারোপ মোজাম্মেল হকের

চট্টগ্রাম, ১৩ আগস্ট, ২০২২ (বাসস): শক্তিশালী পাহাড় রক্ষা কমিটির প্রধান ও বাংলাদেশ পরিবেশ ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও চুয়েট ভিসি (প্রাক্তন) প্রফেসর মোজাম্মেল হক বলেছেন, পাহাড়ধসে মানুষ মরলে প্রশাসন ইঞ্জিনিয়ারিং খোঁজে দ্রুত লাশ উদ্ধার করার জন্য। পাহাড়ধস প্রতিরোধ ও পাহাড় রক্ষায় ইঞ্জিনিয়ারিং’র সঠিক প্রয়োগ করা হলে পাহাড় রক্ষা হবে এবং ধসে মানুষও মরবে না।
আজ শনিবার দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের ইঞ্জিনিয়ার আবদুল খালেক মিলনায়তনে বাংলাদেশ পরিবেশ ফোরাম এবং চট্টগ্রাম নদী ও খাল রক্ষা আন্দোলনের যৌথভাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি।
প্রফেসর মোজাম্মেল হক, চট্টগ্রামের পাহাড় রক্ষায় প্রয়োজন প্রশাসনিক সদিচ্ছা ও সঠিক পরিকল্পনা। তিনি বলেন, বর্তমান জেলা প্রশাসক যে সাহসী উদ্যোগ নিয়েছেন তা সঠিত পরিকল্পনার মাধ্যমে নিবিড়ভাবে বাস্তবায়িত হলে নগরী এবং জেলার অবশিষ্ট পাহাড় রক্ষা করা যাবে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ইংরেজ কালেক্টর এ এল ক্লে নিজের আত্মজীবনীর বইয়ে চট্টগ্রামকে বঙ্গের সবচেয়ে সুন্দর জায়গা উল্লেখ করে বলেন, নিচু টিলা, চূড়োয় বাড়ি, পাকদ-ী (ঘুরপথ) বেয়ে উঠতে হয়। কোনো কোনো পাহাড়ে চমৎকার দৃশ্য দেখা যায়। ক্লে সাহেবের বর্ণিত সেই নান্দনিক পাহাড় পাকিস্তানের শুরু থেকে কাটা শুরু হয়। পাকিস্তান আমলের ২৪ বছরে কমেছে পাহাড়ের সংখ্যা। স্বাধীনতার পর ২০০৮ সাল পর্যন্ত চট্টগ্রামের ৮৮টি পাহাড় পুরোটাই বিলুপ্ত হয়েছে। একই সময়ে আংশিক কাটা হয়েছে ৯৫টি। এরপরের ১২ বছরে পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার নিয়েছে। শহরের জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে পাহাড় নিধন। বেশিরভাগ পাহাড় কাটা হয় পাহাড়তলী, খুলশী, বায়েজিদ, লালখান বাজার মতিঝর্ণা, ষোলশহর এবং ফয়’স লেক এলাকায়। ১৯৭৬ থেকে ৩২ বছরে চট্টগ্রাম নগর ও আশপাশের ৮৮টি পাহাড় সম্পূর্ণ এবং ৯৫ টি আংশিক কেটে ফেলা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, চট্টগ্রাম মহানগরীর বাইরে জঙ্গল সলিমপুর এবং আলীনগরে ২০০০ সাল থেকে বিগত ২২ বছরে অর্ধশতাধিক পাহাড় নিধন করা হয়েছে। এখানে সরকারের খাস খতিয়ানভুক্ত পাহাড় ছিল ৩ হাজার ১ শত একর।  কিন্তু গত ২ যুগের মধ্যে ৪০ থেকে ৫০ জনের চিহ্নিত ভূমিদস্যু বাহিনী চট্টগ্রামের এই জঙ্গল সলিমপুর এবং  আলিনগর এলাকার পাহাড় কেটে আলাদা এক সা¤্রাজ্য তৈরি করেছে। গত ২ আগস্ট চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান এবং পুলিশ সুপার এসএম রশিদুল হকের  উপস্থিতিতে  উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ ১৭৫ টি স্থাপনা উচ্ছেদ করে ৭০০ একর পাহাড়ি জমি উদ্ধার করা হয়। জঙ্গল সলিমপুরে যেটুকু পাহাড় কাটা হয়েছে সেটুকুতেই সরকারের  মহাপরিকল্পনা হিসাবে জেলা কারাগার, ক্রীড়া কমপ্লেক্স, প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ইত্যাদি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে বলে জেলা প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়।
উক্ত প্রকল্প বাস্তবায়ন ও পাহাড় নদী রক্ষায় সংবাদ সম্মেলনে সাত দফা সুপারিশ করা হয়। সুপারিশসমূহ হচ্ছে: হাইকোর্টের নির্দেশ অনুসারে জঙ্গল সলিমপুর ও আলীনগরসহ চট্টগ্রাম মহানগরের বিভিন্ন পাহাড়ে গড়ে তোলা সকল অবৈধ বসতি দ্রুত উচ্ছেদ করা। সেই সাথে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সারাদেশে ভূমিহীনদের যেভাবে জায়গাসহ ঘর উপহার দিচ্ছেন সেই নিয়মে চট্টগ্রামের পাহাড় থেকে উচ্ছেদ করা প্রকৃত ভূমিহীনদের ঘরসহ পুনর্বাসন করা। উদ্ধার করা বিশাল পাহাড়ি ভূমির কোনো অংশে কিংবা সরকারি জমিতে কক্সবাজারের আদলে বহুতল ভবন তৈরি করে প্রকৃত ভূমিহীনদের পুনর্বাসন করা। হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুসারে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক প্রদত্ত উচ্ছেদ নোটিশ অনুযায়ী দেশের অর্থনীতির হৃৎপি- কর্ণফুলী নদীর দু’পাড়ে অবৈধভাবে গড়ে তোলা সকল স্থাপনা উচ্ছেদ করা। চট্টগ্রাম শহরের শত শতটন বর্জ্য ও পলিথিন কর্ণফুলী নদীতে পড়তে না পারে সে বিষয়ে কার্যকর পরিকল্পনা গ্রহণ করে তা বাস্তবায়ন করা। বিশ্বের অন্যতম প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদীর মা মাছ রক্ষা, দূষণরোধ এবং বিপন্ন প্রজাতির ডলফিন রক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া। আরএস শিট অনুসারে চট্টগ্রাম শহরের ৭১ টি খাল চিহ্নিত করে বিলুপ্ত এবং দখল করা সকল খাল উদ্ধার করা। চট্টগ্রামে বর্তমানে টিকে থাকা পাহাড়গুলো রক্ষায় জেলা প্রশাসন, পরিবেশ অধিদপ্তর, সিডিএ, সিটি কর্পোরেশন এক হয়ে ২০০৭ সালে শক্তিশালী পাহাড় রক্ষা কমিটি প্রদত্ত সুপারিশ অনুযায়ী সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করা।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বাংলাদেশ পরিবেশ ফোরাম এবং চট্টগ্রাম নদী ও খাল রক্ষা আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক আলীউর রহমান। সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন বাংলাদেশ পরিবেশ ফোরামের উপদেষ্টা সাংবাদিক কাজী আবুল মনসুর, প্রফেসর ড. মঞ্জুরুল কিবরিয়া, চট্টগ্রাম নদী ও খাল রক্ষা আন্দোলের সভাপতি ও পরিবেশ ফোরামের উপদেষ্টা চৌধুরী ফরিদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডাক্তার মাহমুদুল হাসান সোহেল ও অধ্যাপক প্রদীপ কুমার দাশ, সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম পেয়ার আলী প্রমুখ।
 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়