বাসস
  ১১ মে ২০২২, ১৭:২১

এইডস ছোঁয়াচে রোগ নয়

ঢাকা, ১১ মে, ২০২২ (বাসস) : চট্ট্রগাম শহরে বাস  করেন  পঁয়তাল্লিশ বছর বয়সী রাহেলা আক্তার (ছদ্মনাম) এইচআইভি বা  এইডসে আক্রান্ত হন সাত বছর আগে। তার স্বামী বিদেশ থাকেন। এক/দুই বছর পরপর বাড়ি আসেন। এর কোন এক সময় রাহেলাও আক্রান্ত হয়ে যান। কিন্তু রাহেলার এইডস রোগে আক্রান্তের বিষয়টি প্রকাশ হওয়ার পর থেকে তাকে এক প্রকার জোর করেই তার শ্বশুড়-শ্বাশুড়ী বাড়ী থেকে বের করে দেয়। তারপর থেকেই তার স্থান হয় ভাইয়ের বাড়িতে। বাবা-মা মারা গেছেন অনেক আগেই। ভাইয়ের সংসারেও যে খুব বেশি ভালো আছেন তা নয়। ভাইয়ের বৌ সারাক্ষন কথা শোনান। স্থান হয়েছে ছোট অন্ধকার এক রুমে। আর সেই রুম থেকে বের হওয়া বারণ। তাদের ধারনা এটা ছোঁয়াচে  রোগ। তাই বাচ্চাদেরও হয়ে যেতে পারে।
পুরো বিশ্বে এখনো পর্যন্ত যেসব গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য সংকটগুলো রয়েছে তার মধ্যে এইডস একটি। আর এই রোগের জন্য দায়ী এইচআইভি ভাইরাস। ইউএনএইডস এর তথ্য মতে, প্রায় ৩৪ মিলিয়ন মানুষ এইডস’এ আক্রান্ত পুরো বিশ্বে। আর প্রতিদিন এ মরনঘাতী রোগে আক্রান্ত হচ্ছে প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ। এখন পর্যন্ত প্রায় ৩৫ মিলিয়ন আক্রান্ত ব্যক্তি এ রোগে মৃত্যুবরন করেছেন।
এ রোগ প্রথম ধরা পড়ে ১৯৮০ সালে। আর এরপর থেকেই এ নিয়ে অনেক ভ্রান্ত ধারণা জন্ম নেয় মানুষের মধ্যে। শুরুর দিকে এসব ভ্রান্ত ধারনার কারনে এইডস আক্রান্ত ব্যক্তিদের  অনেক বেশী নিগৃহিতের শিকার হতে হয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, মূলত এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের সাথে মেলামেশা করলেই এ রোগ ছড়ায় না। এটি কোন ছোঁয়াচে রোগ নয়। আক্রান্ত ব্যক্তির সাথে হাতে হাত রাখলে বা একই প্রাত্রে খাবার গ্রহণ বা পানীয় পান করলে বা জড়িয়ে ধরলে এ রোগ ছড়ায় না।
আবার অনেকের মধ্যে ধারনা আছে যে, আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহৃত টয়লেট অন্যরা ব্যবহার করলে তারাও এইচআইভি রোগে আক্রান্ত হবে। কিন্তু এ ধারনাও ভুল। আবার অনেকে মনে করেন, মশার মাধ্যমেও এ রোগ ছড়ায়। একজন এইচআইভি এইডসে আক্রান্ত ব্যক্তিকে যদি কোন মশা কামড়ায় আর সে মশা যদি অন্য কোন সুস্থ ব্যক্তিকে কামড়ায় তবে সেও এ রোগে আক্রান্ত হয়। এটাও একটা ভ্রান্ত ধারনা।
আবার অনেকের ধারনা যৌন মিলনের সময় কনডম ব্যবহার করলে এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকেনা। তবে অনেক সময় কনডম ফেঁটে যেতে পারে।
আবার অনেকে মনে করেন, এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা খুব অল্প সময় বেঁচে থাকে। কিন্তু বাস্তবতা হল আক্রান্ত ব্যক্তি সঠিক নিয়ম-কানুন মেনে চললে অনেকদিন বেঁচে থাকেন।
বিশেষজ্ঞদের মতে একসময় এ নিয়ে সচেতনতার খুব অভাব ছিল। তবে এখন বিশ্বের অন্যান্য দেশের মত বাংলাদেশেও এ নিয়ে যথেষ্ঠ সচেতনতা তৈরী হয়েছে। আর এজন্য বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের ভূমিকা অতুলনীয়। সরকারের ব্যাপক প্রচার-প্রচারণার কারনে মানুষ এখন আগের চেয়ে অনেক বেশী সচেতন।
তাদের মতে এসব প্রচারনা আরো বাড়ালে এ রোগে আক্রান্তের সংখ্যা দ্রুত আরো কমিয়ে আনা সম্ভব। তবে এক্ষেত্রে দেশী-বিদেশী এনজিও গুলোর ভূমিকা আরো জোরালো করতে হবে।
বাসস/ইউনিসেফ ফিচার/ফই/মহ/১৭২০/স্বব

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়