বাসস
  ২৫ মার্চ ২০২২, ১২:২৭
আপডেট  : ২৫ মার্চ ২০২২, ১৫:১৪

ঠাকুরগাঁওয়ের মিশ্র ফল চাষে শরিফুলের স্বপ্নপূরণ 

 // মো. আসাদুজ্জামান আসাদ //    
ঠাকুরগাঁও,২৫ মার্চ, ২০২২ (বাসস) : মানুষ বাঁচে স্বপ্নে, স্বপ্ন বাঁচে আশায়। মানুষ প্রথমে স্বপ্ন দেখে, তারপর সে স্বপ্ন বাস্তবায়নে কাজ করে। যারা মেধা, দক্ষতা ও শ্রম লাগিয়ে কাজ করতে পারেন তারাই সফল হন। সফলতার গল্প অনেক আছে। তবে ব্যর্থতার পরেও যে সফলতা আসতে পারে, শতভাগ চেষ্টা, বারবারের চেষ্টা, অধ্যাবসায় আর সফল না হওয়া পর্যন্ত লেগে থাকার মানসিকতায় সফলতা এনে দিয়েছে ঠাকুরগাঁওয়ের মিশ্র ফল চাষি শরিফুলের। 
স্বপ্ন আর চেষ্টা থাকলে সফল হওয়া সম্ভব এ কথা আবারও প্রমাণ করলেন রাণীশংকৈল উপজেলার তরুণ শৌখিন মিশ্র ফলচাষি শরিফুল ইসলাম। খুব বেশিদিন নয় মাত্র ৮ মাসে বলসুন্দরী জাতের কুল বরই চাষ করে স্বপ্নপূরণ হয়েছে তার। শুরুতে কুল চাষে খানিকটা হতাশ হলেও বর্তমানে সাফল্য ধরা দিয়েছে তার দুয়ারে। এই সাফল্যে এখন তিনি ভীষণ আনন্দিত। তবে এই আনন্দ আরো বেশি অনুভূত হয় যখন তাকে অনুকরণ ও অনুসরণ করে স্থানীয় তরুণ, ফল ব্যবসায়ী ও চাষীরা মিশ্র ফলের আবাদ করতে তার কাছে ছুটে আসে সেই সময়।
সফল চাষী শরিফুলের পরিবার ও স্থানীয়রা জানান, জেলার রাণীশংকৈল পৌর এলাকায় ৮ মাস আগে কৃষি বিভাগের লেবু জাতীয় ফসলের সম্প্রসারণ প্রকল্পের আওতায় মাল্টা গাছের মাঝে-মাঝে বলসুন্দরী জাতের কুলের চাষ শুরু করেন স্থানীয় শৌখিন চাষি শরিফুল ইসলাম। এক একর পঁচিশ শতক জমি তিনি ১০ বছরের জন্য লিজ নেন বছরে ৪৫ হাজার টাকার বিনিময়ে। শুরুতে স্থানীয় একজন চাষিকে সঙ্গে নিয়ে শুরু করলেও সে চাষি তিন মাস পরে হতাশ হয়ে কুল বরই চাষ ছেড়ে চলে যান। তবুও হাল ছাড়েননি শরিফুল। আবারও অন্য একজন নতুন চাষিকে সঙ্গে নিয়ে পথচলা শুরু হয় শরিফুলের। তবে এবার হতাশা নয় বরং সাফল্য উঁকি দিচ্ছে তাদের সামনে। একই বাগানে আড়াই লাখ টাকা খরচ করা বাগানে এক বছরের আগেই আসলসহ আরও ১ লাখ টাকা লাভের আশা করছেন তিনি। শরিফুলের কুল বরই চাষের কার্যক্রম দেখে স্থানীয়রা প্রথমে হাসাহাসি করলেও বর্তমানে কুল চাষের পরামর্শ নিতে আসছেন তার কাছে। তার বাগানে অন্য জেলা থেকে আসা কুল ক্রেতা প্রতি কেজি কুল ৫০-৬০ টাকা কেজি দরে কিনতে চাইলেও তাদের কাছে কুল বিক্রি করছেন না শরিফুল। বরং স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কাছে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা দরে বিক্রি করছেন। কুল চাষি শরিফুলের দাবি ৮ মাসে সফলতা পেয়েছি। স্থানীয়দের কম দামে দেব। কারণ বেশি দামে অন্যদের দিলে স্থানীয়রা খেতে পারবেন না। এ কারণেই বেশি দাম হলেও অন্য জেলার ব্যবসায়ীদের কাছে কুল বিক্রি করছেন না শরিফুল। তাছাড়া শুধু কুলে নয় মাল্টাতেও বেশ লাভবান শরিফুল। বাজারের মাল্টা স্বল্প স্বাদের হলেও শরিফুলের বাগানের মাল্টা অনেক মিষ্টি ও সুস্বাদু। তাই বাজারের চেয়েও বেশি দামে ক্রেতারা এই মাল্টা কিনতে চাইছেন।
তরুণ শৌখিন মিশ্র ফল চাষি শরিফুল ইসলাম বলেন, দিনাজপুরে বন্ধুর সঙ্গে বেড়াতে গিয়ে শখ জাগে কুল বাগান করার। তারপরে ইউটিউবে কুল চাষের পদ্ধতি দেখি। এক পর্যায়ে উপজেলা কৃষি অফিসের সঙ্গে যোগাযোগ করি। কৃষি বিভাগ আমাকে মাল্টার সঙ্গে বলসুন্দরী জাতের কুল চাষের পরামর্শ দেয়। মাল্টার চারাও সরবরাহ করে কৃষি বিভাগ। এক একর ২৫ শতক জমি বছরে ৪৫ হাজার টাকা লিজ নিয়ে বলসুন্দরী জাতের কুলের চারা সংগ্রহ করে চাষাবাদ শুরু করি। মাল্টা ও কুল একসাথে হচ্ছে । দুটো ফল পৃথক হলেও ভালো চাহিদা ও দাম থাকায় বাজারে ভালো বিক্্ির হচ্ছে। মাত্র আট মাসে আমার মাল্টা ও কুল গাছে চাহিদা অনুযায়ী ফল এসেছে। এরই মধ্যে বাজারজাতও শুরু করেছি। লাভের আশাও করছি। লাভ হবে লক্ষাধিক টাকা আর বাজারে তৈরি হবে আমার বাগানের মাল্টা ও কুলের নতুন চাহিদা। আগামীতে এই মিশ্র ফল চাষ আরো বেশি করে বড় পরিসরে করার ইচ্ছেও আছে। মাল্টা ও কুল দুটো ফলেরই বাজারে ভালো চাহিদা থাকায় আশানুরুপ বিক্রিও হচ্ছে।
এ বিষয়ে রাণীশংকৈল উপজেলার ফল ব্যবসায়ী আকবর আলী বলেন, শরিফুলের কুল এরই মধ্যে বিক্রি শুরু করেছি। স্বাদ ও মান অনেক ভালো। শীতের শুরুতে কুলের চাহিদা কম থাকলেও এখন গরম বাড়ার সাথে সাথে বাজারে কুলের চাহিদা অনেকটা বেড়েছে। আশা করছি দিনদিন বাজারে কুলের চাহিদা বৃদ্ধি পাবে। সেই সঙ্গে আরও বেশি দামে কুল বিক্রি হবে।
একই উপজেলার ভান্ডারা গ্রামের ফল চাষি মজিবর রহমান ও মোবারক আলী জানান, আগে আমরা শুধু কুল চাষ করতাম কিন্তু রাণীশংকৈল উপজেলায় সর্বপ্রথম মিশ্র ফলের চাষ শুরু করেছে শরিফুল। অল্প সময়ে সফল ও মিশ্র ফল চাষে লাভবান হওয়ায় অনেক তরুণ বেকার যুবক ও স্থানীয় ফল চাষীরা তার মত মিশ্র ফল চাষে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন। তাছাড়া ঠ্কাুরগাঁও ছাড়াও বাইরের জেলার চাষী ও ফল ব্যবসায়ীরা তাকে অনুসরণ করছে ও পরামর্শ নিচ্ছে। এটা আমাদের জন্য অনেক আনন্দের ও গর্বের বিষয়।
এ বিষয়ে রাণীশংকৈল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সঞ্জয় দেবনাথ বলেন, মিশ্র বাগান করে সফল শরিফুল ইসলাম। মাল্টার সঙ্গে বলসুন্দরী জাতের কুল রয়েছে তার বাগানে। বলসুন্দরী জাতের কুল দেখতে খুব সুন্দর। খাওয়ার জন্যও বেশ ভালো। তিনি আরও জানান,  ঠাকুরগাঁওয়ে এই রকম কুল বাগান আর নেই। এক একর ২৫ শতক জমিতে বছরে প্রায় দেড় থেকে ২ লাখ টাকা লাভের আশা রয়েছে শরিফুলের। বাগানটি দেখে স্থানীয় কিছু চাষি কুল বাগান করতে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। আশা করি আগামীতে উৎপাদিত বলসুন্দরী জাতের কুল আর অন্য জেলা থেকে আনার প্রয়োজন হবে না। বরং এ জেলার কুল অন্য জেলায় যাবে বলেও জানান তিনি।
এ প্রসঙ্গে ঠাকুরগাঁও জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবু হোসেন জানান, তরুণ মিশ্র ফল চাষি শরিফুল খুব ভালো উদ্যোগ নিয়েছেন। এভাবে বেকার তরুণরা ফল চাষ ও কৃষিতে এগিয়ে আসলে তারাও স্বাবলম্বী হতে পারবেন। মিশ্র ফল চাষি শরিফুলকে উপজেলা ও জেলা কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে পরামর্শসহ সব ধরনের সহায়তা দেয়া হচ্ছে। ভবিষ্যতে তার এই কর্মকা- অব্যাহত থাকলে উপজেলা জেলা ও বিভাগের গ-ি পেরিয়ে জাতীয়ভাবে আরো বেশি সফলতা লাভ করবে শরিফুল সেই প্রত্যাশাই করি বলেও জানান এই কৃষিবিদ।
 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়