শিরোনাম

।। শফিকুল ইসলাম বেবু।।
কুড়িগ্রাম, ২৯ ডিসেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : তীব্র শীত আর হিমেল বাতাসে কাবু হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত উত্তরের জেলা কুড়িগ্রামের বাসিন্দারা। শীতে তাদের স্বাভাবিক জীবনযাপন স্থবির হয়ে পড়েছে। বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন চরাঞ্চল, নদী বিচ্ছিন্ন জনপদ ও খেটে খাওয়া মানুষ।
শীত নিবারণের জন্য শীতার্ত মানুষ ছুটছেন জনপ্রতিনিধিদের বাড়িতে বাড়িতে। কিন্তু যতটুকু সহায়তা মিলছে তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম।
রাজারহাট কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র সরকার জানান, আজ সোমবার সকালে কুড়িগ্রামে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৩ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে উচ্চ আর্দ্রতা, কুয়াশা ও হিমেল বাতাসের কারণে বাস্তবে শীতের তীব্রতা অনেক বেশি অনুভূত হচ্ছে।
জানা গেছে, জেলার প্রায় ২৪ লাখ মানুষের মধ্যে আনুমানিক ১৭ লাখ মানুষ দরিদ্র। তাদের বড় একটি অংশ এখন প্রচণ্ড শীতের প্রকোপে কাঁপছে। শিশু, বৃদ্ধ ও অসুস্থ মানুষের কষ্ট সবচেয়ে বেশি। চলমান শীতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৯ উপজেলায় ২২ হাজার কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। তবে জেলায় শীতবস্ত্রের চাহিদা এর চেয়ে বহু গুণ বেশি।
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ব্রহ্মপুত্র নদ দ্বারা বিচ্ছিন্ন যাত্রাপুর ইউনিয়নে বসবাস করেন প্রায় ৩৬ হাজার মানুষ। এর মধ্যে ২৫ হাজারই দরিদ্র। শীতের বস্ত্র সহায়তা তাদের জরুরি হয়ে পড়েছে।
যাত্রাপুরের পোড়ার চরের কবিরন বেওয়া বলেন, ‘সারা রাত কাঁপি। আগুন জ্বালাই, তবুও ঠান্ডা যায় না। একটা কম্বল পেলে বাঁচতাম।’
যাত্রাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল গফুর বলেন, বিতরণের জন্য আমরা মাত্র ১০০টি কম্বল পেয়েছি। ৯ জন ইউপি সদস্য ও ৩ জন সংরক্ষিত মহিলা সদস্যসহ ১২ জনের মধ্যে এই কম্বল ভাগ করে দেওয়া হয়েছে।
প্যানেল চেয়ারম্যান রহিমুদ্দিন হায়দার রিপন বলেন, শীতার্ত মানুষের চাপে জনপ্রতিনিধিরা পালিয়ে বেড়াচ্ছে। দিনমজুর, জেলে, খেটে খাওয়া মানুষ কাজ পাচ্ছে না। পরিবার নিয়ে তারা মানবেতর জীবনযাপন করছে।
যাত্রাপুর ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের গোয়ালপুরী চরের ইউপি সদস্য আনোয়ার হোসেন বলেন, আমার চরে প্রায় ৩ হাজার ৫০০ মানুষ বসবাস করে। কম্বল পেয়েছি মাত্র পাঁচটি। এই কম্বল বিতরণ নিয়ে বিপাকে পড়েছি।
কুড়িগ্রামের শিক্ষাবিদ ও সাংবাদিক অধ্যাপক লিয়াকত আলী বলেন, জেলার ৬১টি এনজিও দুর্যোগকালীন সময়ে হাত গুটিয়ে বসে আছে।
কুড়িগ্রাম জেলা চর উন্নয়ন কমিটির সভাপতি অধ্যাপক শফিকুল ইসলাম বেবু বলেন, চরের মানুষের শিক্ষা নেই, স্বাস্থ্যসেবা নেই, যোগাযোগ নেই—তার ওপর এই প্রচণ্ড শীত। জেলার ৪৬৯টি চরের মধ্যে ২৬৯টিতে প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ মানুষ বসবাস করে। খাদ্য সংকটের পাশাপাশি শীতবস্ত্রের অভাবে মানুষ কাহিল হয়ে পড়েছে।
এ বিষয়ে জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আব্দুল মতিন জানান, ইতোমধ্যে নয় উপজেলায় ২২ হাজার কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। সরকার শীতবস্ত্র কেনার জন্য ৪০ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। শিগগিরই শীতবস্ত্র কিনে ফের শীতার্ত মানুষের মধ্যে বিতরণ করা হবে।