শিরোনাম

রোস্তম আলী মন্ডল
দিনাজপুর, ২৭ ডিসেম্বর, ২০২৫(বাসস):জেলায় চলতি বছর কৃষি বিভাগের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার অতিরিক্ত দু হাজার হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ অর্জিত হয়ে বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে।
গতকাল শুক্রবার রাতে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. আফজাল হোসেন বাসসকে এই তথ্য নিশ্চিত করেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক জানান,চলতি মৌসুমে জেলায় সরিষার চাষের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ২৭ হাজার ৯৭ হেক্টর জমিতে। এবারে লক্ষমাত্রা ছড়িয়ে ২৯ হাজার ৮৯ হেক্টর জমিতে সরিষার চাষ অর্জিত হয়েছে। গত বছরের চেয়ে ১ হাজার ৯৯২ হেক্টর জমিতে বেশি সরিষার আবাদ অর্জিত হয়। এবারে অর্জিত সরিষা কাটা-মাড়াইয়ের পর জেলায় প্রায় ১ কোটি ৭০ লক্ষ লিটার ভোজ্য তেল বা স্বাস্থ্যসম্মত সরিষার তেল উৎপন্ন হবে।
জেলার সদর উপজেলার কর্ণাই ও নশিপুর গ্রামের বেশ কয়েকজন কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আমন ধান জমি থেকে উত্তোলন ও কাটা-মাড়াইয়ের পর বোরো ধান আবাদ শুরু না হওয়া পর্যন্ত তারা ওই পতিত জমিতে অতিরিক্ত ফসল হিসেবে সরিষার চাষ করছেন। আর কয়েক দিনের মধ্যে সরিষা ক্ষেত থেকে ঘরে তুলতে পারবেন।
আবার ওই একই জমিতে বোরো ধান আবাদ করবেন।
৩৩ শতকের এক বিঘা জমিতে সরিষা আবাদ করতে সব মিলিয়ে খরচ হয় ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা। এবারে অনুকূল আবহাওয়া চলমান থাকায়, সরিষার ফলন ভাল হয়েছে। বিঘা প্রতি ৮ থেকে ৯ মন সরিষার ফলন পাবেন বলে তারা আশা করছেন। বর্তমান বাজার অনুযায়ী সরিষা বিক্রি করে বিঘা প্রতি খরচ বাদে ১৫ হাজার টাকা করে পাবেন বলে আশা করছেন। এতে করে তারা এক বিঘা জমিতে ১৫ হাজার টাকা বাড়তি আয়ের পাশাপাশি প্রত্যেক পরিবারের ভোজ্য তেলের চাহিদা মিটাতে পারবেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (গবেষণা ও প্রশিক্ষণ)মো. মোস্তাফিজুর রহমান জানান, ভোজ্য তেলের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি আর্থিক ভাবে লাভবান করতে কৃষকদের এবার সরিষা চাষে পরামর্শ দিয়ে উৎসাহিত করা হয়েছে। এবারে জেলার ১৩'টি উপজেলার ২ হাজার ৫৭২ জন কৃষকের মাঝে বিনামূল্যে ২ কেজি করে উন্নত জাতের অধিক পরিমাণ ফলনশীল সরিষা বীজ ও ২০ কেজি করে রাসায়নিক সার বিতরণ করা হয়। ফলে জেলায় এবার সরিষা চাষ লক্ষ্যমাত্রা অতিরিক্ত অর্জিত করা সম্ভব হয়েছে। সেই সঙ্গে কৃষকরা সরিষার বাম্পার ফলনের আশা করছেন।
জেলায় অবস্থিত সরিষার তেল প্রস্তুতকারক ও কৃষি বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবারের সম্ভাব্য অর্জিত সরিষা ফলন থেকে ৪৮ হাজার ৫৭৫ মেট্রিক টন উৎপাদিত সরিষা দিয়ে প্রায় ১ কোটি ৭০ লক্ষ লিটার স্বাস্থ্য-সম্মত সরিষার ভোজ্য তেল উৎপাদন করা সম্ভব হবে।
জেলা শহরে মহারাজা মোড়ে অবস্থিত পুর্বালী তেলকল মিলের ব্যবস্থাপক সুনীল রায় জানান, প্রতিমন হিসাবে ৪০ কেজি সরিষা থেকে তেল পাওয়া যায় ১৬ লিটার। অর্থ্যাৎ এক মেট্রিক টন সরিষা থেকে তেল উৎপাদন হয় ৪'শ লিটার।
জেলার বিভিন্ন উপজেলার একাধিক সরিষা চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জেলা কৃষি অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সঠিক দিক-নির্দেশনা ও বাস্তবমুখী পদক্ষেপ গ্রহণে, পর্যায় ক্রমে প্রতি বছর সরিষার চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে।যা ভোজ্য তেল উৎপাদনে সহায়ক হচ্ছে বলে তারা মনে করছেন।