বাসস
  ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬:৪৯

কোকোপিটে চারা উৎপাদন আধুনিক কৃষির সম্প্রসারণে নতুন সম্ভাবনা

ছবি : বাসস

 কামরুল হাসান

কুমিল্লা, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : কোকোপিটে চারা উৎপাদন আধুনিক কৃষির সম্প্রসারণে নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলেছে। এ পদ্ধতিতে সহজেই উন্নত জাতের চারা উৎপাদন করে নিজেরাই নিজেদের ভাগ্য বদলাতে পারেন কৃষকরা। এমন সম্ভাবনার পথ দেখিয়েছেন জেলার তরুণ কৃষক হোসাইন রাব্বি।  

সম্প্রতি কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার সমেসপুর গ্রামে কোকোপিট পদ্ধতিতে শীতকালীন সবজির চারা উৎপাদন করে আলোচনায় এসেছেন প্রবাস ফেরত তরুণ কৃষক হোসাইন রাব্বি। দীর্ঘদিন ধরে চারা উৎপাদনের জন্য খ্যাত এই গ্রামে তার উদ্যোগ নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছে। উন্নত মানের চারা ও ভালো ফলনের আশায় দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে কৃষকরা সমেসপুরে ছুটে আসছেন।

কোকোপিট তৈরি হয় নারিকেলের ছোবড়া (কোকো পিট) থেকে। নারিকেলের ছোবড়া সংগ্রহ করে ছোট- ছোট করে কেটে গুঁড়ো করে ফাইবার আলাদা করে কোকোপিট তৈরি করা হয়। এটি হালকা, পানি ধারণক্ষমতা বেশি ও মাটির বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এতে নাইট্রোজেন ফসফরাস ও পটাশিয়াম থাকে যা গাছের বৃদ্ধির জন্য উপকারী। 

সমেসপুর গ্রাম প্রায় ৭০ বছর ধরে চারা উৎপাদনের সঙ্গে যুক্ত। প্রতিবছর শীত মৌসুম এলেই ফুলকপি, বাঁধাকপি, লাউ, টমেটো, বেগুন, মরিচসহ বিভিন্ন শীতকালীন সবজির চারায় সবুজ হয়ে ওঠে পুরো এলাকা। এতদিন কৃষকরা সনাতন পদ্ধতিতে মাটিতে চারা উৎপাদন করে আসলেও চলতি মৌসুমে কোকোপিট পদ্ধতি সেই ধারায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে।

স্থানীয় কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, কোকোপিটে উৎপাদিত চারাগুলো অধিকতর সুস্থ ও রোগমুক্ত থাকে। সাধারণ মাটিতে উৎপাদিত চারায় পোকামাকড় ও রোগের আক্রমণে অনেক সময় চারা নষ্ট হয়ে যায়, ফলে কৃষককে লোকসান গুনতে হয়। কিন্তু কোকোপিট পদ্ধতিতে উৎপাদিত চারায় প্রায় শতভাগ চারা বেঁচে থাকে। এই চারা জমিতে রোপণের পর গাছের বৃদ্ধি ও ফলন দুটোই ভালো হয়। এ কারণে এই চারার চাহিদা দ্রুত বাড়ছে।
প্রবাস ফেরত উদ্যোক্তা হোসাইন রাব্বি জানান, ইউটিউব ও বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটর্ফম থেকে ধারণা নিয়ে এবং কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরামর্শে তিনি প্রথমবারের মতো কোকোপিট পদ্ধতিতে চারা উৎপাদন শুরু করেন। 
বাসসের সাথে আলাপকালে তিনি বলেন, কোকোপিট মূলত নারকেলের ছোবড়া ও ভার্মি কম্পোস্টের সংমিশ্রণ। এতে মাটির মতো অতিরিক্ত আর্দ্রতা জমে না এবং পোকামাকড়ের আক্রমণও তুলনামূলকভাবে কম হয়। ফলে চারা স্বাস্থ্যবান থাকে এবং উৎপাদন ঝুঁকি কমে আসে।

সরেজমিনে সমেসপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, কোকোপিটে উৎপাদিত চারা সংগ্রহ করতে আশপাশের উপজেলা ছাড়াও দূরদূরান্ত থেকে কৃষকরা আসছেন। কেউ কিনছেন চারা, কেউ আবার এই নতুন পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। অনেক কৃষক ভবিষ্যতে নিজের জমিতেও এই পদ্ধতি প্রয়োগ করার পরিকল্পনা করছেন।

কোকোপিট পদ্ধতির সম্প্রসারণে মাঠপর্যায়ে কাজ করছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। একটি চলমান প্রকল্পের মাধ্যমে কৃষকদের প্রশিক্ষণ, কারিগরি সহায়তা ও নিয়মিত পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

বুড়িচং উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আফরিনা আক্তার বলেন, কোকোপিট পদ্ধতিতে উৎপাদিত চারার মান ভালো হয় এবং রোগবালাই কম থাকে। এই পদ্ধতি সম্প্রসারিত হলে কৃষকরা আর্থিকভাবে আরও লাভবান হবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

তিনি জানান, সমেসপুর ও তার আশপাশের গ্রামের শত শত কৃষক ইতোমধ্যে চারা উৎপাদনের মাধ্যমে স্বাবলম্বী হয়েছেন। কোকোপিট পদ্ধতি সেই সফলতাকে আরও টেকসই করবে। এতে একদিকে যেমন চারা উৎপাদনের মান ও পরিমাণ বাড়বে, অন্যদিকে কৃষকদের আয় বৃদ্ধি এবং আধুনিক কৃষি ব্যবস্থার প্রসারেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে এই উদ্যোগ।