বাসস
  ২১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৯:০৮

শান্তিরক্ষী মিশনে শহীদ কুড়িগ্রামের দুই সেনা সদস্যের শেষ বিদায়, এলাকায় শোকের মাতম

ছবি : বাসস

কুড়িগ্রাম, ২১ ডিসেম্বর, ২০২৫ (বাসস): জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে দায়িত্ব পালনকালে আফ্রিকার দেশ সুদানে প্রাণ হারানো কুড়িগ্রামের দুই সেনা সদস্যের মরদেহ নিজ নিজ গ্রামের বাড়িতে পৌঁছালে এক হৃদয়বিদারক ও আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। 

কান্না, আহাজারি আর গর্বের অশ্রুতে ভারী হয়ে ওঠে পুরো এলাকা। শান্তি প্রতিষ্ঠার মহান ব্রতে জীবন উৎসর্গ করা এই দুই বীর সন্তানকে শেষ বিদায় জানাতে মানুষের ঢল নামে এলাকায়।

আজ রোববার দুপুরে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি সামরিক হেলিকপ্টারে করে কুড়িগ্রাম জেলার উলিপুর উপজেলা হেলিপ্যাডে আনা হয় শহীদ সেনা সদস্য মো. মমিনুল ইসলাম ও শান্ত মণ্ডলের মরদেহ। হেলিপ্যাডে পৌঁছামাত্রই সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়। সেখানে জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি ও নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

পরে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে দুটি অ্যাম্বুলেন্সে করে শহীদ মো. মমিনুল ইসলামের মরদেহ উলিপুর উপজেলার উত্তর পকন্ডুল গ্রামে এবং শহীদ শান্ত মণ্ডলের মরদেহ রাজারহাট উপজেলার ছাট মাধাই গ্রামে নিয়ে যাওয়া হয়।

গ্রামে মরদেহ পৌঁছানোর পর শোকের দৃশ্য আরও হৃদয়বিদারক হয়ে ওঠে। প্রিয়জনের নিথর দেহ দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন স্বজনরা। হাজারো মানুষ শেষবারের মতো এক নজর দেখতে ভিড় করেন। পরে ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী ও রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে পূর্ণ সামরিক মর্যাদায় তাদের শেষ বিদায়ের কার্যক্রম সম্পন্ন হয়।

শহীদ মো. মমিনুল ইসলাম ২০০৮ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে সৈনিক পদে যোগদান করেন। দীর্ঘ কর্মজীবনে তিনি নিষ্ঠা ও সততার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন। চলতি বছর জাতিসংঘ শান্তি মিশনে যোগ দিয়ে সুদানে যান তিনি। দুই কন্যা সন্তানের জনক মমিনুলের অকাল মৃত্যুতে তার পরিবারে নেমে এসেছে গভীর শোক। বাবাকে হারিয়ে নির্বাক দুই শিশু, স্তব্ধ হয়ে যাওয়া স্ত্রী-এই দৃশ্য দেখে চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি কেউই। তার বাড়ি ও পুরো গ্রামজুড়ে বিরাজ করছে শোকের ছায়া।

অন্যদিকে শহীদ শান্ত মণ্ডল ২০১৮ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে সৈনিক পদে যোগ দেন। অল্প সময়েই একজন সাহসী ও কর্তব্যনিষ্ঠ সৈনিক হিসেবে সহকর্মীদের কাছে পরিচিত হয়ে ওঠেন। চলতি বছরের নভেম্বরে জাতিসংঘ শান্তি মিশনে সুদানে যান তিনি। সেখানে বিদ্রোহীদের বোমা হামলায় গুরুতর আহত হয়ে শেষ পর্যন্ত শহীদ হন শান্ত।

শান্ত মণ্ডলের ব্যক্তিগত জীবনের গল্প আরও বেদনাদায়ক। দুই বছর আগে দিলরুবা আক্তার বৃষ্টি নামের এক তরুণীর সঙ্গে তার বিয়ে হয়। পরিবারের সদস্যরা জানান, বর্তমানে বৃষ্টি পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা। স্বামীর মরদেহ দেখে বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন তিনি। অনাগত সন্তানের পিতৃহীন ভবিষ্যৎ ভাবিয়ে তুলছে সবাইকে।

শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে দেশের সীমানা পেরিয়ে সুদূর আফ্রিকার মাটিতে জীবন উৎসর্গ করা এই দুই বীর সেনা সদস্যের মৃত্যুতে কুড়িগ্রাম জেলা জুড়ে নেমে এসেছে গভীর শোক। একই সঙ্গে তাদের আত্মত্যাগে গর্বিত গোটা জাতি। এলাকাবাসী বলছেন, তারা শুধু নিজেদের পরিবারের নয়, পুরো দেশের গর্ব।