বাসস
  ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৮:৩৭

উন্নয়ন পরিকল্পনায় পরিবেশ, জীববৈচিত্র্য ও জনস্বাস্থ্যকে কেন্দ্রে রাখা উচিত : রিজওয়ানা

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন; পানি সম্পদ এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। ছবি : সংগৃহীত

ঢাকা, ১৭ ডিসেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন; পানি সম্পদ এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, উন্নয়ন পরিকল্পনায় পরিবেশ, জীববৈচিত্র্য ও জনস্বাস্থ্যের বিষয়গুলোকে কেন্দ্রস্থলে রেখে সমন্বিত ও দূরদর্শী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা জরুরি। 

তিনি বলেন, উন্নয়নের নামে পরিবেশ ও প্রতিবেশ ধ্বংস হলে তার চূড়ান্ত মূল্য সমাজকেই দিতে হয়। রাস্তা বা অবকাঠামো নির্মাণ করা সম্ভব হলেও একটি সুন্দরবন কিংবা একটি নদী নতুন করে সৃষ্টি করা যায় না। জলবায়ু পরিবর্তন, মহামারি ও পরিবেশগত সংকট আমাদের বারবার মনে করিয়ে দেয়-প্রকৃতির প্রতিটি উপাদান একে অপরের সঙ্গে গভীরভাবে সম্পর্কিত এবং মানুষ প্রকৃতির মালিক নয়, বরং এর অবিচ্ছেদ্য অংশ।

আজ বুধবার রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে অনুষ্ঠিত ‘ওয়ান হেলথ কার্যক্রম: সম্ভাবনা, চ্যালেঞ্জ এবং ভবিষ্যৎ কৌশল’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ সব কথা বলেন।

পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, ওয়ান হেলথ কার্যক্রম বাস্তবায়নে অতিরিক্ত প্রক্রিয়াভিত্তিক জটিলতা, আন্তঃমন্ত্রণালয় সমন্বয়ের ঘাটতি এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণে দীর্ঘসূত্রতা বড় প্রতিবন্ধকতা হিসেবে কাজ করছে। এসব সীমাবদ্ধতা দূর করতে জাতীয় ও জেলা পর্যায়ে কার্যকর পরামর্শক কমিটি গঠন এবং প্রতিটি মন্ত্রণালয়ে সুস্পষ্ট ফোকাল পয়েন্ট নির্ধারণ করা প্রয়োজন।

তিনি বলেন, জনবল বৃদ্ধি, অনলাইন প্রক্রিয়ার সম্প্রসারণ এবং পরিকল্পনা, জনপ্রশাসন ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সমন্বয়ের মাধ্যমে প্রকল্প বাস্তবায়নের গতি বাড়ানো সম্ভব। বাস্তব অভিজ্ঞতার আলোকে তিনি উল্লেখ করেন, অনেক ক্ষেত্রে পাঁচ বছর মেয়াদি প্রকল্পের বড় অংশ সময় শুধু জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়াতেই ব্যয় হয়ে যায়। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করে নতুন ও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি।

সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ওয়ান হেলথ কেবল একটি কারিগরি কাঠামো নয়; এটি একটি সামাজিক ও নৈতিক মূল্যবোধের বিষয়। কেন বন্যপ্রাণী রক্ষা করা প্রয়োজন এবং কেন প্রকৃতিনির্ভর উন্নয়ন অপরিহার্য এসব বিষয় সমাজের সর্বস্তরের মানুষের কাছে স্পষ্টভাবে তুলে ধরতে হবে। সামাজিক মূল্যবোধ জাগ্রত না হলে কোনো উন্নয়ন উদ্যোগই টেকসই হতে পারে না। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন, সরকার সক্ষমতা বৃদ্ধি, নীতিগত সংস্কার এবং কার্যকর সমন্বয়ের মাধ্যমে ওয়ান হেলথ কার্যক্রমকে আরো শক্তিশালী করতে আন্তরিকভাবে কাজ করবে।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেন, জনস্বার্থের সুরক্ষা বিবেচনায় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়; পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়সহ সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। 

সেমিনারে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তর ও সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বক্তব্য দেন। এ সময় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব আবু তাহের মুহাম্মদ জাবের, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব মো. সাইদুর রহমান, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো. আবু সুফিয়ান, আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক ডা. তাহমিনা শিরীন এবং বন অধিদপ্তরের উপপ্রধান বন সংরক্ষক মো. জাহিদুল কবির নিজ-নিজ বক্তব্যে সংশ্লিষ্ট খাতের অগ্রগতি, চ্যালেঞ্জ ও ভবিষ্যৎ করণীয় তুলে ধরেন।

উন্মুক্ত আলোচনা পর্বে বিভিন্ন বিভাগ ও সংস্থার প্রতিনিধিবৃন্দ বক্তব্য দেন।