শিরোনাম

মো. মামুন ইসলাম
রংপুর, ১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : যথাযোগ্য মর্যাদায় উৎসবমুখর পরিবেশে রংপুরে আজ মহান বিজয় দিবস উদযাপিত হয়েছে।
দিবসটি উপলক্ষ্যে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার হাজার হাজার মানুষ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মদানকারী বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে রংপুর পুলিশ লাইন্স মাঠে ৩১ বার তোপধ্বনির মধ্য দিয়ে দিনের কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক সূচনা হয়।
এরপর রংপুর টাউন হল চত্বরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শহীদদের স্মরণে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করা শুরু হয়।
শহীদ মিনারে প্রথমে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন রংপুরের বিভাগীয় কমিশনার মো. শহিদুল ইসলাম।
এরপর পর্যায়ক্রমে সেখানে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানান রংপুর সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক মো. আশরাফুল ইসলাম, রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি আমিনুল ইসলাম, মেট্রোপলিটন পুলিশের পুলিশ কমিশনার মো. মজিদ আলী, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ এনামুল আহসান এবং পুলিশ সুপার মো. মারুফাত হুসাইন।
এছাড়াও, মুক্তিযোদ্ধা সংসদের জেলা ইউনিট কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আনছার আলী, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) পক্ষে অধিনায়ক, আনসার ও ভিডিপির জেলা কমান্ডার, মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ড ইউনিট এবং ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের কর্মকর্তারা শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন দপ্তর, রাজনৈতিক দল, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠনগুলো পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে শহীদদের স্মরণ করে।
শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে বিভাগীয় কমিশনার সকাল ৯টায় রংপুরের শহীদ আবু সাঈদ স্টেডিয়ামে জাতীয় সংগীতের সাথে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন।
একই স্থানে তিনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীদের অংশগ্রহণে সমাবেশ, সুশৃঙ্খল কুচকাওয়াজ ও মনোজ্ঞ ডিসপ্লে প্রদর্শন ও সালাম গ্রহন করেন।
এরপর মহান বিজয় দিবস উদযাপন উপলক্ষ্যে জেলা শিল্পকলা একাডেমি অডিটোরিয়ামে বীর মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ পরিবার ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা পরিবারকে সংবর্ধনা প্রদান করা হয়।
উক্ত সংবর্ধনা অনুষ্ঠান ও আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রংপুরের বিভাগীয় কমিশনার মো. শহিদুল ইসলাম।
রংপুর জেলা প্রশাসন আয়োজিত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ এনামুল আহসান।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিভাগীয় কমিশনার মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মত্যাগের বিনিময়েই জাতি অর্জন করেছে তার সর্বশ্রেষ্ঠ অর্জন— স্বাধীনতা।
তিনি বলেন, স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে স্বাধীনতা রক্ষা করা অধিকতর কঠিন। এজন্য সুশাসন নিশ্চিতের পাশাপাশি একটি সুন্দর, সুখি ও সমৃদ্ধ দেশ গঠনে সবাইকে অঙ্গীকারাবদ্ধ হতে হবে।
তিনি জোর দিয়ে বলেন, যে শোষণ, নিপীড়ন ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল, তার যেন পুনরাবৃত্তি না ঘটে, এজন্য সবাইকে সজাগ থাকতে হবে।
দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা প্রসঙ্গে বিভাগীয় কমিশনার বলেন, রাজনৈতিক মতভেদ থাকলেও দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে ঐক্যবদ্ধ থাকার কোনো বিকল্প নেই।
তিনি সকল প্রকার বিভাজন ও হিংসা ভুলে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাইকে দেশের উন্নয়নে কাজ করার আহ্বান জানান।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি আমিনুল ইসলাম, মেট্রোপলিটন পুলিশের পুলিশ কমিশনার মো. মজিদ আলী, রংপুর সিটি কর্পোরেশন প্রশাসক মো. আশরাফুল ইসলাম এবং পুলিশ সুপার মো. মারুফাত হুসাইন।
এছাড়াও, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের জেলা ইউনিট কমান্ডের আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আনছার আলী ও রংপুর মহানগর কমান্ড কাউন্সিলের আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. নুর মোহাম্মদ মিয়া।
অনুষ্ঠানে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবারের সদস্য, জুলাই যোদ্ধা, শিক্ষার্থী, বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রতিনিধি ও সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠান শেষে বীর মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ পরিবার ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যদের হাতে সম্মাননা তুলে দেওয়া হয়।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠান শেষে মহান বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে রংপুর জিলা স্কুল মাঠে তিন দিনব্যাপী বিজয়মেলার উদ্বোধন করা হয়।
রংপুর জেলা প্রশাসন এবং বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশনের উদ্যোগে আয়োজিত মেলায় ১৩০টি স্টল স্থান পেয়েছে।
মেলা চলবে ১৬ ডিসেম্বর থেকে ১৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত।
কর্মসূচির মধ্যে ছিল সকল সরকারি ও বেসরকারি ভবনের উপরে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, প্রধান সড়ক দ্বীপ, রাস্তার পাশ এবং বিভিন্ন ভবনে জাতীয় পতাকা এবং রঙিন ফেস্টুন, ক্ষুদ্র পোস্টার এবং ব্যানার দিয়ে আলোকসজ্জা এবং সজ্জা।
মসজিদ, মন্দির, গির্জা, প্যাগোডা এবং অন্যান্য ধর্মীয় উপাসনালয়ে মুক্তিযুদ্ধ ও জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের আত্মার শান্তি, দেশ ও জনগণের অগ্রগতি ও কল্যাণ কামনা করে বিশেষ প্রার্থনা করা হয়।
হাসপাতাল, রংপুর কেন্দ্রীয় কারাগার, বয়স্ক নাগরিকদের আশ্রয়স্থল, দিবা-যত্ন ও শিশু কেন্দ্র, এতিমখানা, শিশু পরিবার এবং ভবঘুরে কেন্দ্রে উন্নত খাবার পরিবেশন করা হয়।
জেলা তথ্য অফিস সিনেমাহল এবং উন্মুক্ত স্থানে মুক্তিযুদ্ধের ওপর নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করে।