শিরোনাম

ঢাকা, ১২ ডিসেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ একটি দলকে ইঙ্গিত করে বলেছেন, ‘কিছুদিন পরে হয়তো বলবে তারাই একমাত্র মুক্তিযোদ্ধা।’
তিনি বলেন, কেউ কেউ ইনিয়ে-বিনিয়ে বলছে যে তারা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ছিল। আমরা মাঝেমধ্যে জিজ্ঞাসা করি, সেই মুক্তিযুদ্ধ কি পাকিস্তানের পক্ষে ছিল? জনগণের সামনে কিছুদিন পরে তারা হয়তো বলবে যে তারাই একমাত্র মুক্তিযুদ্ধ করেছিল, আমরা করিনি। এরকম অনেক বক্তব্য ভোটের ময়দানে শুনতে পাবো। কিন্তু বাংলাদেশের জনগণ অনেক সচেতন। এখন আর ধর্মের বড়ি বিক্রি করে বাংলাদেশের জনগণের সামনে ভোট চাওয়া যাবে না।
আজ শুক্রবার সকালে ঢাকার ফার্মগেটে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বিজয়ের মাস উপলক্ষে ‘দেশ গড়ার পরিকল্পনা’ শীর্ষক কর্মসূচি উদ্বোধন কালে সালাহউদ্দিন আহমেদ এসব কথা বলেন।
নির্বাচনি তফসিলে অনেকে ভারাক্রান্ত হলেও স্বাগত জানাতে বাধ্য হয়েছেন উল্লেখ করে বিএনপির এই সিনিয়র নেতা বলেন, গণতান্ত্রিক যাত্রাকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে শক্তিশালী করার জন্য গণতন্ত্রের উত্তরণ হতে হবে। সেই গণতান্ত্রিক উত্তরণের একটি সফল ঘোষণা গতকাল হয়েছে, যেটাকে আমরা তফসিল বলছি, নির্বাচনী তফসিল।
কোনো দলের নাম উল্লেখ না করে বিএনপির এই নেতা আরো বলেন, ‘কেউ কেউ বলেছে নো পিআর, নো ইলেকশন। কেউ কেউ বলেছে আগে স্থানীয় সরকার ইলেকশন, না হলে নো ইলেকশন। আর কেউ কেউ বলেছে একই দিনে গণভোট আর নির্বাচন হলে আমরা মানি না। আমি কারো নাম নিতে চাই না। তারা গণতন্ত্রের বিপক্ষের শিবির। তারা নিজেদের মতো করে গণতন্ত্র চায়। তাদের গণতন্ত্রের সংজ্ঞা আলাদা।’
আওয়ামী লীগের ভোটপ্রাপ্তির জন্য একটি দল তাদের বিরুদ্ধে টু শব্দ উচ্চরণ করছে না উল্লেখ করে সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, একটি দল আওয়ামী লীগের ভোট প্রাপ্তির জন্য আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে একটি শব্দও উচ্চারণ করে না। তবে আমরা যেন আওয়ামী লীগের দুঃশাসন ভুলে না যাই।
তিনি বলেন, ‘যারা নিজের দেশের নাগরিককে হেলিকপ্টার থেকে গুলি করে হত্যা করেছে, নারী-শিশুসহ শতসহস্র মানুষকে হত্যা করেছে, গণহত্যা চালিয়েছে, এই ইতিহাস যেন আমরা ভুলে না যাই। ৪৭ থেকে ৭১ যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে ছিল তাদের কথা আমাদের বলতে হবে। বাংলাদেশের মানুষ অনেক সচেতন, তাদের কাছে ধর্মের বড়ি বিক্রি করা যাবে না। কারন, বিএনপি ধর্মের নামে রাজনীতি ও বিভক্তি চায় না।’
গণ-অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা, বাংলাদেশের মানুষের মুক্তির আকাঙ্ক্ষা উল্লেখ করে সালাহউদ্দিন বলেন, ‘মানুষ গণতন্ত্রের মুক্তি চেয়েছে, হারানো মানবাধিকার ও মৌলিক অধিকারের মুক্তি চেয়েছে। যার সমষ্টিগত ফল চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান।’ এই অভ্যুত্থান শুধুমাত্র ৩৬ দিনের আন্দোলনের ফসল নয় দাবি করে তিনি বলেন, ‘২০০৯ থেকে ২৪ সাল পর্যন্ত বহু রক্ত দিতে হয়েছে। রক্তের সোপান মাড়িয়ে আমরা গণতন্ত্রের বিজয় ছিনিয়ে এনেছি।’
বিএনপির ৩১ দফা জাতির মুক্তির সনদের একটি নির্যাস বলে উল্লেখ করেন এই নেতা। তিনি বলেন, ‘যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদের নিয়ে আমরা যে ৩১ দফা প্রণয়ন করেছি তা বাংলাদেশের মহাকাব্যে পরিণত হয়েছে।’
সবাই অতীতের গণতান্ত্রিক সংগ্রামের কথা ভুলে যাচ্ছে জানিয়ে সালাহউদ্দিন বলেন, ‘আওয়ামী লীগের ভোট পাওয়ার আশায় একটি দল তাদের কুকীর্তি নিয়ে কথা বলে না।
বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়ে সম্প্রতি প্রকাশিত ‘শ্বেতপত্র’র কথা উল্লেখ করে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, আওয়ামী লীগ যে পরিমাণ টাকা তছরুপ করেছে, সেটা দিয়ে বাংলাদেশের দু’টি শিক্ষা বাজেট করা যায়। তিনটি স্বাস্থ্য বাজেট করা যায়।
তিনি বলেন, ব্যাংকিং ও নন-ব্যাংকিং ফিন্যান্সিয়াল সেক্টর থেকে যে লুটপাট হয়েছে, রাজনৈতিক বিবেচনায় যে ঋণ দেওয়া হয়েছে, যেটি তছরুপ হয়েছে, সেটা দিয়ে ২৪টি পদ্মা সেতু নির্মাণ করা যেত। ১৪টি মেট্রো সিস্টেম নির্মাণ করা যেত। বাংলাদেশ থেকে যে পরিমাণ অর্থ পাচার হয়েছে ব্যাংকিং লুটপাটের মধ্য দিয়ে, সেটা বিলিয়ন ডলারে না বলে বোধ হয় ২৯ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা বললে বুঝতে সহজ।
‘দেশ গড়া পরিকল্পনা’ শীর্ষক কর্মসূচির বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর সভাপতিত্বে ও যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেলের সঞ্চালনায় বিএনপির নেতারা অংশগ্রহণকারীদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখেন।
বিএনপি ক্ষমতায় গেলে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ক্রীড়া, ফ্যামিলি কার্ড, কৃষক কার্ড, কর্মসংস্থানসহ আটটি বিষয়ে কীভাবে কাজ করবে এ নিয়ে অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর জন্য ধারাবাহিক কর্মশালা বা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে বিএনপি। এই অনুষ্ঠান শুক্রবার বাদে আগামী ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে।
এতে যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, ওলামা দলসহ অন্য সহযোগী সংগঠন অংশ নিচ্ছে। বুদ্ধিজীবী দিবস ও বিজয় দিবসের বাইরে অন্য কোনো একটি দিনে হবে সমাপনী অনুষ্ঠান।