বাসস
  ১০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৩:১৪

গণঅভ্যুত্থানে সবচেয়ে বেশি রক্ত ঝরেছে বিএনপির ঘরেই: তারেক রহমান

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ফাইল ছবি

ঢাকা, ১০ ডিসেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানে সবচেয়ে বেশি রক্ত ঝরেছে বিএনপির ঘরেই।

আজ বুধবার সকালে মানবাধিকার দিবস উপলক্ষ্যে নিজের ভেরিফায়েড ফেইসবুক পেইজে দেওয়া এক পোস্টে তিনি এ মন্তব্য করেন।

১৬টা বছর ধরে বাংলাদেশ যেন একটা কালো মেঘের নিচে চাপা পড়ে ছিল উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, ‘কেউ সেই অন্ধকারকে খুব তীব্রভাবে টের পেয়েছে, কেউ চুপচাপ বয়ে বেড়িয়েছে। কিন্তু যাদের রাজনৈতিক অবস্থান তখনকার পতিত সরকারের বিপরীতে ছিল, তাদের জন্য এই অন্ধকার ছিল নিত্যদিনের বাস্তবতা। রাতের বেলা দরজায় কড়া নাড়া, মিথ্যা মামলা, নির্যাতন, ভয়কে সংস্কৃতি বানিয়ে ফেলা, আর অসংখ্য পরিবার অপেক্ষা করেছে সেই প্রিয়জনদের জন্য, যারা আর কোনোদিন ঘরে ফিরে আসেনি।’

তারেক রহমান বলেন, এই বোঝা বিএনপির চেয়ে বেশি আর কেউ বহন করেনি। বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম, হেফাজতে মৃত্যু, মিথ্যা মামলা— সবক্ষেত্রেই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা। ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানেও সবচেয়ে বেশি রক্ত ঝরেছে বিএনপির ঘরেই।

তিনি বলেন, ‘অত্যাচারের শিকার শুধু বিএনপি ছিল না; ছাত্র, সাংবাদিক, লেখক, পথচারী, সাধারণ মানুষ— সবাই সেই ভয়ংকর পরিবেশের ক্ষত বহন করেছে। ন্যূনতম মানবাধিকার হিসেবে বিবেচিত মর্যাদা, নিরাপত্তা, মত প্রকাশের অধিকার এর মত মৌলিক সব বিষয়গুলো ছিল হুমকির মুখে।’

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জানান, দীর্ঘদিন তাকে নিজের বক্তব্য প্রকাশের অধিকার থেকেও বঞ্চিত রাখা হয়েছিল। ২০১৫ সাল থেকে তার কথা বলার অধিকার সম্পূর্ণভাবে কেড়ে নেওয়া হয়। দেশের কোনো পত্রিকা, টিভি বা সোশ্যাল মিডিয়ায় যেন তার বক্তব্য প্রচার না হয়, এমন নির্দেশনা ছিল। তবুও চাপিয়ে দেওয়া নীরবতার মধ্যেও তিনি অধিকার, গণতন্ত্র ও মানুষের ন্যায্য দাবির পক্ষে লড়ে গেছেন।

সত্যের স্পিরিটকে আদেশ দিয়ে থামানো যায় না বলেও জানান তিনি।

তিনি জানান, এই পুুরো অন্ধকার সময়টায় খালেদা জিয়া ছিলেন ধৈর্য ও প্রতিরোধের সবচেয়ে বড় প্রতীক। মিথ্যা মামলা, কারাবাস, রাজনৈতিকভাবে নিঃশেষ করার চেষ্টা, এসবই ছিল দেশজুড়ে চাপিয়ে দেওয়া কর্তৃত্ববাদী শাসনের প্রতিফলন। তবুও তিনি তার গণতান্ত্রিক আদর্শ থেকে সরে যাননি।

তারেক রহমান বিশ্বাস করেন, অধিকার সবার; তাই ভয় দেখিয়ে দেশকে এগোনো যায় না।

পোস্টে তারেক রহমান লেখেন, ব্যক্তিগতভাবেও তিনি সেই সময়ের যন্ত্রণা দেখেছেন। তার মা খালেদা জিয়া নিজ ছেলেকে জেলে নেওয়ার মানসিক যন্ত্রণা সহ্য করেছেন। আরেক ছেলেকে তিনি হারিয়েছেন চিরতরে।

তিনি বলেন, কিন্তু ইতিহাসের একটা সত্য আছে, কষ্ট মানুষকে সবসময় তিক্ত করে না। কখনো কখনো কষ্ট মানুষকে আরও মহান করে তোলে। দেশনেত্রী, আমার মা- এটাই প্রমাণ করেছেন। তিনি শিখিয়েছেন যে অন্যায় আমরা সহ্য করেছি, তা যেন আর কারও জীবনে না আসে। দেশকে বদলাতে হলে, ঘৃণার পথ নয় বরং ন্যায়, নৈতিকতা আর ক্ষমাশীলতার পথই ভবিষ্যৎ গড়ে।

তারেক রহমান বলেন, আজ বাংলাদেশের প্রয়োজন রাজনীতির চেয়েও বড় কিছু; একটি ঐক্যবদ্ধ দেশ, যেখানে সবার মানবাধিকার নিশ্চিত করা হবে। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা থাকবে, বিরোধী মতকে হুমকি মনে না করে বরং গণতন্ত্রের অংশ মনেকরা হবে। ভিন্ন মতের কারণে কেউ নিপীড়নের শিকার হবে না বা গুম হবে না।

বিএনপি প্রতিশোধের রাজনীতি প্রত্যাখ্যান করছে উল্লেখ করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, আমরা সমাধানের পথে বিশ্বাসী। আমরা এই প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি যে, কোনো বাংলাদেশিকে রাষ্ট্রের ভয়ে বাঁচতে হবে না, তা সে সরকারের সমর্থক হোক বা বিরোধী।

মানবাধিকার দিবসের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই দিনটি মনে করিয়ে দেয়— মানবাধিকারই মানুষের দৈনন্দিন বেঁচে থাকার মৌলিক শর্ত। আবরার ফাহাদ, মুশতাক আহমেদ, ইলিয়াস আলী, সাজেদুল ইসলাম সুমন, সাগর-রুনির মতো আরও অসংখ্য শহীদের গল্প মনে রাখতে হবে, যেন ভবিষ্যতে এমন নিপীড়ন ও দায়মুক্তি আর কখনো ফিরে না আসে।

তারেক রহমান জানান, বিএনপি মারাত্মক ক্ষতির মধ্যেও ভেঙে যায়নি। সত্য, ন্যায়, জবাবদিহি, পুনর্মিলন এবং আইনের শাসনে বিশ্বাস রেখে আরও দৃঢ় হয়েছে। তারা এমন বাংলাদেশ গড়তে চায় যেখানে প্রতিটি মানুষের কণ্ঠ, অধিকার ও জীবন মূল্যবান। সেখানে মানবাধিকারই হবে ভবিষ্যতের ভিত্তি।