শিরোনাম

ঢাকা, ৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : বিশ্বব্যাপী মানবিক সংকট মোকাবিলায় সোমবার ২০২৬ সালের মানবিক সহায়তার জন্য আবেদন শুরু করেছে জাতিসংঘ। একই সঙ্গে অর্থ সংকটে কার্যক্রম সীমিত করতে হচ্ছে সংস্থাটির।
জাতিসংঘ সমালোচনা করে বলেছে, বিশ্বব্যাপী ব্যাপক দুর্ভোগের মুখেও বৈশ্বিক ‘উদাসীনতা’ বাড়ছে।
জাতিসংঘ সদর দপ্তর থেকে এএফপি এ খবর জানায়।
জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা প্রধান টম ফ্লেচার সাংবাদিকদের বলেন, ‘এটি পাশবিকতা, দায়মুক্তির সংস্কৃতি এবং উদাসীনতার সময়।’
এ সময় তিনি ২০২৫ সালে মাঠে থেকে দেখা ‘হিংস্রতা ও হত্যাযজ্ঞের ভয়াবহতা, আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি সম্পূর্ণ অবজ্ঞা এবং যৌন সহিংসতার ভয়াবহ মাত্রা’র নিন্দা জানান।
তিনি বলেন, ‘এই সময়ে নিয়ম-কানুন পিছু হটছে, সহাবস্থানের কাঠামো প্রতিনিয়ত আক্রমণের শিকার হচ্ছে। অন্যদিকে, মনোযোগ সরিয়ে নেওয়ার কারণে এবং উদাসীনতার জেরে আমাদের টিকে থাকার বোধ ভোঁতা হয়ে গেছে।’
ফ্লেচার বলেন, এই সময়ে ‘রাজনীতিবিদেরা সহায়তা কমিয়ে বড়াই করছেন।’
এই মন্তব্যের পরই তিনি বিশ্বব্যাপী গাজা, ইউক্রেন, সুদান, হাইতি এবং মিয়ানমারের মতো সবচেয়ে বিপজ্জনক এলাকাগুলোতে ৮ কোটি ৭০ লাখ মানুষকে সাহায্য করার জন্য কমপক্ষে ২ হাজার ৩০০ কোটি ডলার সংগ্রহের একটি সুসংগঠিত পরিকল্পনা প্রকাশ করেন।
জাতিসংঘের লক্ষ্য ২০২৬ সালে ১৩ কোটি ৫০ লাখ মানুষকে সাহায্য করার জন্য ৩ হাজার ৩০০ কোটি ডলার সংগ্রহ করা। তবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিদেশি সহায়তা কমিয়ে দেওয়ায় এ লক্ষ্য অর্জন কঠিন হবে বলে আশঙ্কা করছে সংস্থাটি।
ফ্লেচার আশা করেন, সংস্কার ও কার্যকারিতা দেখে আবারও যুক্তরাষ্ট্র ‘সাহায্য করার অঙ্গীকার নবায়ন করবে।’
জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, সংঘাত, মহামারি, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্ত ২৪ কোটি মানুষের জরুরি সহায়তা প্রয়োজন।
জাতিসংঘ জানিয়েছে, ২০২৫ সালে তারা ৪৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি সহায়তার আবেদন করেছিল, কিন্তু তহবিলের যোগান ছিল মাত্র ১২ বিলিয়ন ডলার, যা এক দশকের মধ্যে সর্বনিম্ন।
এর ফলে সংস্থাটি শুধুমাত্র ৯ কোটি ৮০ লাখ মানুষকে সাহায্য করতে পেরেছিল, যা আগের বছরের তুলনায় ২ কোটি ৫০ লাখ কম।
জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্র এখনো বিশ্বের সবচেয়ে বড় মানবিক সহায়তা দাতা। কিন্তু ২০২৫ সালে এই পরিমাণ ১১ বিলিয়ন ডলার থেকে নাটকীয়ভাবে কমে ২.৭ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে।
২০২৬ সালের অগ্রাধিকার তালিকায় শীর্ষে রয়েছে গাজা ও পশ্চিম তীর। সেখানে ৩০ লাখ মানুষকে সহায়তা দিতে ৪.১ বিলিয়ন ডলার চাওয়া হয়েছে।
সুদানও জরুরি সহায়তার তালিকায় রয়েছে। প্রাণঘাতী সংঘাতে লাখো মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। দেশটিতে ২ কোটি মানুষকে সহায়তা দিতে ২.৯ বিলিয়ন ডলার সংগ্রহের আশা করছে জাতিসংঘ।
সুদানের পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর এল-ফাশের থেকে পালিয়ে আসা এক তরুণীর অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন ফ্লেচার। তিনি বলেন, ওই নারী তার স্বামী ও সন্তানকে খুন হতে দেখেছেন। প্রতিবেশীর অপুষ্ট শিশুকে নিয়ে তিনি ‘বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক পথ’ ধরে তাভিলায় পালিয়ে যান। পথে তাকে আক্রমণ, ধর্ষণ এবং পা ভেঙে দেওয়া হয়। তবু তিনি বেঁচে থাকার লড়াই চালিয়ে যান।
ফ্লেচার প্রশ্ন রাখেন, ‘যেখানেই থাকুন, যা-ই বিশ্বাস করুন, যেভাবেই ভোট দিন—কেউ কি মনে করেন না যে আমাদের তার পাশে থাকা উচিত?’
জাতিসংঘ আগামী ৮৭ দিনের মধ্যে সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে অর্থ দিতে আহ্বান জানাবে। যা দিয়ে প্রতিদিন ১০ লাখ মানুষকে সহায়তা করা হবে।
আর যদি জাতিসংঘ এই লক্ষ্য পূরণে ব্যর্থ হয়, তবে ফ্লেচার ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন যে তারা এই প্রচারণাকে আরও বিস্তৃত করবে। তখন তারা সুশীল সমাজ, কর্পোরেট জগৎ এবং সাধারণ মানুষের কাছে আবেদন জানাবে। কারণ, সাধারণ মানুষের মাঝে ভুল তথ্য ছড়ানো হচ্ছে যে তাদের ট্যাক্সের অর্থ সব বিদেশে চলে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘আমরা বিশ্বের অস্ত্র ও প্রতিরক্ষা খরচের মাত্র এক শতাংশ চাইছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি ব্রুকলিনের হাসপাতাল আর কান্দাহারের হাসপাতালের মধ্যে বেছে নিতে বলছি না। আমি চাই বিশ্ব প্রতিরক্ষা খরচ কমিয়ে মানবিক সহায়তায় বেশি ব্যয় করুক।’