শিরোনাম

\ শফিকুল ইসলাম বেবু \
কুড়িগ্রাম, ৭ ডিসেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : উত্তরের সীমান্ত জেলা কুড়িগ্রামে শীতের তীব্রতা আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে। টানা চার দিন ধরে জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে গেছে, যা চলতি মৌসুমে সর্বনিম্ন।
আজ রোববার ভোর ৬টায় রাজারহাট কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১২.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাতাসের আর্দ্রতা ছিল প্রায় ৯৯ শতাংশ, ফলে শীতের অনুভূতি ছিল আরও তীব্র।
আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র জানান, আগামী সাত দিন একই ধরনের আবহাওয়া বিরাজ করতে পারে। তবে আপাতত কোনো শৈত্যপ্রবাহের আশঙ্কা নেই।
গত এক সপ্তাহে তাপমাত্রার ওঠানামা ছিল খুব সামান্য। গতকাল শনিবার ছিল তাপমাত্রা ১২.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস, এর আগের দিন শুক্রবারে ছিলে ১৩.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস আরও বৃহস্পতিবার ছিল ১২.৪ ডিগ্রি। তবে তাপমাত্রা লাগাতার ১২ থেকে ১৩ ডিগ্রির মধ্যে থাকলেও কুড়িগ্রামের ভৌগোলিক অবস্থান ও বাতাসের গতির কারণে শীতের মাত্রা বেশি অনুভূত হচ্ছে।
সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, ঘন কুয়াশায় ঢেকে আছে কুড়িগ্রাম জেলা শহরসহ আটটি উপজেলার বিভিন্ন এলাকা। দৃষ্টিসীমা মাত্র ২০-৩০ মিটারে নেমে আসায় মহাসড়কগুলোতে যানবাহন চলাচল করছে ধীরগতিতে। অনেক চালক হেডলাইট জ্বালিয়ে রীতিমতো সতর্ক হয়ে গাড়ি চালাচ্ছেন।
এছাড়া রাস্তা-ঘাটে মানুষের চলাচলও কমে গেছে। প্রয়োজন ছাড়া কেউ বাইরে বের হচ্ছেন না। সবচেয়ে বিপাকে পড়েছেন দিনমজুর, রিকশা ও ভ্যানচালক, কৃষিশ্রমিকসহ নিম্ন আয়ের মানুষ। শীতের কারণে ভোরের কাজকর্ম বাধাগ্রস্ত হওয়ায় তাদের দৈনিক আয় কমে গেছে। অনেকেই কম দামে কাজ করতে বাধ্য হচ্ছেন।
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার হলোখানা ইউনিয়নের সারোডোব এলাকার দিনমজুর দুলাল হোসেন জানান, ঠান্ডায় কাজ করা যায় না, আবার কাজ না করলে ঘরে খাবার থাকে না—দুই দিকেই কষ্ট।
এদিকে শীতের কারণে স্বাস্থ্যসেবায় চাপ বাড়ছে। জেলা সদর হাসপাতাল, উলিপুর, নাগেশ্বরী, চিলমারী ও ভুরুঙ্গামারী, রৌমারী, রাজিবপুর,রাজারহাট, ফুলবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা প্রতিদিন বাড়ছে।
চিকিৎসকদের মতে, শিশু ও বয়স্কদের মধ্যে সর্দিকাশি, জ্বর, নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া এবং শ্বাসকষ্টের উপসর্গ বাড়ছে। চিকিৎসকরা বলছেন, শীত যত বাড়ছে শিশুদের অবস্থা তত নাজুক হয়ে পড়ছে। অভিভাবকদের আরও সতর্ক হতে হবে।
কিন্তু সবচেয়ে কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছেন জেলার চরাঞ্চলের মানুষ। কুড়িগ্রামের ব্রহ্মপুত্র, ধরলা ও তিস্তাপাড়ের বিস্তীর্ণ চর এলাকায় খোলা পরিবেশে হিমেল বাতাসের দাপট অনেক বেশি। চরের বেশিরভাগ ঘরই খোলা বা অস্থায়ী, ফলে রাতে আগুন জ্বালিয়েও ঠান্ডা কমছে না। অনেক পরিবার পর্যাপ্ত শীতবস্ত্রের অভাবে ভুগছে। শিশু ও বৃদ্ধদের অবস্থাই সবচেয়ে নাজুক।
চরের বাসিন্দারা জানিয়েছেন, সরকারি শীতবস্ত্রসহ ত্রাণ সহায়তা এখনো পৌঁছেনি।
উলিপুর উপজেলার হাতিয়া ইউনিয়নের ব্রহ্মপুত্র বিচ্ছিন্ন চর গুজিমাড়ির আব্দুর রশিদ (৫৫) জানান, এখানে একবার ঠান্ডা নামলে আর সামলানো যায় না। বাজারে গরম কাপড়ের চাহিদা বাড়ায় দামও বেড়ে গেছে। নিম্ন আয়ের লোকজনের পক্ষে গরম কাপড় কেনা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আবহাওয়া অফিস বলছে, আগামী সপ্তাহেও ভোর থেকে সকাল পর্যন্ত ঘন কুয়াশা থাকবে। দুপুরে কিছুটা রোদ দেখা গেলেও বিকেলে আবার ঠান্ডা বেড়ে যাবে। বাতাসের আর্দ্রতা বেশি থাকায় শীত অনুভূতি আরও তীব্র থাকবে।
শীতের তীব্রতায় সাধারণ মানুষের জনদুর্ভোগ বাড়ছে। স্থানীয়রা বলছেন, দ্রুত ত্রাণ সহায়তা বাড়ানো উচিত। চিকিৎসকরা শীতপ্রবণ এলাকায় সচেতনতা এবং সহায়তা কার্যক্রম জোরদারের পরামর্শ দিয়েছেন।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আব্দুল মতিন জানিয়েছেন, শীতবস্ত্র বিতরণের কার্যক্রম দ্রুত শুরু হবে।