বাসস
  ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৮:৩০

নাটোরে সম্ভাবনাময় ব্রি ধান-১০৩ চাষে সফলতা  

ছবি : বাসস

 ফারাজী আহম্মদ রফিক বাবন

নাটোর, ৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : ব্রি ধান-১০৩ চাষে সফলতা পাওয়া গেছে নাটোরে। স্বল্প জীবন চক্রের সরু জাতের উচ্চ ফলনশীল আমন মৌসুমের এই ধান খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আশার আলো হয়ে উঠেছে।

বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত ব্রি-১০৩ জাতের ধান গত আমন মৌসুমে জেলায় পরীক্ষামূলক আবাদ করা হয়। আশাব্যঞ্জক ফলাফল পাওয়ায় চলতি মৌসুমে বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় কৃষি বিভাগ এই ধানের প্রদর্শনী খামার তৈরি। এর মধ্যে পার্টনার প্রকল্প উল্লেখযোগ্য। 

এই প্রকল্পের আওতায় জেলার সাতটি উপজেলায় দুই একর করে জমিতে বীজ ও সার সরবরাহ করে প্রদর্শনী খামার তৈরি করা হয়। বিভিন্ন প্রকল্পের প্রদর্শনী খামার ছাড়াও ব্যক্তি পর্যায়ে কৃষকরা আগ্রহী হয়ে এই ধান আবাদ করেন। জেলায় মোট ৭৩৩ হেক্টর জমিতে ব্রি-১০৩ জাতের ধান আবাদ হয়। 

বড়াইগ্রাম উপজেলার মালিপাড়া ব্লকের রাথুনিয়া গ্রামের কৃষক তারিক হোসেন জানান, ‘আমি জুলাই মাসে বীজতলা তৈরি করি। বীজতলায় চারা তৈরি করতে ২৮ দিন সময় ব্যয় হয়। এরপর জমিতে চারা রোপণ করে ১৩২ দিনেই ধান পরিপক্ব হয়। চার বিঘা জমিতে ধান আবাদ করি। বিঘা প্রতি ফলন পেয়েছি ২২ মণ। যেখানে অন্য জাতের আমন ধানের গড় ফলন ১৮ মণ।’

একই উপজেলার রাজাপুর ব্লকের গোপালপুর গ্রামের কৃষক মাসুদ রানা বলেন, ‘আমি এবারই প্রথম ব্রি-১০৩ জাতের ধান আবাদ করি। আবাদি জমির পরিমাণ ছয় বিঘা। ব্লাস্টসহ অন্যান্য পোকামাকড়ের আক্রমণ কম ছিলো, তাই সার-কীটনাশক অল্প পরিমাণে ব্যবহার করেছি। তবে প্রচলিত আমন ধানের চেয়ে ফলন বেশী। আমি প্রতি বিঘায় ২৩ মণ করে ফলন পেয়েছি।’

উপজেলার বনপাড়া কৃষি ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সেলিম রেজা জানান, ব্রি-১০৩ জাতের আমন ধানের প্রদর্শনী খামার ছিলো আশপাশের কৃষকদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু। তারা এই ধান চাষ গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করেছেন, আগামীতে এই ধান চাষে আগ্রহ দেখিয়েছেন। 

সিংড়া উপজেলার হাতিয়ানদহ গ্রামের কৃষক মো.জহির বলেন, আমি ব্রি-১০৩ জাতের ধান আবাদ করে বিঘা প্রতি ২২ মণ ফলন পেয়েছি। সরু-চিকন চাল হওয়াতে বাজারে ভালো দর পাওয়া যাবে। গাছের উচ্চতা তুলনামূলকভাবে বেশী। ফলে খড়েরও ভালো দর পাওয়া যাবে।

সিংড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা খন্দকার ফরিদ হাসান বলেন, ব্রি ধান-১০৩ জাতের তিনটি প্রদর্শনী খামার পার্টনার প্রকল্পের আওতায় উপজেলায় করা করা হয়েছিল। প্রতিটি প্রদর্শনী খামার যেন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে পরিণত হয়েছিল। খামারের আশপাশ থেকে শত শত কৃষক এই ধানের আবাদ পর্যবেক্ষণ করেছেন, তারা আগামীতে এই ধান চাষে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। এই ধান হবে দ্রুত সম্প্রসারণশীল।

বড়াইগ্রাম উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সজীব আল মারুফ বলেন, ব্রি-১০৩ জাতের ধান অত্যন্ত সম্ভাবনাময়। প্রদর্শনী খামার থেকে আহরিত ধান থেকে বীজ তৈরিতে উদ্বুদ্ধ করছি আমরা-যেন আগামীতে এই ধানের ব্যাপক আবাদ করে কৃষকরা লাভবান হতে পারেন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর নাটোর জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. হাবিবুল ইসলাম খান বাসসকে বলেন, ব্রি-ধানের গড় ফলন ২২ থেকে ২৫ মণ। উচ্চ ফলনশীল ছাড়াও জীবন চক্র সংক্ষিপ্ত। তাই কৃষকরা এই ধান সংগ্রহের পরে আগাম সরিষা বা পেঁয়াজ-রসুন আবাদ করে লাভবান হতে পারবেন। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এই ধানে অপার সম্ভাবনা রয়েছে।