বাসস
  ০৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৪:৫৭

কুড়িগ্রামে শীতের তীব্রতার সঙ্গে বেড়েছে মানুষের কষ্ট

ছবি : বাসস

শফিকুল ইসলাম বেবু 

কুড়িগ্রাম, ৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : দেশের উত্তরাঞ্চলে শীত জেঁকে বসেছে। কুড়িগ্রাম জুড়েও হিমেল হাওয়া আর ঘন কুয়াশায় জনজীবনে ভোগান্তি নেমেছে। শৈত্যপ্রবাহ না হলেও দ্রুত বাড়ছে শীতের তীব্রতা। এতে কর্মহীন দিন পার করছেন চরাঞ্চলের মানুষ। 

রাজারহাট কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার জানায়, আজ বৃহস্পতিবার জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ১২ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বৃষ্টির মতো শিশিরে ভিজে যাচ্ছে ঘরবাড়ি ও ক্ষেতখামার। শীতের দাপটে বেশি কষ্টে পড়েছেন চরাঞ্চলবাসী।

কুড়িগ্রামের ১৬টি নদ নদীর তীরবর্তী ৪৬৯টি চরে বসবাসকারী সাড়ে পাঁচ লাখ মানুষ শীতে কষ্ট পোহাচ্ছেন। নিত্যদিনের স্বাভাবিক কাজ-কর্ম ব্যাহত হচ্ছে তাদের। শীতের কারণে অনেকে জীবিকার কাজে বের হতে পারছেন না তারা। দইখাওয়ার চর, চরগুজিমারি, দাগারকুটি, অষ্টমীর চর, সুখের বাতি, চর বিদ্যানন্দসহ অধিকাংশ এলাকাতে শীতের তীব্রতা কয়েকগুণ বেশি।

কুড়িগ্রাম সদরের যাত্রাপুর ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কালীর আলগা চরের মেম্বার হোসেন আলী জানান, তার এলাকায় ৫ শতাধিক মানুষ শীতবস্ত্রের অভাবে মারাত্মক সমস্যায় পড়েছেন।

কুড়িগ্রাম সদরের যাত্রাপুর ইউনিয়নের ব্রহ্মপুত্র বিচ্ছিন্ন গোয়াইলপুরী চরের ৬৮ বছরের কালু মিয়া জানান, দিন যত যাচ্ছে, শীত তত বাড়ছে। রাতে মনে হয় শরীরটা জমে যায়। ঘরে কাঁথা নাই, আগুন ধরাইয়া গরম হইতে যাই—ধোঁয়ায় চোখ জ্বালা করে, তবুও উপায় নাই।

একই চরের ৫৬ বছরের গৃহবধূ আনোয়ারা বেগম বলেন, শীতের সময়টা আসলেই আমাদের দুর্দশা শুরু হয়। কাপড়-চোপড়ের অভাবে বাচ্চাগোর ঠান্ডা লাগে। এখনো কেউ কিছু দেয় নাই। আমরা কি বাঁচুম না মরুম, কেউই খোঁজ নেয় না।

একই চরের দিনমজুর যুবক রহমত আলী বলেন, শীতের কারণে কাজই পাই না। দিন গেলে মনে হয়, আজ বাচ্চাদের কি খাওয়ামু? শীত তো লাগছেই, সঙ্গে লাগতেছে  খাইবার কষ্ট।

রাজারহাট কৃষি আবহাওয়ার কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র সরকার বলেন, আগামী সাত দিন তাপমাত্রা ১২ ডিগ্রির আশপাশে থাকবে। চরাঞ্চলে শীতের অনুভূতি আরও বাড়তে পারে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, শীতের প্রকোপ বাড়ছে প্রতিদিন কিন্তু গরম কাপড় এখনো অনেকের ঘরে পৌঁছায়নি। দ্রুত পর্যাপ্ত শীতবস্ত্র, চিকিৎসা সহায়তা এবং খাদ্য সহায়তা জরুরি বলে জানিয়েছেন তারা।

কুড়িগ্রাম জেলা চর উন্নয়ন কমিটির সভাপতি অধ্যাপক শফিকুল ইসলাম বেবু জানান, জেলার ২৩ লাখ ২৯ হাজার মানুষের মধ্যে প্রায় ১৬ লাখ ৪৯ হাজার মানুষ দরিদ্র। এদের বড় অংশই দুর্গম চরাঞ্চলে থাকায় শীতের সময় তাদের দুর্ভোগ কয়েকগুণ বেড়ে যায়। শীতার্ত মানুষের পাশে দাঁড়াতে জেলা প্রশাসন ও বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানাই।

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক অন্নপূর্ণা দেবনাথ বলেন, শীতবস্ত্রে জেলায় ৫৪ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ৯ উপজেলায় শীতবস্ত্র বিতরণের নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ৮০ হাজার কম্বল চেয়ে মন্ত্রণালয়ে পত্র পাঠানো হয়েছে। চরবাসীসহ জেলার অসহায় শীতার্ত মানুষের শীত নিবারণে জেলা প্রশাসনের নজর রয়েছে।