শিরোনাম

রাজশাহী, ৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : কৃষকের স্বাস্থ্য, জীববৈচিত্র্য এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে রক্ষায় বিপজ্জনক কীটনাশক বাজারজাতকরণ ও বিক্রির বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন সামাজিক তদারককারী ও উন্নয়নকর্মীরা।
আজ বুধবার রাজশাহীর সাহেব বাজার জিরো পয়েন্টে মানববন্ধন এবং পথসভায় বক্তারা এ আহ্বান জানান।
পথসভায় বক্তারা বরেন্দ্র অঞ্চলে বিপজ্জনক কীটনাশকের বিস্তৃত ব্যবহারের ফলে জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের ওপর গুরুতর ঝুঁকির বিষয়টি তুলে ধরেন।
সভায় উপস্থিত অনেক গ্রাম পর্যায়ের পুরুষ ও নারী কৃষক বলেন, কীটনাশক প্রয়োগের পর তাৎক্ষণিকভাবে স্বাস্থ্য জটিলতা দেখা দেয় এবং দীর্ঘমেয়াদি এসব কীটনাশকের সংস্পর্শের ফলে বড় ধরনের রোগের ঝুঁকি থাকে।
নিষিদ্ধ কীটনাশকগুলো এখনো বিভিন্ন নামে বাজারে পাওয়া যাচ্ছে এবং এসব কীটনাশক ব্যবহারের ফলে জীববৈচিত্র্য হ্রাস পাচ্ছে।
গবেষণাভিত্তিক উন্নয়ন সংস্থা বাংলাদেশ রিসোর্স সেন্টার ফর ইন্ডিজিনাস নলেজ (বারসিক) এ মানববন্ধন এবং পথসভার আয়োজন করে। কীটনাশক মুক্ত দিবস উপলক্ষে আজ তারা চারটি মূল দাবি তুলে ধরেছে।
পথসভাকে সফল করতে সহযোগিতায় ছিল- গ্রিন কোয়ালিশন, বরেন্দ্র উন্নয়ন ফোরাম, যুব সমাজ কল্যাণ সংগঠন ও বরেন্দ্র যুব সংস্থা।
দিবসটির মূল প্রতিপাদ্য হলো—সভ্যতার জন্য অন্ধকার গলি কীটনাশক। দিবসটিতে ১৯৮৪ সালের ভোপাল রাসায়নিক দুর্ঘটনাকে স্মরণ করা হয় এবং বিপজ্জনক কীটনাশকের বিষাক্ত প্রভাবমুক্ত ভবিষ্যতেরও আহ্বান জানানো হয়।
বারসিক আঞ্চলিক সমন্বয়কারী শহিদুল ইসলাম ধারণা পত্র পাঠ করেন, যেখানে বিপজ্জনক কীটনাশক ব্যবহারের বিভিন্ন ক্ষতিকর প্রভাব তুলে ধরা হয়।
সভায় বক্তব্য দেন ওয়াইএএসসি’র সাধারণ সম্পাদক আতিকুর রহমান, জুলাই আন্দোলনের সমন্বয়ক মাহমুদ জামাল কাদেরী, আদিবাসী যুব পরিষদের সভাপতি উপেন রবিদাস, জাতীয় আদিবাসী পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক সুভাষ চন্দ্র হেমব্রম, কৃষক রহিমা বেগম, মিজানুর রহমান এবং রেনুকা বেগম প্রমুখ।
শহিদুল ইসলাম বলেন, বরেন্দ্র অঞ্চলে কৃষিতে বিপজ্জনক কীটনাশকের বিস্তৃত এবং প্রায় অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য গুরুতর হুমকি সৃষ্টি করছে। তিনি উল্লেখ করেন, অনেক গ্রামীণ কৃষক কীটনাশক প্রয়োগের সময় হাঁচি, চুলকানি, মাথা ঘোরা এবং মাথাব্যথার মতো তাৎক্ষণিক স্বাস্থ্য সমস্যা অনুভব করেন।
তিনি আরও বলেন, দীর্ঘমেয়াদি সংস্পর্শের ফলে ক্যানসার, হরমোন পরিবর্তন, স্নায়বিক সমস্যা এবং প্রজনন সংক্রান্ত জটিলতা দেখা দেয়।
আতিকুর রহমান বলেন, খাদ্যে—বিশেষ করে শাকসবজিতে কীটনাশক ব্যবহার গুরুতর ঝুঁকি তৈরি করছে।
কারণ, অনেক কৃষক নির্ধারিত নিয়ম মানেন না। শিশু এবং গর্ভবতী নারীরা বিশেষভাবে ঝুঁকিতে রয়েছে। কারণ, এই রাসায়নিক তাদের শরীরে বিরূপ প্রভাব ফেলে।
উপেন রবিদাস বলেন, কীটনাশক ভূগর্ভস্থ এবং ভূ-পৃষ্ঠের পানির উৎস দূষিত করছে, যা পানীয় জল এবং জলজ পরিবেশকে প্রভাবিত করছে। তিনি সতর্ক করে বলেন, মাটিতে কীটনাশকের দীর্ঘস্থায়ী উপস্থিতি মাটির স্বাস্থ্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে এবং উদ্ভিদের বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত করছে।
তিনি বরেন্দ্র অঞ্চলের প্রসঙ্গে উল্লেখ করেন, অতিরিক্ত সেচের কারণে ভূগর্ভস্থ জলের স্তর নেমে গেছে, যা কীটনাশকের মতো রাসায়নিক ইনপুট দ্বারা আরো প্রকট হচ্ছে। এই অঞ্চলে বিশেষ করে বেগুনের মতো ফসলে কীটনাশকের অতিরিক্ত ব্যবহার লক্ষ্য করা গেছে।
মাহমুদ জামাল কাদেরী বলেন, কৃষকের মধ্যে কীটনাশকের ভুল ব্যবহার সম্পর্কিত সচেতনতা বৃদ্ধি করা এবং নিরাপদ ব্যবহারের চর্চা প্রচার করা অত্যন্ত জরুরি। তিনি কীটনাশক প্রয়োগ এবং প্রত্যাহার সময় সম্পর্কিত বিধি কঠোরভাবে প্রয়োগের আহ্বান জানান।
তিনি আরও বলেন, সমন্বিত কীটনাশক ব্যবস্থাপনা এবং অন্যান্য পরিবেশবান্ধব কৃষিকৌশল প্রচার করা প্রয়োজন, যাতে বিপজ্জনক কীটনাশকের ওপর নির্ভরতা কমানো যায়।
সুভাষ চন্দ্র হেমব্রম বলেন, খাদ্য, পানি এবং মাটিতে কীটনাশকের মাত্রা নিয়মিত পর্যবেক্ষণ এবং দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্য ঝুঁকির ওপর আরো গবেষণা অত্যন্ত জরুরি।
তিনি জানান, নিষিদ্ধ কীটনাশক এখনো স্থানীয় বাজারে নতুন নামে বিক্রি হচ্ছে। কৃষক এবং বিক্রেতারা প্রায়ই জানেন না যে, তারা নিষিদ্ধ পদার্থ ব্যবহার বা বিক্রি করছেন।