শিরোনাম

নেত্রকোণা, ২ ডিসেম্বর, ২০২৫ (বাসস): মুরগির খোঁয়াড়ে আটকে পড়া বিরল প্রজাতির মেছো বিড়াল ছানা দুটিকে উদ্ধার করে গহিন বনে অবমুক্ত করা হয়েছে।
গতকাল সোমবার (১ ডিসেম্বর) রাতে দুর্গাপুর উপজেলার গহিন বনে মেছো বিড়ালের ছানাগুলোকে অবমুক্ত করে স্থানীয় পরিবেশ ও বন্যপ্রাণী রক্ষায় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সেভ দ্য এনিমেলস অফ সুসং এর স্বেচ্ছাসেবক ও বন বিভাগের কর্মকর্তারা।
এর আগে রোববার (৩০ নভেম্বর) সন্ধ্যায় দুর্গাপুর পৌর শহরের পশ্চিম বালিকান্দি গ্রামের একটি মুরগির খোঁয়াড় থেকে মেছো বিড়ালের ছানা দুটি উদ্ধার করে স্বেচ্ছাসেবকরা।
মুরগির খোঁয়াড়ের মালিক বিএম শাহীন বলেন, বেশ কিছুদিন ধরে আমার হাঁস এবং মুরগির খোঁয়াড় থেকে হাঁস মুরগি হারিয়ে যাচ্ছিল। আমি ভেবেছিলাম হয়ত শিয়ালের কাজ। তাই ইচ্ছে করে হাঁস-মুরগি অনেকটা কমিয়ে দিয়েছি। গত রোববার বিকেলে মুরগির খোঁয়াড় পরিষ্কার করতে গিয়ে ভিতরে বিড়ালের বাচ্চার মত দুইটি ছানা দেখতে পাই। বাচ্চাগুলো খোঁয়াড় থেকে বের করতে গিয়ে দেখি তাদের নখ বড় এবং গায়ের রং কিছুটা ভিন্নরকম। এতে সন্দেহ হলে আমার চাচাতো ভাইকে বিষয়টা জানাই। পরে সে সেভ দ্য এনিমেলস অফ সুসং-কে জানালে তারা বাচ্চাগুলোকে উদ্ধার করে নিয়ে যায়। তখন আমরা জানতে পারি এই বাচ্চাগুলো বিরল প্রজাতির মেছো বিড়ালের ছানা।
সেভ দ্য এনিমেলস অফ সুসং এর সভাপতি রিফাত আহমেদ রাসেল বলেন, বন বিড়াল পাওয়া গেছে এমন সংবাদ শুনে পশ্চিম বালিকান্দি গ্রামে একটি মুরগির খোঁয়াড় থেকে দুটি মেছো বিড়ালের ছানা উদ্ধার করি। ছানাগুলো বেশ বড়। মুরগির ঘরের ভেতরে জিআই তারের সাথে পেঁচিয়ে থাকায় বাচ্চাগুলো চলাফেরা করতে পারছিল না। এতে তারা ভিতরেই আটকে যায়। আমরা বাচ্চাগুলোকে হাঁস মুরগির ঘর থেকে উদ্ধার করি। পরে এগুলোর পরিচর্যা এবং পর্যবেক্ষণে রাখার জন্য দুর্গাপুর বন বিভাগের অফিসে রেখে দেই। বাচ্চাগুলো একেবারে সুস্থ হয়ে যাওয়ার পর সোমবার রাতে গহিন বনের জলাশয়ের ধারে মেছো বিড়ালের ছানাগুলো অবমুক্ত করা হয়।
তিনি বলেন, আমরা এর আগেও ৫৯টি রেসকিউ অভিযানের মাধ্যমে অজগর, বিরল প্রজাতির লজ্জাবতী বানর, বনরুইসহ অসংখ্য বন্যপ্রাণী উদ্ধার করেছি। এর আগে চলতি বছরের ১৩ জুন সদর ইউনিয়নে আরও দুটি মেছো বিড়ালের ছানা উদ্ধার করি আমরা।
দুর্গাপুর রেঞ্জ কর্মকর্তা মজনু প্রামাণিক বলেন, আমরা সেভ দ্য এনিমেলস অফ সুসং এর স্বেচ্ছাসেবকদের সাথে নিয়ে উপজেলার গহিন বনে মেছো বিড়ালের দুটি ছানা অবমুক্ত করছি। বাচ্চাগুলো মোটামুটি বড় হওয়ায় এখন নিজেরাই নিজে থেকে শিকার করে খাদ্য চাহিদা পূরণ করতে পারবে। এজন্য আমরা বাচ্চা গুলোকে একটি জলাশয়ের ধারে অবমুক্ত করেছি। আর যেহেতু মেছো বিড়াল একটি নিশাচর প্রাণী। তাই আমরা দিনের পরিবর্তে রাতে প্রাণীগুলোকে অবমুক্ত করেছি যেন তারা নিরাপদে চলতে পারে এবং নিরাপদ স্থান খুঁজে নিতে পারে।
বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিট বন্যপ্রাণী পরিদর্শক আব্দুল্লাহ আস সাদিক বলেন, মেছো বিড়াল একটি বিরল প্রজাতির প্রাণী। এসব প্রাণী সাধারণত বড় জলাশয়, পুকুর ও হাওর অঞ্চলে বসবাস করে। এদের মূল খাবারই হলো মাছ। তবে বিভিন্ন সময় খাদ্যের সন্ধানে এরা লোকালয়ে চলে আসে এবং হাঁস মুরগির খামারে ঢুকে পড়ে। এরা সাধারণত ইঁদুর, বিষধর সাপসহ পরিবেশের জন্য ক্ষতিকারক প্রাণী খেয়ে পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখে। তবে এই প্রাণীর শরীরে কালো ছোপ ছোপ চিহ্ন থাকায় অনেক সময় মানুষ এটিকে চিতা বাঘ বা বাঘ বলে ভুল করে হত্যা করে। প্রাণীটি একেবারেই নিরীহ প্রজাতির। আমরা প্রাণীটি রক্ষায় সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানাই।