শিরোনাম

মনসুর আহম্মেদ
রাঙামাটি, ২ ডিসেম্বর ২০২৫(বাসস): পার্বত্য অঞ্চলে ‘বারি লাউ-৪’ চাষে সাফল্য অর্জন করেছে কাপ্তাই রাইখালী পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্র।
চলতি বছরের ৪ সেপ্টেম্বর থেকে কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের এক একর জায়গা জুড়ে ‘বারি লাউ-৪’ এর পরীক্ষামূলক চাষ শুরু করে সফল হয়েছে কাপ্তাই কৃষি গবেষণা কেন্দ্র। বীজ বপন করার ৭০ দিনের মধ্যেই প্রতিটি গাছে ভালো ফলন ধরেছে। গবেষণা কেন্দ্রের এই বাগানে এখন গাছে গাছে সারি সারি লাউ ঝুলে আছে।
রাইখালী কৃষি গবেষণা কেন্দ্র জানায়, বারি লাউ-৪ জাতের সবজি পাহাড়ি অঞ্চলে উৎপাদনের উপযোগী। তাই কৃষি বিজ্ঞানীরা পার্বত্য অঞ্চলে এই লাউয়ের চাষ ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে প্রজনন বীজ উৎপাদন করে নতুন এই লাউয়ের বীজ পাহাড়ের দুর্গম অঞ্চলের কৃষকদের হাতে পৌঁছে দিচ্ছে।
কাপ্তাই রাইখালী কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মুহাম্মদ জিয়াউর রহমান বলেন, বারি লাউ-৪ পরীক্ষামূলকভাবে চাষ করে আমরা সফল হয়েছি। এ জাতের প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে তাপ সহনশীল এবং সারা বছর চাষ করা যায়।
তিনি বলেন, পার্বত্য অঞ্চল এই বারি লাউ ৪ চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী একটি জাত। গাঢ় সবুজ রঙের ফলের গায়ে সাদাটে দাগ থাকে। গাছ প্রতি ১০-১২ টি ফল পাওয়া যায় এবং ফলের গড় ওজন ২.৫ কেজি। চারা রোপণের ৭০ থেকে ৮০ দিনের মধ্যে ফল সংগ্রহ করা যায় এবং হেক্টর প্রতি ফলন হয় ৮০ থেকে ৮৫ টন। জাতটি তাপ সহিষ্ণু হওয়ায় গ্রীষ্মকালে চাষ করে কৃষক লাভবান হতে পারে। এই লাউ পাহাড়ের প্রত্যন্ত এলাকায় কৃষকদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে গবেষণা কেন্দ্র কাজ করছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
ড. জিয়াউর রহমান জানান, বাংলাদেশের সব এলাকায় এ জাতটি চাষ করা যায়। গ্রীষ্মকালীন চাষের জন্য ফাল্গুনের শেষে আগাম ফসল হিসেবে এ লাউ চাষ করা যায়। চৈত্র মাসে বীজ বপন করে বৈশাখ মাসে চারা রোপণ করতে হয় ।
রাইখালী ইউনিয়নের কৃষক পাইদো অং মারমা বলেন, বারি লাউ ৪ এর ফলনের বিষয়ে গবেষণা কেন্দ্র হতে জানতে পেরে আমি গত অক্টোবর মাসে এই গবেষণা কেন্দ্র হতে বারি লাউ - ৪ এর বীজ ও সার সংগ্রহ করি।
তারা আমাকে বিনামূল্যে এগুলো দেন। সার বীজ নিয়ে আমি নিজস্ব এক বিঘা জমিতে লাউয়ের চাষ শুরু করে দিয়েছি। বর্তমানে চারাগুলো অনেক বড় হয়েছে। আশা করছি ভালো ফলন হবে।
উল্লেখ্য, ১৯৭৬ সালে প্রতিষ্ঠিত এই গবেষণা কেন্দ্রে ইতোমধ্যে ২১টি সবজি এবং ফলের জাত উদ্ভাবন করে পাহাড়ের কৃষি খাতে বিপ্লব ঘটিয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় কৃষকের বাতিঘর হিসেবে পরিচিত রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলার রাইখালী পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্র। নতুন নতুন কৃষি প্রযুক্তি উদ্ভাবনের মাধ্যমে বাংলাদেশ তথা পার্বত্য অঞ্চলের কৃষিতে অনন্য অবদান রেখে চলেছে।