শিরোনাম

ঢাকা, ১ ডিসেম্বর, ২০২৫(বাসস) : ‘সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় অধ্যাদেশ’ দেশের বিচার বিভাগের ইতিহাসে এক সোনালী সংযোজন ও মাইলফলক পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন আইনজীবীরা।
এই অধ্যাদেশের ফলে সুপ্রিম কোর্ট ও আইন মন্ত্রণালয়ের মধ্যকার দ্বৈত শাসনের অবসান ঘটবে বলে মনে করেন আইনজীবীরা।
সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় অধ্যাদেশ জারির বিষয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম আজ সাংবাদিকদের বলেন, আমরা মনে করি জাতির জন্য একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ হয়েছে এবং দেশের বিচার বিভাগের ইতিহাসে একটা সোনালী সংযোজন। সরকারের যা করার ছিলো সেটা অধ্যাদেশের মাধ্যমে তারা করে দিয়েছেন। এখন তাই বিচার বিভাগের দায়িত্ব, দায়বদ্ধতা বেড়ে গেলো। বিচার বিভাগের পৃথক সচিবালয় প্রতিষ্ঠার পরে আমরা আশা করবো, বিচার বিভাগে সেই সমস্ত বিচারকরাই আসবেন যারা শুধু বিবেক, সংবিধান ও আইনের কাছে জবাবদিহি করবেন। অন্য কারো কাছে তিনি দায়বদ্ধ থাকবেন না। যারা অতীতে বিচার বিভাগকে কলঙ্কিত করেছেন, এরকম কোনো বিচারক আর বিচার বিভাগে আসবে না, সে সুদিন দেখার প্রত্যাশা করছি।
অধ্যাদেশ প্রসঙ্গে সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার মো. রুহুল কুদ্দুস কাজল সাংবাদিকদের বলেন, আমি বিশ্বাস করি, এই অধ্যাদেশের ফলে সুপ্রিম কোর্ট ও আইন মন্ত্রণালয়ের মধ্যকার দ্বৈত শাসনের অবসান ঘটবে। এই অধ্যাদেশের মাধ্যমে বিচার বিভাগের ক্ষমতায়ন করা হয়েছে। তবে সঠিক বাস্তবায়নের উপর নির্ভর করবে এর কার্যকারিতা। এই অধ্যাদেশে জারির জন্য আমি প্রধান বিচারপতি ও অন্তর্বর্তী সরকারকে ধন্যবাদ জানাই।
বিচার বিভাগ পৃথককরণ মামলার বাদী ও সাবেক বিচারক মাসদার হোসেন সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় অধ্যাদেশ জারি বিষয়ে বলেন, ‘এটা শুধু জুডিশিয়ারির'ই নয়, সারা দেশের মানুষের আকাঙ্ক্ষা ছিলো। এই অধ্যাদেশ জারি করার জন্য অন্তর্বর্তী সরকার ও প্রধান বিচারপতিকে ধন্যবাদ জানাই।’
সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির অধ্যাদেশ জারির পর বলেন, এটি বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি মাইলফলক পদক্ষেপ। এর মাধ্যমে আমাদের নিম্ন আদালত প্রশাসনিক কর্তৃত্ব থেকে মুক্তি পেল। আর অধস্তন বিচারকদের পদোন্নতি, বদলি, শৃঙ্খলা ও ছুটিবিষয়ক সব সিদ্ধান্ত উচ্চ আদালতের নিয়ন্ত্রণে এলো।
বিচার বিভাগের পূর্ণ স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে ‘সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় অধ্যাদেশ, ২০২৫' জারি হয়েছে। বিচার বিভাগের প্রাতিষ্ঠানিক স্বতন্ত্রীকরণ নিশ্চিতকরণে প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের উদ্যোগে সুপ্রিম কোর্টের জন্য পৃথক সচিবালয় গঠনসংক্রান্ত প্রস্তাব আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। একপর্যায়ে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের সভায় চূড়ান্ত অনুমোদনের দশদিন পর গত ৩০ নভেম্বর আইন মন্ত্রণালয় এই অধ্যাদেশ জারি করে। এই অধ্যাদেশ অনুযায়ী, বিচারকাজে নিয়োজিত বিচারকদের পদায়ন, পদোন্নতি, বদলি, শৃঙ্খলা ও ছুটিবিষয়ক সব সিদ্ধান্ত ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক বিষয় এই সচিবালয়ের হাতে থাকবে। সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয়ের সার্বিক নিয়ন্ত্রণ প্রধান বিচারপতির ওপর ন্যস্ত থাকবে এবং সচিবালয়ের সচিব প্রশাসনিক প্রধান হবেন।
বিসিএস বিচার অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব মাসদার হোসেন ও তার সহকর্মীরা বিচার বিভাগকে নির্বাহী বিভাগ থেকে পৃথককরণে ১৯৯৫ সালে মামলা করেন। সেই মামলায় ১৯৯৯ সালে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ স্বাধীন বিচার বিভাগ প্রতিষ্ঠার ঐতিহাসিক রায় দেয়। এই রায়ের আট বছর পর ২০০৭ সালে মূল নির্দেশনা বাস্তবায়ন করে বিচার বিভাগকে পৃথক করা হয়।