শিরোনাম

।। জাহিদুল ইসলাম ।।
নরসিংদী, ২২ নভেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : গতকাল শুক্রবার সকাল ১০.৩৮ মিনিটে ভ’মিকম্পে হঠাৎ কেঁপে ওঠে সারাদেশ। এ ভ’মিকম্পের ফলে তীব্র ঝাঁকুনিকে বলা হচ্ছে এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ। এতে রাজধানীসহ সারাদেশে অন্তত দশজন নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন পাঁচশোর উপরে। ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল নরসিংদীতে অনেকগুলো ভবন, সড়ক ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ফাটল দেখা দিয়েছে। এ ঘটনায় জনমনে আতঙ্ক কাটেনি আজও।
আজ শনিবার সকাল থেকে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ভূমিকম্পের ভয়াবহতার এমন চিত্র। বিভিন্ন ভবন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও দোকানপাটসহ সড়কগুলোতেও শক্তিশালী এই ভূমিকম্প ব্যাপক তাণ্ডব চালিয়েছে।
এদিকে গতকাল ঘটে যাওয়া ভয়াবহ ভ’মিকম্পে নরসিংদীর ঘোড়াশালের বিভিন্ন স্থানে ফাটল ধরা মাটি নিয়ে পরীক্ষা নীরিক্ষা চালু করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগ। সকালে ঘোড়াশাল পৌর এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত ঘোড়াশাল ডেইরি ফার্ম ও পলাশ রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজে ধসে পড়া মাটির নমুনা সংগ্রহে কাজ করেন ভূতত্ত্ব বিভাগের ৭ সদস্যের একটি টিম।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ভূমিকম্পে পলাশ রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজের প্রধান ফটকের সামনের রাস্তায় ফাটল দেখা দিয়েছে। কাছাকাছি লেবুপাড়া নামক স্থানে একটি গরুর খামারের মাঝামাঝির মাটি ফাঁকা হয়ে গেছে। ওই খামারটিতে শতাধিক গরু ছিল।
অনেক ভবনে দেখা দিয়েছে ফাটল। হেলে পড়েছে বহুতল ভবন। ঘোড়াশাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে কিছু যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়েছে। আগুনও ধরেছিল। শীতলক্ষ্যা নদীর ওপর পুরোনো রেলসেতুতে ফাটল দেখা দিয়েছে। এছাড়া পলাশের সরকারি খাদ্য গুদাম, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়সহ শতাধিক স্থাপনায় ব্যাপক ফাটল দেখা দিয়েছে।
আতঙ্ক ছিলেন নদীর তীরে বসবাসরত মানুষগুলোও।
পলাশের বাসিন্দা রফিক আহমেদ (৪৩) বলেন, ভূমিকম্পের সময় নদীর পানি অনেক ওপরে উঠে প্রচণ্ড ঢেউ তুলেছিল। আমরা অনেক ভয় পেয়েছিলাম। অনেকক্ষণ পর বুঝতে পেরেছি, ভূমিকম্প হয়েছে। তবে জীবনে এমন কম্পন আর কখনো দেখিনি।
আতঙ্কিত ছিলেন প্রাণ-আরএফএল কারখানায় কর্মরত শ্রমিকরাও। কম্পনের সময় দৌড়াদৌড়ি করে বেশ কয়েকজন আহতও হয়েছেন।
প্রাণ আরএফএলের শ্রমিক আবদুল সাত্তার (৫৬) জানান, আমরা প্রথমে বুঝতে পারিনি। মনে করেছিলাম, বাইরে কোনো ভারী লরি যাচ্ছে। পরে দেখি কারখানার সব ভবন কাঁপছে। এরপর সবাই দৌড়াদৌড়ি করে বের হতে গিয়ে কয়েকজন আহত হওয়াসহ ভয়ে কয়েকজন জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন।
পলাশ রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজের পাশের দোকানদার ফজলু মিয়া (৫৪) বলেন, ভূমিকম্পের সময় হঠাৎ বিকট শব্দে মাটিসহ সব কাঁপতে থাকে। কিছুক্ষণ পরই কলেজের গেটের ভেতর মাটি সরে গিয়ে ফাটল দেখতে পাই। এমন ঘটনা আর কোনোদিন দেখিনি।
দেশের আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভূকম্পন পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র জানিয়েছে, ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল নরসিংদীর মাধবদীতে। যুক্তরাষ্ট্রের ইউএসজিএস বলছে, কেন্দ্রস্থল নরসিংদী সদর থেকে প্রায় ১৪ কিলোমিটার পশ্চিম-দক্ষিণ পশ্চিমে।
গুগল ম্যাপ অনুযায়ী, কেন্দ্রস্থল পলাশ উপজেলার ডাঙ্গা গ্রাম। স্থানটি শীতলক্ষ্যা নদীর পারে। এটি পলাশ উপজেলার অধীন ঘোড়াশাল পৌর শহরের কাছাকাছি। মাধবদীও পলাশ উপজেলার পাশে। ফলে এই অঞ্চলের মানুষগুলোই ভূমিকম্পে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. আ স ম ওবায়দুল্লাহ জানান, প্রাথমিকভাবে তারা ফাটল ধরা মাটির নমুনা সংগ্রহ করছেন। এসব নমুনা সংগ্রহের পর তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে কি ধরণের ভূমিকম্প হয়েছে বা কতটুকু গভীরতা সেটি নিশ্চিত হওয়া যাবে।
অন্যদিকে ভ’মিকম্পে জেলাব্যাপী ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করতে কাজ করছে জেলা প্রশাসনের বিভিন্ন ইউনিট। আগামী তিন-চার দিনের মধ্যে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হবে বলে জানিয়েছেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আবু তাহের মো. শামসুজ্জামান।
পলাশ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) কাউছার আলম সরকার জানান, উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন ও পৌর এলাকার ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করতে কাজ করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত শতাধিক মাটির ঘর ও অর্ধশতাধিক সরকারি-বেসরকারি ভবনে ফাটল ও ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। এর পরিমাণ আরও বাড়বে।
তিনি বলেন, ভূমিকম্পে পলাশ উপজেলায় মারা যাওয়া দুইজনের পরিবারকে ২৫ হাজার টাকা করে আর্থিক অনুদান দেওয়াসহ ক্ষতিগ্রস্ত কয়েকজনকে দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে সহযোগিতা করা হয়েছে।