শিরোনাম

ঢাকা, ২০ নভেম্বর, ২০২৫ (বাসস): বিচার বিভাগের পূর্ণ স্বাধীনতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সুপ্রিম কোর্টের জন্য একটি পৃথক সচিবালয় প্রতিষ্ঠার জন্য অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকার আজ সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় অধ্যাদেশ, ২০২৫ এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের সভায় এই অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল এখানে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘আজ, আমরা মাসদার হোসেন মামলার রায়ের পূর্ণ বাস্তবায়ন এবং বিচার বিভাগের পূর্ণ স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠার চূড়ান্ত পদক্ষেপ সম্পন্ন করেছি।’
উপদেষ্টা পরিষদের সভায় গৃহীত সিদ্ধান্ত সম্পর্কে অবহিত করার জন্য এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছিল। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
উপদেষ্টা পরিষদ পূর্বে প্রস্তাবিত আইনটি নীতিগতভাবে অনুমোদন করেছে উল্লেখ করে অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, সুপ্রিম কোর্টের জন্য একটি পৃথক সচিবালয় প্রতিষ্ঠা বিচার বিভাগীয় সংস্কার কমিশনের পাশাপাশি জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশনের সুপারিশগুলোর মধ্যে অন্যতম।
আইন উপদেষ্টা বলেন, জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশনের আলোচনায় সকল পক্ষ একমত হয়েছে যে, বিচার বিভাগের পূর্ণ স্বাধীনতা নিশ্চিত করার জন্য সুপ্রিম কোর্টের জন্য একটি পৃথক সচিবালয় থাকা উচিত।
তিনি বলেন, বিচার বিভাগের পূর্ণ স্বাধীনতা নিশ্চিত করার জন্য গত ২০-৩০ বছর ধরে বাংলাদেশের নাগরিক সমাজের মনে সুপ্রিম কোর্টের জন্য একটি পৃথক সচিবালয়ের আকাঙ্ক্ষা বিদ্যমান।
তিনি আরও বলেন, ‘আজ আমাদের জন্য একটি ঐতিহাসিক দিন। অনেক রাজনৈতিক দল অনেক আশ্বাস দিয়েছে, অনেক কথা বলেছে। অবশেষে, আমরা এখন একটি ভালো জায়গায় এসে পৌঁছেছি।’
গণভোট আইন সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে আইন উপদেষ্টা বলেন, অন্তবর্তী সরকার তিন থেকে চার কর্মদিবসের মধ্যেই গণভোট আইন প্রণয়ন করবে।
তিনি জানান, সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় অধ্যাদেশ ২০২৫ অনুযায়ী নিম্ন আদালতের বিচারকদের বদলি, পদোন্নতি, পদায়ন ও শৃঙ্খলামূলক ব্যবস্থাসহ সব ধরনের ক্ষমতা সরকার থেকে সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয়ের ওপর ন্যস্ত করা হচ্ছে।
প্রফেসর আসিফ নজরুল বলেন, অধ্যাদেশটি সম্পূর্ণ কার্যকর হলে আইন মন্ত্রণালয় বা সরকার নিম্ন আদালতের বিচারকদের ওপর আর কোনো নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারবে না। এসব বিষয় পুরোপুরি সুপ্রিম কোর্ট নিজস্ব সচিবালয়ের মাধ্যমে পরিচালনা করবে।
তবে তিনি জানান, সচিবালয় পুরোপুরি প্রতিষ্ঠিত ও কার্যকর না হওয়া পর্যন্ত অধ্যাদেশটি কার্যকর হবে না।
তিনি বলেন, এটি এখনই কার্যকর হচ্ছে না, এজন্য সচিবালয় গঠন ও কার্যকর করতে হবে। আমরা আশা করছি, কয়েক মাসের মধ্যেই হাইকোর্ট সচিবালয় পূর্ণাঙ্গভাবে গঠিত ও কার্যক্রমে যাবে।
এরপর নিম্ন আদালতের বিচারকদের তদারকি, নিয়ন্ত্রণ, শৃঙ্খলা ও ছুটি-সংক্রান্ত সব বিষয় সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় থেকেই পরিচালিত হবে বলে তিনি জানান।
তিনি বলেন, নিম্ন আদালতের আর্থিক ব্যবস্থাপনা বা আর্থিক স্বায়ত্তশাসনের বিষয়টিও সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয়ের অধীনে আসবে।
প্রফেসর আসিফ নজরুল জানান, বিচার বিভাগের যেকোনো উন্নয়ন প্রকল্প—উচ্চ আদালত হোক বা নিম্ন আদালত পর্যালোচনার জন্য সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয়ের নেতৃত্বে একটি স্ক্রুটিনি কমিটি থাকবে। কমিটির প্রধান হবেন প্রধান বিচারপতির সম্মতিতে মনোনীত আপিল বিভাগের একজন বিচারপতি।
অধ্যক্ষ বলেন, এই কমিটি কোনো প্রকল্পের সুপারিশ করলে এবং যদি ব্যয়ের পরিমাণ ৫০ কোটি টাকার মধ্যে থাকে, তাহলে প্রধান বিচারপতি এককভাবেই অনুমোদন দেবেন; অন্য কোনো অনুমোদন লাগবে না।
ব্যয় ৫০ কোটি টাকার বেশি হলে প্রধান বিচারপতি বিষয়টি পরিকল্পনা কমিশনের মাধ্যমে একনেকে পাঠাবেন। ফলে সুপ্রিম কোর্টকে ৫০ কোটি টাকা পর্যন্ত প্রকল্প অনুমোদনের ক্ষমতা দেওয়া হচ্ছে, তিনি যোগ করেন।
সভা শেষে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে মোট আটটি এজেন্ডা ছিল এবং সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় অধ্যাদেশ ২০২৫ ছিল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
তিনি জানান, ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার কথা বিবেচনা করে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি নিশ্চিত করতে সরকার ভূমি ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ ও কৃষিজমি সুরক্ষা অধ্যাদেশ ২০২৫-এর খসড়ার নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে।
অধ্যাদেশে কৃষিজমি অুকৃষি কাজে ব্যবহার নিরুৎসাহিত করা হবে এবং কৃষিজমি যাতে অন্য খাতে চলে না যায়, সে জন্য প্রয়োজনীয় কর্মসূচি ও পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
তিনি বলেন, পরিবেশগতভাবে সংবেদনশীল এলাকা, হাওর-বাঁওড়, জলাভূমি, পাহাড়ুটিলা, বনাঞ্চল, সমুদ্র ও উপকূলীয় অঞ্চল রক্ষায় বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
ভূমি ব্যবহারের জন্য একটি জোনিং মানচিত্র প্রণয়নের কথাও উল্লেখ রয়েছে।
মানবপাচার ও অভিবাসী চোরাচালান প্রতিরোধ ও দমন অধ্যাদেশের খসড়াও নীতিগত অনুমোদন পেয়েছে বলে জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে আইন উপদেষ্টা প্রফেসর আসিফ নজরুল বলেন, আজ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহাল করে একটি ঐতিহাসিক রায় দিয়েছেন এবং এ সংক্রান্ত দায়ের করা দেওয়ানি আপিলগুলো গ্রহণ করেছেন।
তিনি বলেন, দীর্ঘ লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে আমরা তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা অর্জন করেছিলাম। এটি আমাদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করেছিল। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে আমরা একাধিক সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন প্রত্যক্ষ করেছি। সবসময়ই দেখা গেছে ক্ষমতাসীন দল পরাজিত হয়েছে, যা আমাদের কাছে স্বাভাবিক মনে হতো।
তিনি বলেন কিন্তু দুঃখজনকভাবে একজন সাবেক প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে এক রায়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছিল।
তিনি জানান, এরপর তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে ব্যবস্থাটি বাতিল করে দেয়।
তিনি বলেন, প্রথমে পঞ্চদশ সংশোধনীকে অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হয়েছিল। তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে অবৈধ ঘোষণা করে সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হকের দেওয়া বিতর্কিত রায় আজ বাতিল করা হয়েছে।
প্রফেসর আসিফ নজরুল বলেন, আমরা বলতে পারি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনরুর্জীবিত হয়েছে; তবে এটি কার্যকর হবে পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর, কারণ বর্তমান সংসদ ইতোমধ্যে ভেঙে দেওয়া হয়েছে।