বাসস
  ১৮ নভেম্বর ২০২৫, ২২:৪২

প্রাথমিক শিক্ষকদের গ্রেডেশনের বিষয় সক্রিয় বিবেচনা করছে সরকার : প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা

মঙ্গলবার সচিবালয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা ডা. বিধান চন্দ্র রায় পোদ্দার। ছবি : পিআইডি

ঢাকা, ১৮ নভেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা ডা. বিধান চন্দ্র রায় পোদ্দার বলেছেন, প্রাথমিক শিক্ষকদের গ্রেডেশন প্রাপ্তির বিষয়টি সক্রিয় বিবেচনা করছে সরকার।

আজ মঙ্গলবার সচিবালয়ে প্রাথমিক ও গণ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।

উপদেষ্টা বলেন, ইতিমধ্যে সারাদেশে প্রায় ৬৫ হাজার প্রধান শিক্ষককে দশম গ্রেডে উন্নতিকরণ করা হয়েছে। সহকারি শিক্ষকদের গ্রেডেশন দেওয়ার বিষয়টিও সরকার আন্তরিকভাবে বিবেচনা করছে।

তিনি বলেন, গ্রেডেশন প্রাপ্তির জন্য কোন শিক্ষকের আন্দোলন করতে হবে না। তাছাড়া সম্প্রতি নয়টি সাংগঠনের সাথে এ বিষয়ে চূড়ান্ত বৈঠক হয়েছে। সকলেই সরকারের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন।

উপদেষ্টা বলেন, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে এবং জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা একাডেমি (নেপ)-এর পরিচালনায় ২০২৬ সালের জানুয়ারি মাস হতে ‘ডিপ্লোমা ইন প্রাইমারি এডুকেশন (ডিপিএড)’ প্রোগ্রামটি চালু হতে যাচ্ছে।

দেশের ১২টি প্রাইমারি টিচার্স ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে (পিটিআই) প্রোগ্রামটি পাইলটিং ভিত্তিতে চালু হবে।

তিনি বলেন, পিটিআইগুলো হল- ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, রংপুর, সিলেট, বরিশাল, ময়মনসিংহ, যশোর, কুমিল্লা, জয়দেবপুর, দিনাজপুর ও বগুড়া। এ প্রোগ্রামটির মেয়াদ হবে ১০ মাস। প্রোগ্রামটি অনাবাসিক এবং বৈকালিক।

উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশের যেকোনো স্থায়ী নাগরিক এই প্রোগ্রামে আবেদন করতে পারবেন। কোনো স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় হতে ন্যূনতম দ্বিতীয় শ্রেণি বা সমমানের জিপিএ/সিজিপিএ (৪ স্কেলে ন্যূনতম ২.২৫ এবং ৫ স্কেলে ন্যূনতম ২.৮) সহ স্নাতক/স্নাতক (সম্মান) বা সমমানের ডিগ্রিধারীরা আবেদন করতে পারবেন; তবে শিক্ষা জীবনের কোনো পর্যায়ে তৃতীয় বিভাগ/শ্রেণি বা সমমানের জিপিএ/সিজিপিএ গ্রহণযোগ্য নয়। নির্ধারিত ফি পরিশোধ সাপেক্ষে আগ্রহী প্রার্থীরা কোর্সের জন্য আবেদন করতে পারবেন।

তিনি বলেন, আবেদনকারীকে নেপের ডিপিএড বোর্ড কর্তৃক আয়োজিত ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হবে। নির্ধারিত আসনে ভর্তির জন্য ৫০ নম্বরের বহুনির্বাচনী ভর্তি পরীক্ষা (বাংলা, ইংরেজি, গণিত ও সাধারণ জ্ঞান; সময় ৫০ মিনিট) গ্রহণ করা হবে। উত্তীর্ণ পরীক্ষার্থী ভর্তির শর্তাবলি পূরণ সাপেক্ষে পিটিআইভিত্তিক মেধাতালিকার ভিত্তিতে ভর্তি হবেন।

তিনি বলেন, ডিপিএড প্রোগ্রামটিতে মোট ১২০০ নম্বরের মূল্যায়ন হবে। প্রোগ্রামটির মোট ক্রেডিট ৩৫ এবং ২ টি সেমিস্টারে ১০ মাসের কার্যক্রমটি পরিচালিত হবে। এই প্রোগ্রামে তাত্ত্বিক বিষয় হিসেবে শিক্ষা পরিচিতি ও শিক্ষাদর্শন, শিশুর বিকাশ ও শিখন, শিক্ষণ পদ্ধতি-কৌশল ও শ্রেণি ব্যবস্থাপনা, শিক্ষাক্রম ও শিখন সামগ্রী, শিখন মূল্যায়ন ও ফলাবর্তন, ভাষা দক্ষতা উন্নয়ন-বাংলা ও ইংরেজি, গাণিতিক ও বৈজ্ঞানিক দক্ষতা উন্নয়ন, শিক্ষায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, সামাজিক দক্ষতা উন্নয়ন, নৈতিকতা ও মূল্যবোধ গঠন, শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য শিক্ষা ও শিল্পকলা কোর্সসমূহ এবং হাতে কলমে অনুশীলনের জন্য সিমুলেশন, বিদ্যালয় ভিত্তিক অনুশীলন ও প্রতিফলনমূলক চর্চার ব্যবস্থা থাকবে।

উপদেষ্টা বলেন, এই প্রোগ্রাম শিক্ষার্থীদের বহুমাত্রিকভাবে সমৃদ্ধ করবে। শিক্ষাদর্শন, শিক্ষণ কৌশল ও মূল্যায়ন কাঠামো শেখার মাধ্যমে তারা আধুনিক শিক্ষক হিসেবে দক্ষ হয়ে উঠবেন। শিক্ষার্থীদের গবেষণা ও বিশ্লেষণ ক্ষমতা উন্নত হবে, যা ভবিষ্যৎ পেশাগত জীবনে কার্যকর ভূমিকা রাখবে। প্রোগ্রামটি শেষে এতে অংশগ্রহনকারীরা আত্মবিশ্বাসী ও দায়িত্বশীল শিক্ষক হিসেবে গড়ে উঠবেন, যা তাদের ক্যারিয়ার উন্নয়ন ও সমাজে ইতিবাচক প্রভাব বিস্তারে সহায়ক হবে।