শিরোনাম

মো. আমিনুল হক
সুনামগঞ্জ, ১৭ নভেম্বর, ২০২৫ (বাসস): জেলায় এবার রোপা আমন ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। অনুকূল আবহাওয়া থাকায় এবার ধানের আশাতীত ফলন হওয়ায় কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে। ইতিমধ্যে জেলায় ধান কাটা শুরু হয়েছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, এ বছর জেলায় মোট ৮২ হাজার ৬৫৬ হেক্টর জমিতে রোপা আমন ধানের চাষাবাদ করা হয়েছে। এর মধ্যে ঊফশী, হাইব্রিড ও স্থানীয় জাতের ধান রয়েছে। ধানের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা (চালের হিসাবে) নির্ধারণ করা হয়েছে দুইলাখ ১৬ হাজার ৯৯৭ মেট্রিক টন। উৎপাদিত এই চালের আনুমানিক বাজার মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে একহাজার ৬৩ কোটি ২৮ লাখ ৫৩ হাজার টাকা।
কৃষি কর্মকর্তাদের তথ্য অনুযায়ী, জেলার মোট আবাদের ১১ দশমিক ৫০ শতাংশ অর্থাৎ প্রায় ১০ হাজার হেক্টর জমির ধানকাটা ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। কৃষকরা এখন পুরোদমে ধান কাটতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে আগামী ২০ থেকে ২৫ দিনের মধ্যেই জেলার সব জমির ধান কাটা সম্পন্ন হবে।
সরেজমিনে জেলার বিভিন্ন হাওর ও ফসলের মাঠে দেখা যায়, ধান কাটা ও মাড়াই করে ঘরে তোলায় ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষাণ-কৃষাণীরা। বাম্পার ফলনে কৃষকরা আনন্দিত। তবে ধানের ন্যায্য মূল্য পাওয়া নিয়ে কৃষকরা চিন্তিত।
সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার গৌরারং ইউনিয়নের বড়ঘাট গ্রামের আব্দুল আলিম বলেন, এবার ধানের গাছ খুব পুষ্ট হয়েছে। পোকা-মাকড়ের আক্রমণও কম ছিল। গত কয়েক বছরের মধ্যে এবার ভালো ফলন হয়েছে। ঠিকমতো ধান গোলায় তুলতে পারলে আর ন্যায্য দাম পেলে তারা লাভবান হবেন বলে তিনি উল্লেখ করেন।
একই গ্রামের কৃষক গোলাম মোস্তফা বলেন, ফলন খুব ভালো হয়েছে। আবহাওয়াও ভালো ছিল। এখন ধান কাটা শুরু করছি। ভালো ধান পাবো বলে আশা করছি।
বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার কৃষক জুয়েল মিয়া বলেন, অন্যান্য বছরের তুলনায় এবছর ফলন ভালো হয়েছে। কেয়ার প্রতি ১৯-২০ মণ ধান হয়েছে। তিনি নিজে এ বছর ৮ কেয়ার জমিতে ধান লাগিয়েছেন উল্লেখ করে জানান, চলতি সপ্তাহে ধান কাটা শুরু করবেন।
জেলায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ ওমর ফারুক বলেন, এবছর আবহাওয়া অনূকূলে থাকায় আমনের বাম্পার ফলন হয়েছে। শুরু থেকেই কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্যোগে কৃষকদের উচ্চ ফলনশীল ধানের জাত নির্বাচন, সঠিক রোপণ প্রক্রিয়া, সময়মতো জমিতে সার ও কীটনাশক দেওয়াসহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। মাঠপর্যায়ে কৃষি কর্মকর্তারা কৃষকদের সার্বক্ষণিক পরামর্শ দিয়েছেন।
তিনি আরও জানান, সমন্বিত প্রচেষ্টার ফলেই ভালো ফলন সম্ভব হয়েছে, যা জেলার খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি কৃষকদের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বড় ভূমিকা রাখবে।
সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া বলেন, অনুকূল আবহাওয়া থাকায় এবছর সুনামগঞ্জ জেলায় আমনের ভালো ফলন হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে কৃষকদের জন্য যথাসময়ে সার ও বীজ সরবরাহ নিশ্চিত করা হয়েছে।
কৃষকদের আশ্বস্ত করে জেলা প্রশাসক জানান, ধানকাটা ও বাজারজাতকরণ প্রক্রিয়ায় তাদের যেকোনো সমস্যা সমাধানে জেলা প্রশাসন পাশে থাকবে।