শিরোনাম

মো. আয়নাল হক
রাজশাহী, ১৭ নভেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : চলতি মৌসুমে রাজশাহী বিভাগের আটটি জেলায় প্রায় ১ লাখ ২৯ হাজার হেক্টর জমি থেকে ৫ লাখ ৪০ হাজার টনেরও বেশি গম উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে।
চলতি মৌসুমে গম চাষে সাফল্য অর্জনে কৃষক ও মাঠ পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তা, বিজ্ঞানী ও গবেষকরা প্রয়োজন অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই) রাজশাহী কৃষি অঞ্চলের চার জেলায় ৯৭ হাজার ৫৭৬ হেক্টর জমি থেকে ৪ লাখ ২০ হাজার টন গম এবং বগুড়া কৃষি অঞ্চলের চার জেলায় ৩১ হাজার ৩১৫ হেক্টর জমি থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টন গম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে।
ডিএই-এর অতিরিক্ত পরিচালক ড. আজিজুর রহমান বলেন, ‘আমাদের যথেষ্ট প্রস্তুতি রয়েছে এবং মাঠ পর্যায়ের সব কর্মকর্তা ও কর্মচারী লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে নিরলসভাবে কাজ করছেন।’
তিনি উল্লেখ করেন, গত কয়েক বছর ধরে কৃষকরা ডিএই নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে গম চাষ করছেন।
এদিকে, কৃষক ও সংশ্লিষ্টরা চলতি মৌসুমে বিশেষ করে বিস্তীর্ণ বরেন্দ্র এলাকায় ব্যাপক গম উৎপাদন নিয়ে অত্যন্ত আশাবাদী।
সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা ফসলের উন্নয়নে বহুমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। কারণ, গম পানি সাশ্রয়ী ও খরা সহনশীল বৈশিষ্ট্যের কারণে এ অঞ্চলে উপযোগী ফসল।
বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ পানি-সাশ্রয়ী ফসল হিসেবে এ অঞ্চলে গম চাষে কৃষকদের উৎসাহিত করতে পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়েছে, যাতে পানির সংকট পরিস্থিতি মোকাবিলা করা যায়।
তানোর উপজেলার পাঁচন্দর গ্রামের ৪৫ বছর বয়সি কৃষক আবু বকর মোল্লা বর্তমানে গমের বীজ বপনে ব্যস্ত। তিনি বলেন, সময় মতো বীজ বপন এবং বর্তমান শীতল আবহাওয়া বাম্পার ফলনের জন্য ইতিবাচক লক্ষণ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
আঞ্চলিক গম ও ভুট্টা গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. জহিরুল ইসলাম বলেন, বরেন্দ্র এলাকার কৃষকরা নতুন জমিতে গম চাষে আরো আত্মবিশ্বাসী হয়েছেন। কারণ গম কম সেচ নির্ভর ফসল।
গম গবেষণা কেন্দ্র এখন পর্যন্ত ২৪টি গমের জাত এবং বাণিজ্যিক চাষের জন্য কিছু সময়োপযোগী প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে।
ড. জহিরুল ইসলাম জানান, সম্প্রতি উদ্ভাবিত ছয়টি জাত— প্রদীপ, বিজয়, শতাব্দী এবং বারিগম-২৬ পাতার ব্লাইট ও পাতার মরিচা রোগের প্রতি অধিক সহনশীল এবং বেশি ফলনের সুবিধা রয়েছে।
তিনি বলেন, বারিগম-৩৩ সর্বশেষ উদ্ভাবিত জাত, যা ব্লাস্ট রোগ প্রতিরোধী, জিংকসমৃদ্ধ, বড় দানার এবং উচ্চ ফলনশীল।
ডিএই-এর সাবেক পরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, নতুন উদ্ভাবিত জাতের ব্যাপক প্রচার গমের ফলন বাড়াতে সহায়তা করতে পারে।
তিনি আরো বলেন, গম খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। গমের ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে। কিন্তু, বাংলাদেশ বছরে প্রায় ৪ মিলিয়ন টনের চাহিদার বিপরীতে মাত্র ১ মিলিয়ন মেট্রিক টন গম উৎপাদন করে।
কৃষিবিদ সিরাজুল ইসলাম বলেন, রাজশাহী বিভাগ গম চাষে মোট জমির ৩৫ শতাংশ এবং মোট উৎপাদনের ৪৪ শতাংশ অবদান রাখে। শুধু তাই নয়, বরেন্দ্র উঁচু এলাকায় প্রায় ৫০ হাজার হেক্টর বৃষ্টিনির্ভর জমি রয়েছে, যা গম চাষের আওতায় আনার উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে।
বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের কৃষি ব্যবস্থাপক এটিএম রফিকুল ইসলাম বলেন, গম পরিবেশবান্ধব ফসল হওয়ায় বরেন্দ্র উঁচু এলাকায় গম চাষের ব্যাপক ও টেকসই সম্প্রসারণ বিদ্যমান পানির সংকট পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে পারে।
তিনি বলেন, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বৃহৎ পরিসরে গম উৎপাদন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এটি ধানের পরেই দেশের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ শস্য এবং জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
কৃষিবিদ রফিকুল ইসলাম মনে করেন, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবের মধ্যে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এখন শুকনো এলাকায় শুধু ইরি-বোরো ধানের ওপর নির্ভর না করে গম চাষের পরিমাণ বাড়ানোর সময় এসেছে।
তিনি বলেন, তাপ-সহনশীল জাত এবং কৃষকের মাঠে ফলনের ঘাটতি কমানোর জন্য সিআইএমএমওয়াইটিসহ আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থাগুলোর আরো সহায়তা প্রয়োজন।