শিরোনাম

ঢাকা, ১৭ নভেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেছেন, বহুমাত্রিক প্রতিকূলতা, সীমাবদ্ধতা ও নানা চ্যালেঞ্জের মধ্যেও ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি অত্যন্ত নিষ্ঠা, আন্তরিকতা ও ধৈর্যের সঙ্গে এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে কোনো ত্রুটি রাখা হয়নি এবং আন্তরিকতারও কোনো ঘাটতি নেই। কমিশন দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে যে ভবিষ্যতে যত ধরনের চ্যালেঞ্জই আসুক, ধৈর্য ও সাহসের সঙ্গে সেগুলো মোকাবিলা করার সক্ষমতা তাদের রয়েছে। এ ক্ষেত্রে সব রাজনৈতিক দলের সহযোগিতা অপরিহার্য।’
আজ সোমবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনের সম্মেলন কক্ষে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষ্যে নির্বাচন কমিশনের তৃতীয় দিনের সংলাপের দ্বিতীয় সেশনে সভাপতির বক্তব্যে এসব বলেন সিইসি।
সংলাপে নির্বাচন কমিশনার বেগম তাহমিদা আহমদ, মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ, ইসি সচিবালয়ের সিনিয়র সচিবসহ কমিশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বেলা ২টা থেকে শুরু হওয়া এ বৈঠকে অংশ নেয় জাকের পার্টি, আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি), বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টি, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, খেলাফত মজলিস এবং জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি-জাগপা।
কঠিন বাস্তবতার মধ্যেই নির্বাচন প্রস্তুতি চালিয়ে যেতে হচ্ছে উল্লেখ করে সিইসি বলেন, একদিকে প্রতিকূল পরিবেশ, অন্যদিকে কিছু নতুন উদ্যোগ বাস্তবায়নের চাপ-এসব মিলিয়ে পুরো প্রক্রিয়া জটিল হলেও কমিশন ধীরে ধীরে এবং সফলতার সঙ্গে অগ্রসর হচ্ছে।
তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা এবং নির্বাচন কমিশন উভয়েই জাতিকে একটি অবাধ, সুন্দর, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে কমিশন দিনরাত কাজ করছে। বিভিন্ন বড় মাপের প্রস্তুতিমূলক কাজ ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে এবং আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ চলমান রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটাধিকার বাস্তবায়নের উদ্যোগ, যা এ নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় একটি অতিরিক্ত বড় দায়িত্ব হিসেবে যুক্ত হয়েছে।
সিইসি জানান, নির্বাচন আচরণবিধির খসড়া প্রণয়ন শেষে তা ইসির ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয় এবং সেখান থেকে জনগণ ও রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত আহ্বান করা হয়। শুধু রাজনৈতিক দলই নয়, বিভিন্ন সংস্থার পক্ষ থেকেও আচরণবিধি নিয়ে লিখিত মতামত পাঠানো হয়েছিল। এসব মতামত পর্যালোচনা করে যেসব যুক্তিসংগত প্রস্তাব আচরণবিধিকে আরও কার্যকর করতে পারে, সেগুলো অন্তর্ভুক্ত করে চূড়ান্ত সংস্করণ প্রণয়ন করা হয়েছে।
তিনি রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্দেশে বলেন, আচরণবিধি বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে দলগুলোর নিজস্ব ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মনোনীত প্রার্থীদের আচরণবিধি মেনে চলতে দলীয়ভাবে উৎসাহিত করা হলে মাঠপর্যায়ের পরিস্থিতি অনেক সহজ হবে।
তৃণমূল পর্যায়ে সরাসরি প্রভাব বিস্তার করতে পারে কেবল রাজনৈতিক নেতারাই উল্লেখ করে সিইসি বলেন, তাই দলগুলোর অংশগ্রহণ ও সহযোগিতা ছাড়া আচরণবিধির পূর্ণ বাস্তবায়ন সম্ভব নয়।
তিনি বলেন, নির্বাচনের দিন, নির্বাচনের আগের সময় এবং ভোটের পরবর্তী পুরো প্রক্রিয়ায় রাজনৈতিক দলগুলোর সহযোগিতা অত্যন্ত প্রয়োজন। পুরো নির্বাচন ব্যবস্থাপনাকে সফলভাবে পরিচালনা করতে নির্বাচন কমিশনের পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলোরও দায়িত্ব রয়েছে। তিনি অংশগ্রহণকারী দলগুলোকে আশ্বস্ত করেন যে কমিশন একটি গ্রহণযোগ্য, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন আয়োজনের লক্ষ্য নিয়েই অগ্রসর হচ্ছে এবং সেই লক্ষ্যে কোনো ঘাটতি রাখা হবে না।
সংলাপের শেষ পর্যায়ে সিইসি আবারও সকল রাজনৈতিক দলকে নির্বাচনী পরিবেশ বজায় রাখা, আচরণবিধি মেনে চলা এবং গণতান্ত্রিক চর্চা শক্তিশালী করতে ইতিবাচক ভূমিকা পালনের আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, ‘আমাদের সার্বিক কর্মকাণ্ডে আপনাদের সহযোগিতা প্রয়োজন। আপনাদের সহযোগিতা নিয়েই আমরা নির্বাচন-পরবর্তী সময়েও এগিয়ে যেতে চাই।’