শিরোনাম

ঢাকা, ১৩ নভেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : বাংলাদেশে সুষ্ঠু, অবাধ ও গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রচেষ্টার প্রশংসা করে জার্মান রাষ্ট্রদূত ড. রুডিগার লোটজ বলেছেন, বাংলাদেশের সফল গণতান্ত্রিক নির্বাচন দেশের সীমান্তের বাইরেও প্রভাব ফেলবে।
তিনি বলেন, ‘২০২৬ সালে বাংলাদেশে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ গণতান্ত্রিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। যেখানে ১২ কোটি ৭০ লাখেরও বেশি মানুষ ভোট দিতে পারবেন। দেশটি আবারও এশিয়া ও বিশ্বের গণতান্ত্রিক দেশগুলোর কাতারে ফিরে আসবে। এটি এমন এক সময়ে ঘটবে, যখন বিশ্বের বহু অঞ্চলে গণতন্ত্র কঠিন পরীক্ষার মুখোমুখি।’
বুধবার সন্ধ্যায় ফ্রাঙ্কো-জার্মান দূতাবাসে জার্মান ঐক্য দিবস উপলক্ষে আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রদূত এ কথা বলেন।
তিনি বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক রূপান্তরের প্রশংসা করেন এবং আগামী বছরের নির্বাচনের স্বচ্ছতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা নিশ্চিত করার গুরুত্ব তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা আপনাদের সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত, যেন আমাদের মধ্যেকার বিদ্যমান সম্পর্ক আরও জোরদার করা যায়।’
বাংলাদেশ বর্তমানে একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে রয়েছে উল্লেখ করে জার্মান রাষ্ট্রদূত আরো বলেন, আমরা অন্তর্র্বতী সরকারের কাজের জন্য তাদের প্রশংসা করি। এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো একটি ভালো নির্বাচন প্রক্রিয়া নিশ্চিত করা, যাতে দেশ একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন দেখতে পায়।
তিনি বলেন, ‘আমি দেখেছি, সংশ্লিষ্ট সব পক্ষই এ লক্ষ্যে আন্তরিকভাবে কাজ করছে।’
ড. রুডিগার লোটজ আরো বলেন, ‘বাংলাদেশে সফল গণতান্ত্রিক নির্বাচন হলে, তার প্রভাব দেশের সীমানা অতিক্রম করে বহুদূর পর্যন্ত পৌঁছাবে।’
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সমাজকল্যাণ উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশ ও জার্মানির দীর্ঘমেয়াদি অংশীদারিত্বের কথা উল্লেখ করে বলেন, দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য সম্পর্ক দৃঢ় হচ্ছে, বিনিয়োগ আগ্রহ বাড়ছে এবং টেকসই উন্নয়ন, জলবায়ু অভিযোজন, মানবিক সহায়তা, সাংস্কৃতিক বিনিময় ও উচ্চশিক্ষার মতো ক্ষেত্রে সহযোগিতা অধিকতর বিস্তৃত হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, বর্তমানে ইউরোপীয়, বিশেষ করে জার্মান কোম্পানিগুলো এশিয়ায় নতুন অংশীদার খুঁজছে। আমি বাংলাদেশে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়ানোর বিপুল সম্ভাবনা দেখছি।’
জার্মান রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘বাংলাদেশ একটি দ্রুত বর্ধনশীল দেশ, যার ৪ কোটি মানুষ মধ্যবিত্ত শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত, জনসংখ্যা তরুণ এবং দেশটির ভূ-অর্থনৈতিক অবস্থানও অত্যন্ত অনুকূল।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমার দায়িত্বকালে অন্যতম লক্ষ্য হবে-বাংলাদেশে আরও ব্যবসা ও কোম্পানি নিয়ে আসা, যাতে করে তারা এখানে বিদ্যমান বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে, তা কাজে লাগাতে পারে।’
রাষ্ট্রদূত আশা প্রকাশ করেন, বাংলাদেশ এমন কিছু বিষয় সমাধান করবে, যা বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য ব্যবসা সহজ করবে- যেমন সুস্পষ্ট নীতি ও বিধান, সুশাসন ও উন্নত অবকাঠামো।
তিনি জার্মানির ভবিষ্যৎ সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, আগামী বছরগুলোতে দুই দেশের মধ্যে উচ্চপর্যায়ের যোগাযোগ, বিনিয়োগ সম্ভাবনা ও উন্নয়ন সহায়তা আরও বৃদ্ধি পাবে।
এ প্রক্রিয়ায় জার্মান উন্নয়ন সংস্থা জিআইজেড ও কেএফডব্লিউ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
ড. লটজ জার্মানি ও বাংলাদেশের মধ্যে ক্রমবর্ধমান উচ্চ পর্যায়ের যোগাযোগের কথা উলে¬খ করেন, যার মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ও জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ স্কোলজের মধ্যে সাম্প্রতিক বৈঠক এবং ঊর্ধ্বতন জার্মান কর্মকর্তাদের সফর।
রাষ্ট্রদূত বলেন, অভিন্ন আগ্রহের অনেক ক্ষেত্রের মধ্যে রয়েছে জলবায়ু পরিবর্তনের মতো বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ।
তিনি আরো বলেন, এই সহযোগিতা গুরুত্বপূর্ণ এবং বাংলাদেশ ও এই অঞ্চলের অন্যান্য অংশীদারদের সঙ্গে, জার্মানি আগামী প্রজন্মের জন্য একটি বাসযোগ্য ভবিষ্যত নিশ্চিত করার জন্য অভিযোজন এবং প্রশমনের ক্ষেত্রে যৌথ প্রচেষ্টাকে সমর্থন অব্যাহত রাখবে।
রাষ্ট্রদূত আশা প্রকাশ করেন, বাংলাদেশ আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার স্তম্ভ হিসেবে নিজেকে আরও সুসংহত করবে এবং দুই দেশের সহযোগিতা আরও গভীর হবে।
তিনি আরও বলেন, ক্রমবর্ধমান সংখ্যক বাংলাদেশি শিক্ষার্থী জার্মানিতে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করছে— এটিকে তিনি দুই দেশের জন্যই ‘লাভজনক’ পরিস্থিতি হিসেবে বর্ণনা করেন।
ড. লটজ পুনর্ব্যক্ত করেন যে জার্মানি তার ইউরোপীয় অংশীদারদের সঙ্গে, বাংলাদেশকে এশিয়ার ক্রমবর্ধমান গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার স্তম্ভ হিসেবে দেখে।