শিরোনাম

।। শাহজাহান নবীন।।
ঝিনাইদহ, ১৩ নভেম্বর ২০২৫ (বাসস): ভিটা জমিতে জুম ধান চাষ করে সফল হয়েছেন জেলার সদর উপজেলার কৃষক আব্দুর রহিম। এই ধানের ব্যাপক ফলনে আশার আলো দেখছেন অন্য কৃষকেরাও।
সাধারণত পাহাড়ের ঢালে জুম ধান চাষ হয়। বিভিন্ন জাতের ধান পাহাড়ের ঢালে আবাদ হয়ে থাকে। এবার সেই জুম ধান চাষ হয়েছে সমতলের জেলা ঝিনাইদহে। জেলার সদর উপজেলার কুমড়াবাড়িয়া ইউনিয়নের রামনগর গ্রামে ‘সেন্টু পাজাম ২১’ জাতের ধান লাগিয়েছেন কৃষক আব্দুর রহিম। তার ধানক্ষেতে ফলনও ভালো হয়েছে। সমতলে জুম ধানের ব্যাপক ফলনে ধান চাষে নতুন সম্ভাবনা দেখছে জেলার কৃষি বিভাগ।
কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ‘সেন্টু পাজাম ২১’ জাতের ধান দেশের শেরপুর, জামালপুর, নেত্রকোণা অঞ্চলে পাওয়া যায়। পাহাড় ও টিলার ঢালে এই ধানের চাষ হয়। এই ধানের উদ্ভাবক শেরপুরের নালিতাবাড়ি উপজেলার কৃষক সেন্টু কুমার হাজং। তার নামেই ধানের জাতের নামকরণ করা হয়েছে। ঝিনাইদহের কৃষক আব্দুর রহিম ইন্টারনেটে এই ধানের ব্যতিক্রমী চাষাবাদ কৌশল দেখে আগ্রহী হন। পরে অনলাইনে মাত্র ৩ কেজি বীজ অর্ডার করেন তিনি। পরে সেই বীজ রোপণ করেন পতিত ভিটা জমিতে।
আব্দুর রহিম বাসসকে বলেন, ৩ কেজি বীজ অনলাইনে ক্রয় করেছি। শেরপুর থেকে কুরিয়ার সার্ভিসে বীজ এসেছিল। চলতি আমন ধান রোপা মৌসুমে ভিটা জমিতে সেই বীজ বুনেছি । আমন ধানে যে পরিমাণ সেচ লাগে, এই ধান চাষে তার ১০ শতাংশ সেচও লাগেনি। সার ও কীটনাশকের ব্যবহার খুবই সীমিত। উৎপাদন খরচ বিঘা প্রতি ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা।
তিনি বলেন, আমি ১০ কাঠা জমিতে এই ধান লাগিয়েছি। আমার ভাগিনাসহ আরও একজনকে এই বীজ দিয়েছিলাম। তাদের জমিতেও ধানের ফলন ভালো হয়েছে। আমন ধানের অর্ধেক খরচে বেশি ফলন এই ধানে।
আমার ১০ কাঠা জমিতে প্রায় ২৫ থেকে ২৬ মণ ধান পাবো বলে আশা করছি। আগামী মৌসুমে আরও বেশি জমিতে এটি আবাদ করার পরিকল্পনা রয়েছে।
একই গ্রামের কৃষক টুলু মিয়া বাসসকে বলেন, আমার প্রতিবেশী আব্দুর রহিম এই ধান চাষ করেছে। মাঠে যাওয়া- আসার সময় ধান ক্ষেতটি প্রতিদিনই দেখি। ভাবতাম, সেচ দেয় না, সার দেয় না, ধান ভালো হবে না। কিন্তু এখন তো ধানের ফলন দেখে আমরা অবাক। এত কম খরচে এত বেশি ফলনের ধান খুব কমই দেখা যায়।
সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. নূর এ নবী বাসসকে বলেন, এই ধান চাষে আমন ধানের মতো অতিরিক্ত সেচ লাগে না। সার, কীটনাশকও লাগে সীমিত। এমনকি পোকামাকড়ের আক্রমণও এই ধানে কম হয়। ঝিনাইদহের সমতল জমিতে এই ধানের চাষ ও ফলন দেখে আমরা বিস্মিত হয়েছি। আশা করছি, এই ধানের আবাদ আরও বাড়বে।
তিনি জানান, শেরপুর জেলার পাহাড়ি জুম ধান ‘সেন্টু পাজাম ২১’ জাতের ধান মূলত দেশি পাজাম ও ভারতীয় রঞ্জিত (পাইজাম) ধানের মিশ্রণে তৈরি উচ্চফলনশীল ধানের জাত। সারাদেশে আমন ধান চাষের মৌসুমে দেশের জামালপুর, শেরপুরসহ পাহাড়ি অঞ্চলে জুম ধান হিসেবে এই ধানের আবাদ করা হয়ে থাকে।