বাসস
  ১১ নভেম্বর ২০২৫, ১৯:৩৩
আপডেট : ১১ নভেম্বর ২০২৫, ২০:০১

হারিয়ে যাচ্ছে বাংলার ঐতিহ্য ধানের ‘গোলাঘর’

ছবি : বাসস

বিপুল আশরাফ

চুয়াডাঙ্গা, ১১ নভেম্বর ২০২৫ (বাসস): সময় এবং প্রযুক্তিগত উন্নয়নের সাথে সাথে বদলে যাচ্ছে মানুষের দৈনন্দিন জীবনচিত্র। কুড়ি বছর আগেও যা ছিল সাধারণ জীবন যাপনের উপকরণ, আজ তা হারানো ঐতিহ্য। তেমনি এক ঐতিহ্য ধানের ‘গোলাঘর’।

একসময় আবহমান বাংলার সমৃদ্ধ গৃহস্থ পরিবার বলতে বোঝানো হতো ‘গোলাভরা ধান, পুকুর ভরা মাছ ও গোয়াল ভরা গরু’। এই প্রবাদটি এখন হারিয়ে যেতে বসেছে। একটা সময় প্রতিটি কৃষকের বাড়িতে ধান রাখার জন্য থাকতো ধানের গোলা। ধানের মৌসুমে কৃষকরা জমি থেকে ধান কেটে শুকিয়ে গোলাজাত করতো। চুয়াডাঙ্গার গ্রামাঞ্চলে এখন আর আগের মতো চোখে পড়ে না গোলাঘর। হাতে গোনা কিছু গ্রামে গোলাঘর দেখা যায়।  আধুনিকতার এই যুগে পাল্টেছে সারা বছরের জন্য ধান সংরক্ষণের ধরণ।

গোলাঘর বিলুপ্ত হতে চললেও চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার পদ্মবিলা ইউনিয়নের কুশোডাঙ্গা গ্রামের ইনতাজ আলী ও কালাচাঁদ মন্ডলের বাড়িতে গোলাঘরের দেখা মিলেছে। বাড়ির সামনের উঠোনে টিনের তৈরি বড় বড় দুটি গোলাঘর। বাড়িটাও পুরোনো দিনের। বৃষ্টিতে ভিজে যাতে টিনে মরচে না ধরে তার জন্য গোলাঘরগুলোতে সবুজ রং লাগানো হয়েছে।

স্থানীয় কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, এক সময় গৃহস্থ বাড়িতে বাঁশ দিয়ে গোল আকৃতির ‘ধানের গোলা’ তৈরি করা হতো। এসব বাঁশের গোলা তৈরিও ছিল আলাদা পেশা। যারা এই গোলা তৈরি করতেন তারা বাঁশ কারিগর বা বেতি হিসেবে পরিচিত। বছরের নির্দিষ্ট সময় তারা গৃহস্থ বাড়িতে এসে গোলা তৈরি করে দিতেন। আবার কারো পুরোনো গোলা ভেঙ্গে গেলে তা মেরামত করে দিতেন।  গোলার বাঁশে যাতে ঘুন না ধরে বা সহজে ভেঙে না যায় সেজন্য গোলা তৈরির পর গোলার গায়ের ভেতরে-বাইরে মাটির আস্তরণ লাগানো হতো। গোলার মাথায় থাকত টিনের বা খরের তৈরি পিরামিড আকৃতির টাওয়ারের মতো। যা অনেক দূর থেকে দেখা যেতো। অনেক বড় ও উঁচু গোলা থেকে ধান বের করার জন্য গোলার নিচে বিশেষ দরজা রাখা হতো।

কুশোডাঙ্গা গ্রামের ইনতাজ আলী বাসসকে বলেন, আমন, ইরি ও বোরো মৌসুমে জমি আবাদ করতাম। প্রতি মৌসুমে ১০০ থেকে ২০০ মণ ধান পেতাম। ধান রোদে শুকিয়ে গোলা ভরা হতো। কিন্তু এখন আর আগের মতো গোলায় ধান রাখা হয় না। এখন প্লাস্টিকের বস্তায় করে বা গোডাউনের মধ্যে ধানগুলো রেখে দিচ্ছি। তারপর অল্প দিনের মধ্যেই এক সাথে সব ধান বিক্রি করা হয়। তাই এখন আর গোলার প্রয়োজন পড়ে না।

কৃষক মো. রবিউল হোসেন বলেন, সত্তর-আশির দশকের দিকে এসব গোলাঘরই ধানের একমাত্র সংরক্ষণাগার ছিল। তখন ধানের গোলা ছিল গৃহস্থ বাড়ির ঐতিহ্যের প্রতীক।

কৃষি সম্প্রসারণ অধদপ্তরের পদ্মবিলা ইউনিয়ন উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল করিম বাসাসকে বলেন,  ধানের গোলা আমাদের একটি প্রাচীন ঐতিহ্য। প্রত্যেক গৃহস্থের বাড়িতে ধান রাখার জন্য গোলাঘর ছিলো। কালের বিবর্তনে আর ইট, বালু ও সিমেন্ট দিয়ে পাকা গুদাম ঘরের যুগে অনেকটাই যেনো হারিয়ে যেতে বসেছে ধানের গোলাঘর।

তিনি বলেন, তবে পুরোনো দিনের গোলা তৈরিতে জায়গা বেশি লাগে। এর সংরক্ষণ খরচ বেশি এবং ধানে পোকা ধরার  সম্ভাবনা থাকায় ধান সংরক্ষণে বাঁশের গোলাঘর এখন আর কেউ ব্যবহার করতে চায় না।