বাসস
  ১০ নভেম্বর ২০২৫, ১৬:০৫

কক্সবাজার সৈকতের ভাঙন রোধে ৬২৪ কোটি টাকার প্রকল্প

‘কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের ভাঙন হতে কক্সবাজার শহর রক্ষা প্রকল্প’ নামে একটি প্রস্তাবনা ইতোমধ্যে জমা দিয়েছে পাউবো কক্সবাজার কার্যালয়। ছবি : বাসস

।। ইব্রাহিম খলিল মামুন।।

কক্সবাজার, ১০ নভেম্বর ২০২৫(বাসস):কক্সবাজার সৈকতের ভাঙন রোধে ৬২৪ কোটি ৬৬ লাখ ২৬ হাজার টাকার প্রকল্প গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কর্তৃপক্ষ। ‘কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের ভাঙন হতে কক্সবাজার শহর রক্ষা প্রকল্প’ নামে একটি প্রস্তাবনা ইতোমধ্যে জমা দিয়েছে পাউবো কক্সবাজার কার্যালয়।

প্রস্তাবনাটি বর্তমানে পাউবোর প্রধান কার্যালয়ে যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। 

পাউবো কক্সবাজার কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নুরুল ইসলাম বাসসকে বলেন, কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সরেজমিন পরিদর্শন করে একটি প্রকল্প তৈরি করেছি। প্রকল্পটি গত মাসে প্রধান কার্যালয়ে পাঠানোর পর যাচাই-বাছাইয়ের জন্য রাখা হয়েছে। আশা করি দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রকল্পটি অনুমোদন পাবে। এতে সমুদ্র সৈকতকে ভাঙন থেকে রক্ষা করা সম্ভব হবে।

তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে সমুদ্রের ক্রমাগত ভাঙন ও প্লাবনে সৈকতের নাজিরারটেক থেকে লাবণি পয়েন্ট পর্যন্ত বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর ঘাঁটি, সরকারি মোটেল, ক্রিকেট স্টেডিয়াম এবং টুরিস্ট পুলিশ কার্যালয় হুমকির মুখে। এছাড়াও বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এই ক্রমাগত ভাঙন ও প্লাবন থেকে সৈকত রক্ষার মাধ্যমে টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পটির প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়েছে ৬২৪ কোটি ৬৬ লাখ ২৬ হাজার টাকা।

গত কয়েক বছর ধরে সাগরের প্রবল ঢেউয়ের তোড়ে কক্সবাজার সৈকতের বিভিন্ন এলাকার বালিয়াড়ি ধসে পড়েছে। বিশেষ করে সৈকতের লাবণি পয়েন্ট থেকে নাজিরারটেক পর্যন্ত এ ভাঙন ভয়াবহ রূপ নিয়েছে।  এতে উপড়ে গেছে লক্ষাধিক ঝাউগাছ। সমুদ্র সৈকতে পর্যটকদের নিরাপত্তায় থাকা পুলিশ বক্স, অস্থায়ী দোকান, ওয়াচ টাওয়ার এবং পর্যটন কর্পোরেশনের বেশ কিছু স্থাপনা ভাঙনের কবলে পড়েছে। এর বাইরে সৈকতের পাশের একাধিক রেস্তোরাঁ ও ভবনেও ভাঙনের ঝুঁকি দেখা দিয়েছে।

এই পরিস্থিতি মোকাবেলায় সৈকতের নাজিরারটেক থেকে লাবণি পয়েন্ট পর্যন্ত ৬ কিলোমিটার প্রতিরক্ষা কাজ বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে পাউবো। সমুদ্রের ক্ষয় হতে কক্সবাজার শহর রক্ষায় কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত সংরক্ষণ ও পর্যটকবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টিই এ উদ্যোগের লক্ষ্য ।

স্থানীয় বাসিন্দাদের সাথে কথা বলে জানা যায়,  কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে গত তিন বছরে তীব্র ভাঙনে সৈকতের আয়তন সংকুচিত হয়ে পড়ছে। পানিতে সৃষ্টি হচ্ছে গুপ্তখাল ও বড়োসড়ো গর্তের। গোসলে নেমে খাল বা গর্তে আটকা পড়ে প্রাণহানি ঘটছে পর্যটকদের। 

বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা সৈকতের ভাঙন নিয়ে সম্প্রতি এক গবেষণার পর তাদের গবেষণা প্রতিবেদনে বেশ কিছু পরামর্শ দিয়েছেন। ওই প্রতিবেদনে কক্সবাজার শহরের নাজিরারটেক থেকে টেকনাফ পর্যন্ত ৮০ কিলোমিটার মেরিন ড্রাইভের পশ্চিম পাশের সৈকতে ভাঙন রোধে টেকসই ও স্থায়ী প্রতিরক্ষা দেয়াল নির্মাণসহ তিন ধরনের সমন্বিত কার্যক্রম গ্রহণের সুপারিশ করা হয়েছে। 

সুপারিশে বলা হয়, উপকূলীয় এলাকায় প্রাকৃতিকভাবে জন্মায় এমন গাছপালা রোপণ, পর্যটকদের পারাপারের রাস্তা নির্মাণ,  ঘেরা বেড়া তৈরি, জিওব্যাগ স্থাপন এবং ঢেউয়ের আঘাতে সৈকতের ক্ষয় রোধে বিচ, গ্রোয়েন (বাঁধ) ও দেয়াল নির্মাণ করতে হবে। 

এ ছাড়াও প্রতিবেদনে ভাঙন রোধে পাহাড় নিধন বন্ধ, ভূমিধস এলাকা চিহ্নিত করা, পাহাড়ি ছড়াগুলোর অবস্থান নির্ণয় ও গতিপথ শনাক্ত করা এবং পাহাড়ের গাছপালা উজাড় হওয়ার স্থান চিহ্নিত করার জন্য স্যাটেলাইট ও রিমোট সেন্সিং প্রযুক্তির ব্যবহারের কথা বলা হয়।

সৈকত রক্ষার পাশাপাশি গবেষকেরা উপকূলীয় এলাকার পরিবেশ ও প্রতিবেশ রক্ষার ওপরও জোর দিয়েছেন। কক্সবাজার থেকে টেকনাফ পর্যন্ত পরিবেশ ও প্রতিবেশগত সংরক্ষণ ও পুনরুদ্ধারের পদক্ষেপ নেওয়ার মাধ্যমে ইকো-সিস্টেম সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার কার্যকরী উদ্যোগ গ্রহণের সুপারিশও ওই প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়।

ছয় সদস্যের ওই অনুসন্ধান দলের নেতৃত্ব দেন কক্সবাজারস্থ বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের এনভাইরনমেন্টাল ওশানোগ্রাফি অ্যান্ড ক্লাইমেট ডিভিশনের সিনিয়র সায়েন্টিফিক অফিসার আবু শরীফ মো. মাহবুব ই কিবরিয়া। অপর পাঁচ সদস্যরা হলেন একই ডিভিশনের সায়েন্টিফিক অফিসার মীর কাশেম, সুলতান আল নাহিয়ান, আলমগীর হোসেন, হাসনাত আরেফিন ও আহসান হাবিব।

আবু শরীফ মো. মাহবুব ই কিবরিয়া বলেন, গত কয়েক বছরের তুলনায় এ বছর সৈকত ও উপকূলে ক্ষয়ক্ষতি বেশি হয়েছে। আমরা সুপারিশসহকারে যে প্রতিবেদনটি জমা দিয়েছি তার ভিত্তিতে কাজ করলে আশা করি সৈকত সুরক্ষা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।

বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের হোটেল শৈবালের ব্যবস্থাপক রায়হান উদ্দিন আহমেদ বলেন, কক্সবাজার শহরে সাগরতীরে পর্যটন কর্পোরেশনের ১৩৫ একর জমি রয়েছে।

গত কয়েক বছরে ভাঙনের কারণে প্রায় ১৩ একরের মতো জায়গা সাগরে চলে গেছে। বিষয়টি আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। যাতে অবশিষ্ট জমি এবং সরকারি স্থাপনাগুলো রক্ষা করা যায়।