শিরোনাম

পাবনা, ৮ নভেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : ভূমি অধিগ্রহণে দীর্ঘসূত্রিতা ও নানা জটিলতা পেরিয়ে অবশেষে পাবনার নগরবাড়ী নৌবন্দর উদ্বোধন করা হয়েছে।
আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত এই নৌবন্দর চালুর ফলে পণ্য খালাসের গতি আগের চেয়ে ১০ গুণ বাড়বে। সেই সঙ্গে রাজস্ব আয়ের পাশাপাশি বাড়বে কর্মসংস্থানও।
আজ শনিবার নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন প্রধান অতিথি হিসেবে ফিতা কেটে ও বেলুন উড়িয়ে নৌবন্দরের উদ্বোধন করেন। পরে মোনাজাত ও বৃক্ষরোপণ করা হয়।
বিআইডব্লিউটিএ’র চেয়ারম্যান কমরেড আরিফ আহমেদ মোস্তফার সভাপতিত্বে এসময় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব দেলোয়ারা বেগম।
উদ্বোধন শেষে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে নৌ পরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘আধুনিকায়ন ও বিনিয়োগ আনতে চট্টগ্রাম বন্দর বিদেশি ব্যবস্থাপনায় দেওয়ার বিকল্প নেই। কিন্তু ব্যক্তিস্বার্থ রক্ষায় অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।’
তিনি বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর বাংলাদেশের অর্থনীতি উন্নয়নের অন্যতম বড় জায়গা। কিন্তু গত ১৭ বছরে যা হয়েছে, তা দেখে আমার খুব কষ্ট লেগেছে। আমরা চেষ্টা করছি সেখান থেকে উত্তরণ ঘটানোর।
উপদেষ্টা সাখাওয়াত বলেন, অতীতে নদীপথ ছিল চলাচলের একমাত্র পথ। আমরা চেষ্টা করছি চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর থেকে কিছু কিছু জায়গায় কন্টেইনার সরাসরি পৌঁছে দিতে। এছাড়া পানগাঁওয়ে মেইন টার্মিনাল করে, নগরবাড়ির মতো টার্মিনালে ছোট ছোট লাইটারেজ জাহাজ দিয়ে কন্টেইনার আনা-নেওয়ার চিন্তা আমাদের পরিকল্পনায় রয়েছে। খুব শিগগিরই এ বিষয়ে টেন্ডার করা হবে। নগরবাড়ী নৌবন্দর বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে পরিচালিত হবে এবং প্রয়োজনীয় সব যন্ত্রপাতিও সেই প্রতিষ্ঠান সরবরাহ করবে।
বন্দর সূত্র জানায়, নগরবাড়ী নৌবন্দর দিয়ে উত্তরাঞ্চলে কম খরচে নদীপথে বিপুল পরিমাণ সার, কয়লা, সিমেন্ট, পাথরসহ অন্যান্য পণ্য আনা-নেওয়া করা হয়। এ কারণে নৌপথে পণ্য পরিবহনের সুবিধা বাড়াতে নগরবাড়ীতে দেশের সবচেয়ে আধুনিক নদীবন্দর নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়।
৫৬৩ কোটি টাকা ব্যয় ধরে ৩৬ একর জায়গার উপর ২০১৮ সালে বেড়া উপজেলার নগরবাড়ী ঘাটে যমুনা নদীর পাড়ে নির্মাণকাজ শুরু হয়। ৪ বছর মেয়াদি এই প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২২ সালের জুন মাসে। কিন্তু ভূমি অধিগ্রহণে দীর্ঘসূত্রিতাসহ নানা জটিলতা থাকার কারণে মেয়াদ বাড়ানো হয় আরও দুইবার।
আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত এই নৌবন্দরে রয়েছে ৩৬০ মিটার কংক্রিটের জেটি, টার্মিনাল, ওয়্যারহাউজ, গোডাউন, বাফার গোডাউন, ওপেন শেড, ওপেন স্টেজসহ দ্রুততম সময়ে পণ্য লোড-আনলোডের সব সুব্যবস্থা।
নগরবাড়ী-কাজীরহাট-নরাদহ নদীবন্দরের পোর্ট অফিসার মো. খাইরুজ্জামান বলেন, ‘আধুনিক নৌবন্দর চালু হওয়ায় উত্তরবঙ্গ তথা দেশের মানুষ এই প্রকল্পের সুফল পাবে।
দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে এই নৌবন্দর ভূমিকা রাখবে। বন্দরটিতে আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহারে ফলে জাহাজ থেকে পণ্য খালাস বাড়বে অন্তত ১০ গুণ। আগে যেখানে গড়ে প্রতিদিন ২ হাজার টন মাল খালাস করা হতো, এখন সেখানে পণ্য খালাস করা যাবে অন্তত ২০ হাজার টন।’
নগরবাড়ী থেকে পণ্য আনা-নেওয়ার কাজে নিয়োজিত ট্রাকচালক আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘বন্দরটা নির্মাণ হওয়ায় বন্দর এলাকার রাস্তাঘাটের উন্নয়ন হয়েছে। আগে ভাঙা রাস্তার কারণে যাতায়াতে সমস্যা হতো। আধুনিক বন্দর হওয়ায় পণ্য আনা-নেওয়ায় গাড়ি চলাচল বাড়বে, একইসঙ্গে আমাদের কাজ এবং আয়ও বাড়বে।’
স্থানীয় শ্রমিক মোস্তফা কামাল বলেন, অনেক দিন ধরে বন্দরের নির্মাণকাজ চলছিল। অবশেষে এর উদ্বোধনে আমাদের আশার সঞ্চার হলো। সরকার এখানকার মানুষের কর্মসংস্থান বাড়ালে আমাদের অনেক উপকার হবে।