শিরোনাম

আসাদুজ্জামান
সাতক্ষীরা, ২৮ অক্টোবর ২০২৫ (বাসস) : জেলার তালা উপজেলার শিবপুর গ্রামের মোড়ল আব্দুল মালেক এক সময় জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরে চাকুরি করতেন। পাশাপাশি নিজের জমিতে চাষাবাদ করতেন তিনি। মনের মতো ফসল না হওয়ায় কৌশল বদলে তিনি জমিতে রাসায়নিক সারের পরিবর্তে জৈব সার ব্যবহার করেন। এতে ভালো ফলনও পান তিনি।
আরও ভালো ফলন পাওয়ায় জৈব সারের প্রতি আকৃষ্ট হন আব্দুল মালেক। নিজেই শুরু করেন জৈব সার উৎপাদন। ২০১৩-১৪ সালে প্রথমে মাত্র ১৮টি নান্দায় কেচো বা ভার্মি কম্পোস্ট উৎপাদন শুরু করেন তিনি। যা এখন বৃহদাকার খামারে পরিণত হয়েছে। নিজ বাড়ি সংলগ্ন আড়াই বিঘা জমিতে সাড়ে তিন শতাধিক নান্দা আর অর্ধ শতাধিক হাউস নিয়ে পরিচালিত হচ্ছে তার খামার। যেখানে মাসে গড়ে উৎপাদিত হচ্ছে প্রায় ১০ টন ভার্মি ও ট্রাইকো কম্পোস্ট সার। উৎপাদিত এই সার চলে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন জেলায়। আব্দুল মালেক তার নিজের খামারে উৎপাদিত জৈব সারের নাম দিয়েছেন ‘সবুজ পাতা’। যা সাড়া ফেলেছে গোটা এলাকায়।
শুধু মোড়ল আব্দুল মালেকই নন, তার দেখাদেখি একইভাবে কেঁচো কম্পোস্ট সার উৎপাদন করে জীবিকা অর্জন করছেন তালা উপজেলার প্রায় একহাজার দুইশ’ খামারি। কেঁচো কম্পোস্ট সার উৎপাদনে এ যেন এক নতুন সম্ভাবনা।
সফল কৃষক মোড়ল আব্দুল মালেক বলেন, মাটির স্বাস্থ্য সুরক্ষা, জমির উর্বরতা বৃদ্ধি, নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় ফসল উৎপাদনে জৈব সারের কার্যকারিতা অনেক। জৈব সার উৎপাদন শুরু করলে কৃষি অফিস আমাকে সহায়তা করেছে। কিন্তু জৈব সার ব্যবহারে মানুষের মধ্যে সচেতনতা খুবই কম।

শুধু মুখে মুখে মাটির স্বাস্থ্য সুরক্ষার কথা, নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন বা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলার কথা শুধু বললে তো হবে না, চেষ্টাও করতে হবে।
তিনি বলেন, সরকার যদি রাসায়নিক সারের পাশাপাশি জৈব সার কৃষকদের হাতে তুলে দেওয়ার উদ্যোগ নেয়, তাহলে যেমন আমদানি নির্ভরতা কমবে তেমনি কৃষিতে বিপ্লব ঘটবে।
লবণাক্ততা মোকাবেলায় জৈব সারের কার্যকারিতা সম্পর্কে মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট সাতক্ষীরা আঞ্চলিক কার্যালয়ের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (অ.দা.) মাহবুবুল আলম আসাদ জানান, সার ব্যবহার করে লবণাক্ততা কমানো না গেলেও, জৈব সার ব্যবহার করলে মাটির পানি ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। যা লবণনাক্ততা কমাতে সহায়তা করে।
তিনি মাটির স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও উর্বরতা নিশ্চিত করতে নিয়মিত মাটি ও পানি পরীক্ষা করে কৃষকদের সুষম সার ব্যবহারের পরামর্শ দেন।
সাতক্ষীরায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ সাইফুল ইসলাম বলেন, মাটির স্বাস্থ্য রক্ষায় জৈব সার ব্যবহারে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এজন্য বিভিন্ন স্থানে কেচো কম্পোস্ট সারের প্রদর্শনী করা হয়েছে। একই সাথে কৃষক পর্যায়ে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা জৈব সার ব্যবহারে কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছেন।