শিরোনাম

আল-আমিন শাহরিয়ার
ভোলা, ২৬ অক্টোবর, ২০২৫ (বাসস) : 'মা' ইলিশ রক্ষায় সরকারের বেঁধে দেওয়া দীর্ঘ ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে আজ রোববার গভীর রাত থেকে নদীতে ইলিশ আহরণে নেমেছেন ভোলা উপকূলের জেলেরা। রাতভর পরিশ্রমের ফলে নদীতে মিলেছে স্বপ্নের সুস্বাদু রুপালি ইলিশের ঝাঁক। আজ সকাল থেকেই এখানকার মাছঘাট, আড়ৎ আর বাজারগুলো হয়ে উঠেছে সরগরম। চলছে বেচাকেনার ধুম।
এ মৌসুমে জেলেদের জালে ধরা পড়ছে ছোট ও মাঝারি আকারের ইলিশ। দাম অন্যান্য মৌসুমের চেয়ে কম। ফলে মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো ইলিশ ক্রয় করতে পারছেন বলে জানান মাছ ব্যবসায়ীরা।
জেলেরা জানায়, বেশ কিছুদিন পর নদীতে নামতে খুব ভয়ে ছিলেন তারা। কারণ কাঙ্খিত ইলিশ ভাগ্যে জুটবে কিনা এমন শঙ্কাই ছিলো তাদের। তবে জেলেদের জালে ধরা পড়তে শুরু করেছে রুপালি ইলিশের ঝাঁক। ফলে গেলো রাতে এখানকার নদীগুলোতে ইলিশ ধরার উৎসবে মেতেছেন জেলেরা।
আজ সকালে ভোলা সদরের মেঘনাপাড়ের তুলাতুলি ঘাটে গিয়ে দেখা গেছে, জেলে, আড়ৎদার, ক্রেতা-বিক্রেতা ও পাইকারদের ইলিশ কেনাবেচার মহোৎসব চলছে। জেলে, পাইকার আর আড়ৎদারদের হাকডাকে মুখরিত মাছঘাট ও বাজারগুলো।
এদিকে মাছ ধরাকে কেন্দ্র করে জেলেদের মাঝে কর্মচাঞ্চল্য দেখা গেছে। তবে কিছু কিছু জেলেদের জালে আশানুরুপ ইলিশ ধরা না পড়লেও তারা হতাশ নয়। অনেকে বলছেন, এবার হতাশার গ্লানি মুছে যাওয়ার আশা করছি। তারা জানান, নিষেধাজ্ঞার সময় সরকারিভাবে ২৫ কেজি করে চাল পেয়েছেন। এ সময় এনজিওর কিস্তি পরিশোধ করতে পারেননি। তাই এখন কাঙ্খিত ইলিশ আহরণ করতে পারলেই দেনা শোধ করে ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন তারা।
তুলাতুলি মেঘনা ঘাট এলাকায় গিয়ে কথা হলে জেলে কবির মাঝি, সালাউদ্দিন ও মিরাজ মাঝি বলেন, রাতে যে পরিমাণ ইলিশ পেয়েছি তা সন্তোষজনক। এভাবে আমাদের জালে ইলিশ ধরা পড়লে ২২ দিনের ধারদেনা পরিশোধ করতে সমস্যা হবেনা।
ওই ঘাটের আড়ৎদার জামালউদ্দিন বলেন, প্রথমদিন মোটামুটি মাছ ধরা পড়লেও কিছুদিনের মধ্যে আরও বেশি ইলিশ ধরা পড়বে বলে আশা করছেন তারা। আর এতে স্বাচ্ছন্দ্য ফিরবে তাদের মাঝে।
ভোলার পূর্ব ইলিশা মাছঘাটের আড়ৎ মালিক সমিতির সভাপতি বাদশা মিয়া জানান, এবার ইলিশ প্রজনন মৌসুমে নদীতে প্রচুর পরিমাণ মা ইলিশ ডিম ছেড়েছে। আর এ কারণে মেঘনা-তেতুলিয়া ও তৎসংলগ্ন শাখা নদীগুলোতে এখন ইলিশের ছড়াছড়ি। তিনি বলেন, সরকারের বেঁধে দেয়া লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি ইলিশ আহরণের সম্ভাবনা উজ্জল।
ভোলার সর্বদক্ষিণের জনপদ চরফ্যাশনের সামরাজ মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের আড়ৎ মালিক সমিতির সাবেক সভাপতি আবুল হাসেম জানান, নদীর পাশাপাশি সাগরেও প্রচুর পরিমাণে ইলিশ ধরা পড়ছে। আর এতে সেখানকার মৎস্যজীবীরা আনন্দিত।
জেলা মৎস্য দপ্তর জানায়, ইলিশের নিরাপদ প্রজনন এবং সংরক্ষণে প্রতি বছর মেঘনা ও তেঁতুলিয়া'সহ উপকূলের সংযোগ নদীগুলোতে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে আসছে সরকার। তারই ধারাবাহিকতায় (৪ অক্টোবর) মধ্যরাত থেকে শুরু হয়ে শনিবার (২৫ অক্টোবর) মধ্যরাত পর্যন্ত মাছ ধরার ওপর এ নিষেধাজ্ঞা বলবৎ ছিলো। এ সময়ের মধ্যে মেঘনা নদীর চর ইলিশা থেকে চর পিয়াল পর্যন্ত ৯০ কিলোমিটার এবং তেঁতুলিয়া নদীর ভেদুরিয়া থেকে চর রুস্তম পর্যন্ত ১শ' কিলোমিটারের মধ্যে সকল প্রকার মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা ছিল।
মৎস্য বিভাগ জানায়, ভোলার সাত উপজেলার মেঘনা, কালাবাদর, তেঁতুলিয়া ও ইলিশা নদীতে মাছ শিকার করা নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা ১ লাখ ৭১ হাজার। তবে বেসরকারিভাবে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করেন প্রায় আড়াই লাখ জেলে।
ভোলার জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. ইকবাল হোসেন বাসস'কে জানান, ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে গত ৪ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া নিষেধাজ্ঞা শেষ হয় গতকাল শনিবার (২৫ অক্টোবর) মধ্যরাতে। এ বছর জেলায় ইলিশ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ১ লাখ ৯২ হাজার মেট্রিকটন। তিনি বলেন, এবারের অভিযান সফল হওয়ায় ইলিশের উৎপাদন বাড়বে। সরকারের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে। মৎস্য পেশায় সংশ্লিষ্টরাও এমনটাই আশা করছেন।
উল্লেখ্য, ইলিশের নিরাপদ প্রজনন এবং বেড়ে ওঠার লক্ষ্যে গত ৪ অক্টোবর থেকে ভোলার মেঘনা, তেঁতুলিয়া, কালাবাদর, বেতুয়া ও ইলিশা নদীতে সকল প্রকার মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা চলছিল। এ নিষেধাজ্ঞা কার্যক্রম গতকাল শনিবার (২৫অক্টোবর) মধ্যরাতে শেষ হয়।