বাসস
  ২১ অক্টোবর ২০২৫, ১৩:২১
আপডেট : ২১ অক্টোবর ২০২৫, ১৪:১২

কক্সবাজারের প্লাস্টিক রিসাইক্লিং অভিজ্ঞতা সারা দেশে ছড়িয়ে দেওয়া হবে : নাভিদ শফিউল্লাহ

কক্সবাজারের প্লাস্টিক রিসাইকেলিং প্লান্ট উদ্বোধন করেন নাভিদ শফিউল্লাহ। ছবি: বাসস

ঢাকা, ২১ অক্টোবর, ২০২৫ (বাসস) : কক্সবাজার পৌর এলাকায় দেশের প্রথম পৌর প্লাস্টিক রিসাইক্লিং প্ল্যান্ট চালু করা হয়েছে। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ নাভিদ শফিউল্লাহ জানিয়েছেন, কক্সবাজারের এই ব্যতিক্রমী অভিজ্ঞতা সারা দেশে ছড়িয়ে দেওয়া হবে।

আজ মঙ্গলবার সচিবালয়ে পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের নিজ দপ্তরে বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থাকে (বাসস) দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি নিজের অভিজ্ঞতার আলোকে এ কথা বলেন।

নাভিদ শফিউল্লাহ বলেন, সম্প্রতি কক্সবাজারে প্রথম পৌর প্লাস্টিক রিসাইক্লিং প্ল্যান্ট উদ্বোধন করা হয়েছে, যা টেকসই বর্জ্য ব্যবস্থাপনার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান পর্যটন কেন্দ্র এবং বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর আশ্রয়স্থল কক্সবাজার বর্তমানে মারাত্মক প্লাস্টিক বর্জ্য সমস্যার সম্মুখীন।

প্রতিদিন প্রায় ৩৪ টন প্লাস্টিক বর্জ্য সেখানে ফেলা হয়। এর একটি উল্লেখযোগ্য অংশ একক-ব্যবহারের প্লাস্টিক, পলিথিন ও প্যাকেজিং সামগ্রী, যা পুনর্ব্যবহারযোগ্য নয় এবং বাজারমূল্যও অত্যন্ত কম। এই গুরুতর সমস্যা মোকাবিলায় কক্সবাজার পৌর এলাকায় রিসাইক্লিং প্ল্যান্ট চালু করা হয়েছে, যার উদ্বোধন তিনি নিজেই করেছেন।

তিনি আরও বলেন, এই প্ল্যান্ট একক-ব্যবহারের প্লাস্টিক বর্জ্যকে মূল্যবান সামগ্রীতে রূপান্তরের প্রচেষ্টা এগিয়ে নেবে। সারাদেশের প্রতিটি পৌরসভা এই উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারে। কক্সবাজারের নতুন রিসাইক্লিং প্ল্যান্টটি সম্প্রতি রামু উপজেলার মিঠাছড়িতে উদ্বোধন করা হয়েছে।

নাভিদ শফিউল্লাহ জানান, কক্সবাজারের এই প্লাস্টিক পুনর্ব্যবহার সুবিধাটি ৫,২৮০ বর্গফুট জায়গায় নির্মিত। এর মূল বৈশিষ্ট্য হলো- প্রতি ঘণ্টায় ২০০ কিলোগ্রাম পর্যন্ত প্লাস্টিক বর্জ্য প্রক্রিয়াজাত করার সক্ষমতা এবং এতে দৈনিক ২,০০০ লিটার ক্ষমতাসম্পন্ন একটি ইফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের জলবায়ু বিভাগের প্রধান হিসেবে তিনি বলেন, নিরাপদ ও পরিবেশবান্ধব অপারেশন নিশ্চিত করতে প্ল্যান্টটিতে সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যবস্থা, অগ্নি নিরাপত্তা ব্যবস্থা, বৈদ্যুতিক সাবস্টেশন এবং ২৪ ঘণ্টা সিসিটিভি নজরদারি ব্যবস্থা রয়েছে।

তিনি বলেন, এই প্ল্যান্টের প্রধান উদ্দেশ্য হলো কঠিন প্লাস্টিক বর্জ্যকে পুনর্ব্যবহারযোগ্য সামগ্রীতে রূপান্তর করে পরিবেশ দূষণ হ্রাস করা। প্রক্রিয়াজাত উপকরণ ব্যবহার করে মজবুত সোফা, বেঞ্চ এবং কাঠামোগত খুঁটির মতো পরিবেশবান্ধব আসবাবপত্র তৈরি করা হবে।

তিনি আরও জানান, রামুর এই প্ল্যান্টটি ‘প্লাস্টিক-ফ্রি রিভার্স অ্যান্ড সীজ ফর সাউথ এশিয়া’ প্রকল্পের অধীনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সাউথ এশিয়া কো-অপারেটিভ এনভায়রনমেন্ট প্রোগ্রাম, বিশ্বব্যাংক এবং ইউনাইটেড নেশনস অফিস ফর প্রোজেক্ট সার্ভিসেস-এর সহায়তায় প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হয়েছে, যেখানে কক্সবাজার পৌরসভাও সহযোগিতা করেছে।

তিনি বলেন, এই প্ল্যান্টটি টেকসই বর্জ্য ব্যবস্থাপনার একটি “অনন্য উদাহরণ” হিসেবে সারা দেশের পৌরসভার মেয়র ও প্রশাসকরা নিজেদের পৌরসভায় বাস্তবায়ন করতে পারেন।

নাভিদ শফিউল্লাহ বলেন, এই উদ্যোগ পরিবেশ সুরক্ষায় সহায়ক হবে এবং বিশেষ করে নারী ও স্থানীয় সম্প্রদায়ের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করবে। ব্র্যাকের মো. লিয়াকত আলীর মতে, এই সুবিধাটি প্লাস্টিক বর্জ্য সংগ্রহকারী, ব্যবসায়ী, কারখানার শ্রমিক এবং পণ্য বিক্রেতা-সবার জন্য আয়ের সুযোগ তৈরি করবে।

তিনি বলেন, আশা করা হচ্ছে, এই প্ল্যান্টটি খাল, জলাভূমি ও উপকূলীয় অঞ্চলের প্লাস্টিক দূষণ কমাতে, পরিবেশের ভারসাম্য পুনরুদ্ধার করতে এবং স্থানীয় সম্প্রদায়ের জন্য টেকসই জীবিকা জোরদার করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।