বাসস
  ২১ অক্টোবর ২০২৫, ১২:৫১
আপডেট : ২১ অক্টোবর ২০২৫, ১৬:১১

নারায়ণগঞ্জে এক লাখ গাছের চারা রোপণ করা হয়েছে : জেলা প্রশাসক

নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা। ছবি: বাসস

\ মোশতাক আহমদ \

ঢাকা, ২১ অক্টোবর, ২০২৫ (বাসস) : প্রাচ্যের ড্যান্ডি নামে পরিচিত শিল্পাঞ্চল এলাকা নারায়ণগঞ্জকে গ্রীন সিটিতে রূপান্তরের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে এ শহরের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সরকারী অফিস ও রাস্তার দুই পাশে ইতোমধ্যে এক লাখ গাছের চারা রোপণ করা হয়েছে। 

ছবি: বাসস

নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা এ কথা বলেন।

আজ নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকের নিজ দপ্তরে বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা-বাসসকে দেয়া একান্ত সাক্ষাতকারে তিনি এ কথা বলেন। 

জেলা প্রশাসক বলেন, নারায়ণগঞ্জে যোগদানের পর প্রথমেই আমরা যে কাজ হাতে নিয়েছিলাম সেটি হচ্ছে গ্রীন এন্ড ক্লিন সিটি নারায়ণগঞ্জ। এই কর্মসূচির আওতায় আমরা প্রথমেই এই শহর থেকে মোট ১৩০ ট্রাক ব্যানার ফেস্টুন সরিয়েছি। এরপরে ইট সুরকির এই শহরে আমরা ১৭৬ কিলোমিটার রাস্তায়  এবং রাস্তার পাশের ৩১০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ৪২ টি সরকারি অফিস, তিনটি স্টেডিয়াম এলাকায় এক লাখ গাছ লাগিয়েছি। মাত্র দুমাসের মধ্যে এ গাছ লাগানো হয়েছে। গাছ লাগানোর কর্মসূচি এখনো চলছে। 

ছবি: বাসস

তিনি বলেন, নারায়ণগঞ্জ  শহরের অন্যতম আরেকটি বড় সমস্যা ছিল জলাবদ্ধতা। এ সমস্যা সমাধানে খালগুলো পরিষ্কার করা হয়েছে। শহরে মোট ৯২ কিলোমিটার খাল রয়েছে। এর মধ্যে ১১ কিলোমিটার খাল পুরোপুরি প্রবাহমানতা হারিয়ে ফেলে। এরমধ্যে ছয় কিলোমিটার খাল পুনরুদ্ধার ও তা পরিষ্কার করা হয়েছে। এতে পানির প্রবাহ তৈরি হয়েছে। এছাড়া আমরা প্রত্যেকটা খাল থেকে মোট ৩ হাজার ৫৩৪ ট্রাক ময়লা উঠিয়ে সেটি আবার নির্দিষ্ট স্থানে ডাম্পিং করেছি। 

তিনি আরো বলেন, এদিকে স্বাস্থ্য খাতের কথা যদি বলি সেখানে আমরা ডেঙ্গু পরীক্ষার জন্য চার হাজার হেলথকিট দিয়েছি। হাসপাতালে এনআইসিইউ চালুসহ ইমারজেন্সি রুম সংস্কার করেছি। এছাড়া হাসপাতালে সব ধরনের ব্লাড রিপোর্ট পাওয়ার জন্যে কমপ্লিট ব্লাড কাউন্ট মেশিনসহ পোর্টেবল ইসিজি মেশিন দিয়েছি। 

জেলা প্রশাসক বলেন, সরকারি স্বাস্থ্য সেবাকে একটা আস্থার জায়গায় নিয়ে আসার চেষ্টা করছি আমরা। এছাড়া আরেকটি কাজ যা আমরা মনে করি বেশি আলোচিত হয়েছে তা হলো ‘কেবল নয় ফলাফলমুখী শিক্ষা, বিকশিত হোক মানবতার দীক্ষা’। এই কর্মসূচির আওতায় এই জেলার পাঁচটি উপজেলায় দক্ষ ও মেধাবী শিক্ষার্থী তৈরীতে হাত দিয়েছি। সবাই বলে যে আমার ছেলে কেন ভালো রেজাল্ট করলো না? কিন্তু কেউ বলে না যে আমার ছেলেটি কেন ভালো মানুষ হলো না? আমরা আসলে ভালো রেজাল্ট যেমন চাই তেমনি ভালো মানুষও তৈরি করতে চাই। 

আমরা সেই শিক্ষায় শিক্ষিত হতে চাই যে শিক্ষা আমাদেরকে বড়দের সম্মান করতে শেখায়। ছোটদের ভালোবাসতে ও দেশপ্রেম শেখায়। 

জেলা প্রশাসক বলেন, আজ আমি অনেক শিক্ষিত। কিন্তু আমি ব্যবহার ভালো জানি না। আমি আচরণ ভালো করি না। আমার দেশপ্রেম নেই। এই শিক্ষা সমাজের কোন কাজে আসবে না। এইজন্য আমরা পাঁচটি উপজেলায় কর্মশালা করেছিলাম। পাঁচটি উপজেলার কর্মশালা শেষে আমরা জেলা পর্যায়ে একটা কর্মশালা করি। এরপর একটা রূপরেখা আমরা মন্ত্রণালয়ে পাঠাই। মন্ত্রণালয় এটি গ্রহণ করে একটা প্রোগ্রাম দিয়েছিল এই জেলায়। এতে মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এবং দুজন সচিব অংশ নেন। এছাড়া ডিজি, ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকও এসেছিলেন। তাঁরাসহ পুরো জেলার যারা শিক্ষা অনুরাগী ব্যক্তিত্ব আছেন, শিক্ষক আছেন এবং আমাদের মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীসহ প্রায় ৫শ ৫০ এর মত উপস্থিতি নিয়ে আমরা একটি কর্মশালা করি।

এই কর্মশালা থেকে মানবতা ভিত্তিক শিক্ষা ব্যবস্থার একটা রূপরেখা তৈরি এবং এর আলোকে বাংলা ও ইংরেজিতে লেখা প্রকাশ করি। প্রথম আলোসহ বাংলাদেশের প্রায় সবগুলো পত্রিকা এবং দেশের বাইরের পত্রিকাতেও লেখা ছাপানো হয়। 

তিনি আরো বলেন, এর পাশাপাশি এই শহরের একটি অন্যতম সমস্যা যানজট। সেখানে একটি সড়ক ছিল, নাম হচ্ছে মীর জুমলা সড়ক। এটি ৪০ বছর অবৈধ দখলে ছিল। সড়কটি আমরা উদ্ধার করি এবং সেখান এখন বাস চলাচল করে। এই জেলায় আমার যোগদানের নয় মাসের মধ্যে ১৫০ কোটি টাকার সরকারি সম্পত্তি উদ্ধার করেছি। 

জেলা প্রশাসক বলেন, আমাদের সমাজের অন্যতম সমস্যা মাদক। আমি বিশ্বাস করি, মাদকমুক্ত সমাজ গড়তে  হলে শিক্ষার পাশাপাশি আনন্দের চর্চা করতে হবে। খেলাধুলার পাশাপাশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে উৎসবমুখর করতে হবে। এ কারণে আমি যতবার যত স্কুলে গিয়েছি সব স্কুলেই ক্রীড়া সামগ্রী দিয়ে এসেছি। এছাড়া ওসমানী স্টেডিয়াম যেটি আছে সেটির বাউন্ডারি ওয়াল কিংবা কোন গ্যালারি নেই। আমরা এ পর্যন্ত প্রায় এক কোটি ৬৪ লাখ টাকা বরাদ্দ এনেছি। স্টেডিয়ামের কাজ খুব দ্রুতই শুরু হবে। এছাড়া একটি টেনিস মাঠ আমরা করেছি। এ শহরের যে ঐতিহ্য ‘পানাম সিটি’, তার একটা রেপ্লিকা স্থাপন করেছি। আমরা কারুশিল্প জাদুঘরে একটি আধুনিক ওয়াশ ব্লক করছি এবং এখান থেকে পানাম সিটি পর্যন্ত যে খালটি আছে সেটিকে ড্রেজিং করে ওয়াটারওয়ে কানেক্টিভিটি তৈরি করছি। আরো সৌন্দর্য বর্ধন করেছি। 

জেলা প্রশাসক বলেন, শুধু ভূমি অফিস নয়, পাসপোর্ট অফিস, সরকারি হাসপাতালসহ যেখানে দালাল আছে সেখানে আমাদের অভিযান চলছে। আমরা দালাল মুক্ত অফিস করতে চাই। আমরা ভূমি সেবা কেন্দ্র স্থাপন করেছি যাতে মানুষ কোনভাবে হয়রানির শিকার না হয়। 

তিনি বলেন, আমাদের ভূমি ব্যবস্থাপনা নিয়ে আমি এখনো সন্তুুষ্ট নই। মানুষকে এখনো কাঙ্ক্ষিত সেবা আমরা দিতে পারছি না। একে কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে। এছাড়া ভূমি ব্যবস্থাপনায় দুর্নীতির কোন ইস্যু তৈরি হলে সেখানে আমরা কঠোর ব্যবস্থা নেব।

তিনি বলেন, আমাদের লোকবল সংকট রয়েছে। আগামী সপ্তাহে আমাদের একটি নিয়োগ কার্যক্রম আছে। নিয়োগগুলো সম্পন্ন হলে এরপরে আরো কিছু নিয়োগ হবে। সেগুলোর জন্য আমরা চিঠি লিখেছি। এসব নিয়োগ সম্পন্ন হলে আমি মনে করি জনবলের সংকটটা কেটে যাবে।