বাসস
  ২০ অক্টোবর ২০২৫, ১৫:০৪

বজ্রপাতের ঝুঁকি এড়াতে কুমিল্লায় তিন হাজার তালের বীজ বপন

ছবি : বাসস

দেলোয়ার হোসাইন আকাইদ

কুমিল্লা, ২০ অক্টোবর ২০২৫ (বাসস): প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও বজ্রপাতের ঝুঁকি থেকে জনসাধারণকে সুরক্ষা দিতে কুমিল্লার মুরাদনগরে বেসরকারি উদ্যোগে তিন হাজার তালের বীজ বপন করা হয়েছে। সামাজিক উন্নয়ন সংগঠন মমতাজ বেগম ফাউন্ডেশন এই ব্যতিক্রম উদ্যোগ নিয়েছে। সংগঠনটি উপজেলার বিভিন্ন সড়কের পাশে তিন হাজার তালের বীজ বপন করে স্থানীয়দেরও একাজে উদ্বুদ্ধ করছে ।

সংগঠনটির পক্ষ থেকে জানানো হয়, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাস থেকে অক্টোবর পর্যন্ত দুই ধাপে এই কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হয়। প্রথম পর্যায়ে সেপ্টেম্বর মাসে পীরকাশিমপুর থেকে বাবুইহার হয়ে বলিঘর সড়ক এবং সংযোগ সড়কের দুই পাশে দুই হাজার বীজ বপন করা হয়। দ্বিতীয় পর্যায়ে রোববার ও সোমবার (১৯ ও ২০ অক্টোবর) আকুবপুর ইউনিয়নের পীরকাশিমপুর উত্তর পাড়া থেকে হরের পাড় হয়ে রাজনগর-শ্রীকাইল গ্রামীণ সড়কের দুই ধারে এক হাজার তালের বীজ বপন করা হয়।
সবমিলিয়ে গত দুই মাসে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার এলাকার রাস্তার ধারে মোট তিন হাজার তালের বীজ বপন সম্পন্ন হয়েছে বলে সংগঠনের পক্ষ থেকে জানানো হয়।

ফাউন্ডেশনের প্রাথমিক উদ্যোগে যে-সব এলাকায় বীজ বপন করা হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে, পীরকাশিমপুর উত্তরপাড়া টু বলীঘর সড়ক, পীরকাশিমপুর উত্তরপাড়া টু হরেরপাড় সড়ক, পীরকাশিমপুর উত্তরপাড়া ফোরকানিয়া মাদ্রাসা থেকে হরেরপাড় সড়ক এবং পীরকাশিমপুর মধ্যপাড়া কাছারি সড়ক।

মমতাজ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক এস. এম. সাহিদুল হোসেন বলেন, বর্তমান সময়ের সবচেয়ে ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলোর মধ্যে বজ্রপাত অন্যতম। তালের গাছ বজ্রপাত প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখে। তাই মানুষের জীবন ও সম্পদ রক্ষার লক্ষ্যে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তিনি আরও জানান, এই কর্মসূচির মাধ্যমে শুধু পরিবেশ ও মানুষের নিরাপত্তাই নয়, ভবিষ্যতে গ্রামের সৌন্দর্যবর্ধন, ছায়া এবং ফলেরও ব্যবস্থা হবে। 

তিনি বলেন, যে-সব বাড়ির পাশের রাস্তায় বীজ বপন করা হয়েছে, তাদের ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে অনুরোধ জানানো হয়েছে বীজগুলোর যত্ন ও পরিচর্যা করার জন্য। এতে তাদের মধ্যে সামাজিক দায়বদ্ধতা সৃষ্টি হবে এবং গ্রামীণ জনগণের মধ্যে পরিবেশবান্ধব মানসিকতা গড়ে উঠবে।

জানা যায়, এস. এম. সাহিদুল হোসেন তার প্রয়াত মায়ের নামে ২০২২ সালে মমতাজ বেগম ফাউন্ডেশনের যাত্রা শুরু করেন। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই ফাউন্ডেশনটি শিক্ষা, সমাজসেবা ও মানবিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে আসছে।

এস. এম. সাহিদুল হোসেন বলেন, মমতাজ বেগম ফাউন্ডেশন শুধু আর্থিক সহায়তাই নয়, বরং সমাজে সচেতনতা ও মানবিকতা গড়ে তুলতে কাজ করছে। আমরা চাই গ্রামের মানুষ নিজের পরিবেশকে নিজের দায়িত্বে রক্ষা করুক। এই তাল বীজ বপন কর্মসূচি তারই অংশ।

স্থানীয়দের বিশ্বাস, তালগাছ লাগানোর এই উদ্যোগে গ্রামের রাস্তাগুলো একদিন সবুজ তালের ছায়ায় ঢেকে যাবে এবং বজ্রপাতসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় সহায়ক হবে।

ফাউন্ডেশন কর্তৃপক্ষ জানায়, ভবিষ্যতে উপজেলার অন্যান্য ইউনিয়নেও অনুরূপ কর্মসূচি বাস্তবায়নের পরিকল্পনা রয়েছে। পাশাপাশি পরিবেশবান্ধব গাছ লাগানোর বিষয়ে স্কুল পর্যায়ে সচেতনতামূলক কার্যক্রমও পরিচালনা করা হবে।

ঐতিহ্য কুমিল্লার সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম ইমরুল বাসসকে বলেন, আমরা আগেও শুনেছি তালের গাছ বজ্রপাত থেকে বাঁচায়। মমতাজ ফাউন্ডেশনের এই কাজ সত্যিই প্রশংসনীয়। এখন যদি সবাই একটু যত্ন নেয়, কয়েক বছরের মধ্যে এই রাস্তাগুলো গাছের ছায়ায় ভরে যাবে। প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণ ও মানুষের নিরাপত্তায় এই ধরনের উদ্যোগ প্রশংসনীয়।

পরিবেশ অধিদপ্তর কুমিল্লার উপ-পরিচালক মোসাব্বের হোসেন মোহাম্মদ রাজীব বলেন, বজ্রপাতের মতো আকস্মিক প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে মানুষকে সুরক্ষিত রাখতে গ্রামাঞ্চলে পর্যাপ্ত তালগাছ রোপণ করা অত্যন্ত জরুরি। খোলামাঠ, রাস্তার পাশে, বিল-হাওড় কিংবা বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠে উঁচু তালগাছ প্রাকৃতিকভাবে বজ্রনিরোধক হিসেবে কাজ করে। এ কারণে বজ্রপাত প্রতিরোধে তালগাছের ভূমিকা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

তিনি বজ্রপাতের ক্ষয়ক্ষতি থেকে এলাকাকে রক্ষা করতে তাল গাছ লাগানোর উদ্যোগ গ্রহণ করায় আয়োজক সংগঠনকে সাধুবাদ জানান।