বাসস
  ১৮ অক্টোবর ২০২৫, ১৭:৪৮

ঠাকুরগাঁওয়ে বুড়ির বাঁধের ঐতিহ্যবাহী মাছ ধরা উৎসব যেন এক মিলনমেলা 

ঠাকুরগাঁও এর আকচা ও চিলারং ইউনিয়নে শুক্রবার থেকে বুড়ির বাঁধ এলাকায় চলছে মাছ ধরার উৎসব। ছবি: বাসস

/জাকির মোস্তাফিজ মিলু/

ঠাকুরগাঁও, ১৮ অক্টোবর, ২০২৫ (বাসস) : বছরের পর বছর ধরে হেমন্তের শুরুতেই বুড়ির বাঁধে চলে আসা ঐতিহ্যবাহী মাছ ধরা উৎসব যেন এক মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে। ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার আকচা ও চিলারং ইউনিয়নে গতকাল শুক্রবার থেকে বুড়ির বাঁধ এলাকায় পুরোদমে চলছে মাছ ধরার উৎসব। আর এখানকার শুক নদীর 'বুড়ির বাঁধ' এলাকায় প্রতি বছরের মতো এবারও বসেছে ঐতিহ্যবাহী মাছ ধরার উন্মুক্ত উৎসব। রীতিমতো প্রতিযোগিতার আমেজে চলে এ মাছ শিকার, যা ঘিরে স্থানীয়দের মধ্যে দেখা দিয়েছে ব্যাপক উদ্দীপনা। শীতের আগমনী বার্তায় বাঁধের পানি ছেড়ে দেওয়ার পর সবার জন্য মাছ ধরার এ সুযোগ করে দেওয়া হয়। এ উৎসবকে কেন্দ্র করে এখানে বসেছে তিন দিনের এক গ্রামীণ মেলাও।

এর আগে ১৬ অক্টোবর (বৃহস্পতিবার) থেকেই শত শত সৌখিন শিকারি ও সাধারণ মানুষ বুড়ির বাঁধ এলাকায় মাছ ধরতে নামেন। বাঁধের গেট খুলে দেওয়া হয় বৃহস্পতিবার বিকেলে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, গ্রামীণ জনপদ ও শহর থেকে শত শত মানুষ বুড়ির বাঁধে ভিড় করেছেন। নারী, পুরুষ, শিশুসহ সব বয়সী মানুষের পদচারণায় মুখরিত বাঁধের চারপাশ। সবাই যার যার মতো করে জাল, পলো (খলুই), খোচা ও লাফি জাল নিয়ে নেমে পড়েছেন কাদা-জলে। এমনকি সরঞ্জামহীন অনেকেই খালি হাতেও নেমেছেন মাছ ধরতে। সব মিলিয়ে বুড়ির বাঁধ এলাকায় চলছে মাছ ধরার মহা উৎসব।

স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, মূলত ১৯৮২ সালে শুকনো মৌসুমে এ অঞ্চলের জমি চাষাবাদের জন্য ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার আকচা ও চিলারং ইউনিয়নের মধ্যবর্তী স্থানে শুক নদীর ওপর বাঁধটি নির্মাণ করা হয়। প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে উজানের পানি এখানে আটকে রাখা হয় সেচের জন্য। এ সময়ে ঠাকুরগাঁও মৎস্য অধিদপ্তর বাঁধের পানিতে বিভিন্ন মাছের পোনাও অবমুক্ত করে। আর শীতের শুরুতেই যখন পানি ছেড়ে দেওয়া হয়, তখন বাঁধের মাছ ধরার জন্য সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।

এভাবেই প্রতি বছর বুড়ির বাঁধে চলে আসছে মাছ ধরার এই ঐতিহ্যবাহী উৎসব।

ঠাকুরগাঁও সদরের গোবিন্দপুর থেকে আসা কামরুল হাসানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘প্রতি বছর বুড়ির বাঁধে মাছ ধরার জন্য এই দিনটির অপেক্ষায় থাকি।’

পীরগঞ্জের আমতলী থেকে আসা আশরাফুল হকের মতে, "বুড়ির বাঁধে মাছ ধরতে এসে মনে হচ্ছে যেন এক বিশাল লোকমেলা, যেদিকে চোখ যায়, শুধু মানুষ আর মানুষ।

তবে তিনি স্থানীয় কিছু লোকের বাঁশের রিং জাল ও কারেন্ট জাল দিয়ে মাছ আটকে রাখার অভিযোগও করেন।

মাছ শিকারি ছাড়াও মেলায় ভিড় বাড়ে মাছের ক্রেতাদেরও। শহর থেকে আসা মাছ ক্রেতাদের অভিযোগ, দেশি মাছ সস্তায় পাওয়ার আশায় তারা এখানে আসেন, কিন্তু এসে দেখেন শহরের বাজারের চেয়েও এখানকার মাছের দাম চড়া। 

ভুল্লী বাজার থেকে আসা তরিকুল ইসলাম জানান, এখানে টেংরা, গোচি, শিং, টুনা মাছ প্রতি কেজি ১০০০ থেকে ১২০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আর শোল ও রুই-কাতলা মাছের দাম চাওয়া হচ্ছে ৫০০-৬০০ টাকা। 

পুঁটি মাছও বিক্রি হচ্ছে ৩০০-৪০০ টাকায়।

শহরের কলেজপাড়া থেকে আসা সৌখিন মাছ শিকারি রফিকুল ইসলাম বলেন, "কত মাছ পেলাম সেটা বড় কথা নয়। সারা বছর অপেক্ষায় থাকি এই বুড়ির বাঁধে মাছ ধরতে আসার জন্য।" 

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার আকচা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য রফিকুল ইসলাম জানান, অক্টোবর মাসের মাঝামাঝি সময় বাঁধের গেট খুলে দেওয়া হয় এবং শীতের শুরুতেই মাছ ধরার জন্য উন্মুক্ত করা হয়।

উৎসবে যোগ দেয়া ঠাকুরগাঁওয়ের কবি রাজা শহিদুল আসলাম বলেন, "মনে হচ্ছে যেন এক গ্রামীণ মেলায় এসেছি। মাছ ধরা এখানে উপলক্ষ মাত্র, আসলে এটা মিলনমেলা।" এভাবেই প্রতি বছর বুড়ির বাঁধে চলে শত শত মানুষের মিলনমেলা ও মাছ ধরার এই ঐতিহ্যবাহী উৎসব।