শিরোনাম
মো. মঞ্জুর মোর্শেদ
মুন্সীগঞ্জ, ১৭ অক্টোবর, ২০২৫ (বাসস) : মুন্সীগঞ্জ জেলায় বর্তমানে জনসংখ্যা ১৬ লাখ ২৫ হাজার ৪১৬ জন। গত ১০ বছরে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে ১ লাখ ৭৯ হাজার ৭৫৬ জন। জেলায় শিক্ষার হার ৭৭ দশমিক ৯০ শতাংশ। এছাড়া নাগরিক সুবিধা বৃদ্ধি, সড়ক পথ ও পৌর এলাকার সম্প্রসারণ না হওয়ায় দিন দিন মুন্সীগঞ্জ শহর বসবাসের অনুপযোগী হয়ে উঠছে।
সম্প্রতি ৬ষ্ঠ জনশুমারি ও গৃহগণনার প্রতিবেদনে এমন চিত্র উঠে এসেছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর এ জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২ সালে সম্পন্ন হলেও প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় ২০২৫ সালের মে মাসে।
গণমাধ্যমকর্মীরা প্রতিবেদন কপি সম্প্রতি গ্রহণ করেন।
জানা গেছে, স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশে ১৯৭৪ সালে প্রথম আদমশুমারি অনুষ্ঠানের পর ১৯৮১ সালে দ্বিতীয় ও পরবর্তীকালে প্রতি ১০ বছর পরপর নিয়মিত জনশুমারি অনুষ্ঠিত হয়। দেশে প্রথম পূর্ণাঙ্গ তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর ৬ষ্ঠ জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২ সিএপিআই পদ্ধতিতে পরিচালিত হয়। এ রিপোর্টে দেশের ইউনিয়ন পর্যন্ত এসডিজি’র ১০ টি সুনির্দিষ্ট সূচকের তথ্য উপাত্ত সন্নিবিশিত করা হয়েছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২ মোতাবেক জানা যায়, ৬ উপজেলা মুন্সীগঞ্জ সদর, টংগিবাড়ী, লৌহজং, শ্রীনগর, সিরাজদিখান এবং গজারিয়া নিয়ে গঠিত জেলার মোট জনসংখ্যা ১৬ লাখ ২৫ হাজার ৪১৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৭ লাখ ৮৮ হাজার ৫০৬ জন, নারী ৮ লাখ ৩৬ হাজার ৮৪৮ জন এবং তৃতীয় লিঙ্গের ৬২ জন। ধর্মীয় হিসেবে মুসলিম ১৫ লাখ ৯৮৪ জন, হিন্দু ১ লাখ ২২ হাজার ২৩৮ জন, খ্রিস্টান ১ হাজার ৮৬৭ জন, বৌদ্ধ ১৫৯ জন এবং অন্যান্য ধর্মের ১৬৮ জন।
গত ২০১১ সালে জেলায় জনসংখ্যা ছিল ১৪ লাখ ৪৫ হাজার ৬৬০ জন। গত ১০ বছরে জেলায় জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে ১ লাখ ৭৯ হাজার ৭৫৬ জন। প্রতি বর্গ কিলোমিটারে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে ২৬৩ জন। পরিসংখ্যান মোতাবেক ২০১১ সালে প্রতি বর্গ কিলোমিটারে জনসংখ্যা ছিল ১ হাজার ৪৩৯ জন সেখানে ২০২২ সালে এসে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৭০২ জনে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পদ্মা ও মেঘনা নদীর ভাঙ্গন, কর্মসংস্থান, উচ্চ লেখা পড়া, সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধি এবং উন্নত যাতায়াত ব্যবস্থার কারণে জেলা এবং উপজেলা সদরে দিন দিন জনসংখ্যার চাপ বাড়ছে। পরিসংখ্যান মোতাবেক ২০১১ সালের পর থেকে জেলা সদরে এবং উপজেলা সদরে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে ১ লাখ ৭ হাজার ৯৩০ জন। সব চেয়ে বেশী জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে লৌহজং উপজেলায়। পদ্মা নদীর অব্যাহত ভাঙ্গনে গৃহহারা পরিবারগুলো বাসস্থানের জন্য উপজেলা সদরে আশ্রয় নিচ্ছে। ফলে উপজেলা সদরে দিন দিন জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। গত ১০ বছরে লৌহজং উপজেলা সদরে লোকসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে ১৬ হাজার ৪৭৭ জন।
এছাড়া সদর উপজেলার চরাঞ্চলের লোকজন ব্যবসা বাণিজ্য, উচ্চতর শিক্ষা এবং পরবর্তী প্রজম্মের ভাবনায় শহরে বাড়ি করছে। রাজধানীর সঙ্গে উন্নত সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে উঠায় অনেকে পাশের মুন্সীগঞ্জ শহরে স্থায়ীভাবে বসবাসের চিন্তায় বাড়ি বানাচ্ছে। গ্রামাঞ্চলের জনগণ শহরে চলে আসায় মুন্সীগঞ্জ জেলা সদরে দিন দিন জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
জানা গেছে, ২০০১ সালে মুন্সীগঞ্জ শহরে জনসংখ্যা ছিল ১ লাখ ৭ হাজার ৯০৩ জন। ২০১১ সালে বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় ১ লাখ ৩৮ হাজার ২০৫ জন। গত এক দশকে ৪৮ হাজার ৮৩৪ জন বৃদ্ধি পেয়ে ২০২২ সালে এসে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৮৭ হাজার ৩৯ জনে। প্রতি বর্গকিলোমিটারে জনসংখ্যা এখন ১ হাজার ৯৯৯ জন যা ২০১১ সালে ছিল ১ হাজার ৭৫৭ জন। টংগিবাড়ী উপজেলায় নতুন একটি ইউনিয়ন আড়িয়ল হওয়ায় জেলায় ৬ উপজেলায় মোট ইউনিয়নের সংখ্যা বর্তমানে ৬৮টি।
শহরবাসীর অনেকে জানিয়েছেন, জেলা সদরে জনসংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাওয়ায় বিদ্যমান সড়ক পথ যাবাহনের চাপ নিতে পারছে না। শহরের জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে পৌর নাগরিক সুবিধা বৃদ্ধি, সড়ক পথের সম্প্রসারণ এবং পৌর এলাকার সম্প্রসারণ না হওয়ায় দিন দিন মুন্সীগঞ্জ শহর বসবাসের অনুপযোগী হয়ে উঠছে। প্রতিদিন তাদের তীব্র যানজটের মধে পরতে হচ্ছে।
এসব বিষয়ে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো মুন্সীগঞ্জ কার্যালয়ের উপপরিচালক শারমিন করিম জানান, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর গত মে মাসে প্রকাশিত জনশুমারি ও গৃহগণনা মোতাবেক জেলায় বর্তমান জনসংখ্যা ১৬ লাখ ২৫ হাজার ৪১৬ জন। বিভিন্ন কারণে শহরে জনসংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাওয়ায় জনসংখ্যার ঘনত্বও বৃদ্ধি পাচ্ছে। বেড়েছে শিক্ষার হারও।