শিরোনাম
ঢাকা, ১৪ অক্টোবর, ২০২৫ (বাসস) : ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে জুলাই-আগস্টে ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় চতুর্থ দিনের যুক্তিতর্ক (আর্গুমেন্ট) উপস্থাপন আগামীকাল বুধবার।
বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্র্যাইব্যুনাল-১ এ প্রসিকিউসন পক্ষে আজ তৃতীয় দিনের আর্গুমেন্ট শেষ করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। এদিন জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের বিভিন্ন তথ্যচিত্র তুলে ধরার পাশাপাশি শেখ হাসিনার সঙ্গে হাসানুল হক ইনু, শেখ ফজলে নূর তাপসের কথোপকথনসহ কয়েকটি ফোনালাপ বাজিয়ে শোনানো হয়। সেই সঙ্গে এ মামলায় সাক্ষ্য দেওয়া বিভিন্ন সাক্ষীর বর্ণনা উপস্থাপন ও জুলাই আগস্টের গণ অভ্যুত্থান দমনে 'সিস্টেমেটিক' কায়দায় মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের যোগসূত্র তুলে ধরা হয়। এরপর ট্রাইব্যুনাল আগামীকাল যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের জন্য পরবর্তী দিন ধার্য করেন।
ঐতিহাসিক এই মামলায় সাক্ষ্য দিয়েছেন গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতিক শহীদ আবু সাঈদের পিতাসহ স্বজন হারা পরিবারের অনেকে। এছাড়া স্টার উইটনেস হিসেবে সাক্ষ্য দিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক ও জুলাই আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান। সর্বমোট সাক্ষ্য দিয়েছেন ৫৪ জন সাক্ষী।
এই মামলায় প্রসিকিউসন পক্ষে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম ও গাজী এসএইচ তামিম শুনানি করছেন। সেই সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররা শুনানিতে উপস্থিত থাকেন। পলাতক শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন। আর এই মামলায় গ্রেফতার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলায় শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। এক পর্যায়ে এই মামলায় দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদঘাটনে (অ্যাপ্রোভার) রাজসাক্ষী হতে সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের আবেদন মঞ্জুর করেন ট্র্যাইব্যুনাল। পরবর্তীতে এই মামলার রাজসাক্ষী হয়ে সাক্ষ্য দেন পুলিশের সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন।
এই মামলাটি ছাড়াও শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে গুম-খুনের ঘটনায় তাকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হয়েছে রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায়।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, এর দলীয় ক্যাডার ও সরকারের অনুগত প্রশাসনসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে একের পর এক অভিযোগ জমা পড়ে। দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এসব অপরাধের বিচার কাজ চলছে।