শিরোনাম
রাজশাহী, ১৪ অক্টোবর, ২০২৫ (বাসস) : রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু), হল সংসদ ও সিনেটে ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচনকে ঘিরে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। ক্যাম্পাসে দুই হাজারের বেশি পুলিশ সদস্যের পাশাপাশি ১২ প্লাটুন র্যাব ও ছয় প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন থাকবে। এছাড়া বিএনসিসি ও স্কাউট সদস্যরাও শৃঙ্খলা কার্যক্রমে অংশ নেবেন।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) সূত্র জানিয়েছে, নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে আয়োজনের জন্য অভূতপূর্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
রাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. সালেহ হাসান নকীবের সভাপতিত্বে সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের কনফারেন্স হলে একটি উচ্চ পর্যায়ের সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার উপায় নিয়ে আলোচনা করা হয়।
সভায় উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মাঈন উদ্দিন ও উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. ফরিদ উদ্দিন খান, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মতিয়ার রহমান, ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আমিরুল ইসলাম, প্রক্টর অধ্যাপক ড. মাহবুবুর রহমান এবং প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. এফ নজরুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।
এতে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ (আরএমপি) কমিশনার মুহাম্মদ আবু সুফিয়ান, অতিরিক্ত কমিশনার নাজমুল হাসান, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) কমান্ডিং অফিসার লেফটেন্যান্ট কর্নেল হাসিবুল হক এবং র্যাব-৫ এর সিনিয়র এএসপি সালমান ফারসিসহ আইন প্রয়োগকারী সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।
আরএমপি কমিশনার জানান, নির্বাচনের সময় তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা মোতায়েন করা হবে। ১৫ থেকে ১৭ অক্টোবর পর্যন্ত রাবি ক্যাম্পাসে মোট দুই হাজার পুলিশ সদস্য, ১২ প্লাটুন র্যাব এবং ছয় প্লাটুন বিজিবি দায়িত্ব পালন করবে। র্যাব ও বিজিবি ক্যাম্পাসে অস্থায়ী ক্যাম্প স্থাপন করবে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. এফ নজরুল ইসলাম জানান, ৯টি একাডেমিক ভবনের ১৭টি কেন্দ্রের ৯৯০টি বুথে ভোটগ্রহণ হবে। অপটিক্যাল মার্ক রিকগনিশন (ওএমআর) মেশিন ব্যবহার করে ভোট গণনা করা হবে এবং ভোট গণনা প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে পুরো নির্বাচন প্রক্রিয়া কাজী নজরুল ইসলাম অডিটোরিয়ামের সামনে স্থাপিত একটি বিশাল স্ক্রিনে সরাসরি দেখানো হবে ।
তিনি আরও জানান, বিকেল ৪টায় ভোটগ্রহণ শেষে ব্যালট বাক্সগুলো অডিটোরিয়ামে আনা হবে এবং রঙিন কোডের ওপর ভিত্তি করে ব্যালটগুলো ১০০টি বান্ডেলে বিভক্ত করে ওএমআর মেশিনে গণনা করা হবে। একটি বিশেষজ্ঞ দল পুরো প্রক্রিয়াটি তত্ত্বাবধান করবে। প্রতিটি হলের ভোট গণনা তিন ধাপে সম্পন্ন হবে। একটি হলের ফলাফল প্রস্তুত হলে পরবর্তী হলের ভোট গণনা শুরু হবে। মোট ১৭টি হলের ফলাফল প্রস্তুত ও যাচাই শেষ করতে ১৪ থেকে ১৬ ঘণ্টা সময় লাগতে পারে।
অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, ‘১৬ অক্টোবর শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে এবং ত্রুটি দূর করতে প্রযুক্তি-ভিত্তিক উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।’
৩৫ বছর পর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র প্রতিনিধিত্ব পুনরুজ্জীবিত হচ্ছে। কমিশনের দেওয়া তথ্য মতে, এ বছর ভোট দেবেন ২৮ হাজার ৯০৫ শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে ১১টি ছাত্র হলে ভোটার সংখ্যা ১৭ হাজার ৬০০ জন এবং ছাত্রী হলে ভোটার সংখ্যা ১১ হাজার ৩০৫ জন। নির্বাচনে ৯০৩ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন, তার মধ্যে রাকসুতে ২৪৮ জন, হল সংসদে ৫৯৭ জন এবং সিনেটের জন্য ৫৮ জন।
রাকসু, হল সংসদ এবং সিনেটে ছাত্র প্রধিনিধি নির্বাচনে এবার ১১টি প্যানেল অংশগ্রহণ করছে। রাকসু নির্বাচনে ভিপি পদে ১৮ জন, জিএস পদে ১৩ জন ও এজিএস পদে ১৬ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। হল সংসদে ভিপি পদে ৬১ জন, জিএস পদে ৫৮ জন এবং এজিএস পদে ৫৭ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ছয়টি ছাত্রী হলে ভিপি ও জিএস পদে ১৬ জন করে এবং এজিএস পদে ১৫ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
রাকসু নির্বাচনে একজন ভোটারকে মোট ২৩টি পদে, হল সংসদ নির্বাচনে ১৫টি পদে ও সিনেট ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচনে ৫টি পদে মিলিয়ে মোট ৪৩টি ভোট দিতে হবে। এসব ভোট দিতে একজন ভোটার সময় পাবেন ১০ মিনিট।
সভায় রাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. সালেহ হাসান নকীব বলেন, রাকসু নির্বাচন সফলভাবে পরিচালনায় বর্তমান প্রশাসন সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছে। সকল শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা এবং কর্মচারী একসাথে কাজ করলে ছাত্র সংসদ নির্বাচন অনেক সহজ হবে।
সব ধরনের বাধা অতিক্রম করে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন, রিটার্নিং অফিসার ও প্রার্থীরা অত্যন্ত আন্তরিকতার সাথে প্রস্তুতি নিচ্ছেন। আমরা এই নির্বাচন সফলভাবে আয়োজনের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের গণতান্ত্রিক ঐতিহ্য পুনরুদ্ধার করব এবং বিশ্ববিদ্যালয়কে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাব।
তিনি আরও বলেন, দীর্ঘদিনের অচলাবস্থা ভেঙে এবং বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ কাটিয়ে আমরা এই নির্বাচন আয়োজন করছি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও শিক্ষার্থীরাসহ সকলেই অধীর আগ্রহে নির্বাচনের জন্য অপেক্ষা করছেন। আমি আশা করি, পুরো নির্বাচন প্রক্রিয়াজুড়ে সকলের জন্য ন্যায্যতা ও সমান সুযোগ বজায় থাকবে।